শতাব্দীপ্রাচীন শুঁটকি মেলায় বন্ধ হলো বিনিময় প্রথা!

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে কয়েক শতাব্দী ধরে বসছে শুঁটকি মেলা। মূলত বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিন থেকে কুলিকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছের এ শুঁটকি মেলা বসে। দুই দিনব্যাপী এ মেলার বিশেষত্ব হলো বিনিময় প্রথা। এখান থেকে বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি নিতে পারেন ক্রেতারা। গেল বছরও বিনিময় প্রথায় শুঁটকি কেনাবেচা হয়েছে মেলায়।

তবে এবার শতাব্দীপ্রাচীন বিনিময় প্রথা ভেঙে দিয়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হওয়া শুঁটকি মেলায় বিনিময় প্রথায় কোনো ক্রেতাই শুঁটকি কিনতে পারেনি। মূলত শুঁটকির দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন এবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, কয়েক শতাব্দী ধরে কুলিকুন্ডা গ্রামে নিয়মিত শুঁটকি মেলা বসছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন শুঁটকি নিয়ে। মেলার প্রথম দিনে ভোর থেকে কয়েক ঘণ্টা বিনিময় প্রথায় শুঁটকি কেনাবেচা হয়। এরপর চলে নগদ টাকায় বেচাকেনা। মূলত বিনিময় প্রথায় নিম্নবিত্তরাই মেলা থেকে শুঁটকি নিতেন। এবার পণ্যের বিনিময়ে কেনাবেচা বন্ধ থাকায় নগদ টাকা দিয়েই ক্রেতাদের শুঁটকি কিনতে হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের নাটাই উত্তর এলাকার বাসিন্দা কাজী আরমান জানান, তিনি মানুষের কাছে কুলিকুন্ডা শুঁটকি মেলার কথা অনেক শুনেছেন। এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছেন তিনি। বাজারের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় শুঁটকি কিনতে পারেননি। তবে গরমের মধ্যেও মেলা নিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি।

কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, বিনিময় প্রথা শুধু ক্রেতাদের জন্য উপকারী মাধ্যমই ছিল না, এটি মেলার ঐতিহ্য। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এবার সেটি ভেঙে দিয়েছেন। প্রতিবছর প্রতীকী হলেও বিনিময় প্রথা চালু রাখার দাবি জানান তিনি।

নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের শুঁটকি বিক্রেতা রামেশ্বর দাস জানান, তিনি এই মেলার অনেক পুরনো ব্যবসায়ী। প্রতি বছরই মেলায় আসেন শুঁটকি নিয়ে। এবার কাঁচা মাছের দাম বাড়ায় শুঁটকির দাম অনেক বেড়েছে। তাই পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি বিক্রি করে পোষাবে না বলেই এবার নগদ টাকায় শুঁটকি বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জ থেকে আসা আরেক বিক্রেতা আশিক মিয়া জানান, তীব্র গরমের মধ্যেও মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কমতি নেই। এবারের মেলায় প্রায় ১ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এবারের মেলায় প্রায় ২০০ দোকান বসেছে। একেকটি দোকানে গড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার শুঁটকি কেনাবেচা হবে বলে আশা দোনানিদের। শনিবার সকাল থেকেই তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে শুঁটকি মেলা।

শুঁটকি মেলায় মূলত হাওরাঞ্চলের দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি পাওয়া যায়। মেলায় প্রতি কেজি নাইল্লা মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, বোয়াল ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি শুঁটকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ টাকা এবং বাইম মাছের শুঁটকি কেনাবেচা হচ্ছে ১,৬০০ থেকে ১,৮০০ টাকা। এছাড়া এ বছর সামুদ্রিক কিছু মাছের শুঁটকিও এনেছেন দোকানিরা।

তবে এ মেলায় শুধু শুঁটকিই নয়, গ্রামীণ-লোকজ নানা পণ্যের পসরাও সাজিয়েছেন দোকানিরা। শিশুদের জন্য রয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। রয়েছে হরেক স্বাদের বাহারি খাবারও।