আগরতলায় ভাঙা হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২১

মৃনাল চৌধুরী লিটন

বিজয়নগর নিউজ।। সরিয়ে নেয়া হচ্ছে একাত্তরের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হচ্কাত্তরের যুদ্ধের পর ইন্ডিয়ান আর্মি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল যেখানে প্রতি বছরই কোনো না কোনো বেসরকারি ভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে নানা শ্রদ্ধাঞ্জলি কর্মসূচি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সুবিধা হয়েছিল সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সেই লক্ষ্যে সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে  । সাধারণত ছোট করা হবে বলে জানা যায়  । এতদিন বহন করে চলেছিল ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ।

বিলীন হয়ে যাচ্ছে আগরতলা শহরের পোস্ট অফিস চৌমুহনীর বহু ইতিহাসের সাক্ষী শহীদ মিনার l শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে এটি ভাংচুরের পালা l আগরতলা স্মার্ট সিটি প্রকল্পে শহর সৌন্দর্যায়নের লক্ষে বহ ইতিহাসের সাক্ষী এই শহীদ মিনার থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লিচু বাগান এলাকায় অ্যালবার্ট এক্কা পার্ককে

ইতিমধ্যেই সেখানে নতুন করে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে l পোস্ট অফিস চৌমুনির আদলে তৈরি করা হয় শহীদমিনার খুব শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে l কিন্তু আগরতলা শহরের এই শহীদ মিনারটি সরিয়ে নেওয়া হয় নানা মহলে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে l

এর আগে সেখান থেকে 1971 এর মুক্তিযুদ্ধের কামানটি কে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল জানিয়ে কম বিতর্ক হয়নি l আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হলো বহু ইতিহাসের সাক্ষী শহীদ মিনার l এদিন সকাল থেকে শ্রমিকরা তৎপরতার সাথে এটিকে ভেঙে ফেলার কাজে লেগে পড়েন l

পোস্ট অফিস চৌমুহনীর শহীদ মিনারের পাশে ছিল কামান l প্রতিবছর সেখানে স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো  l মন্ত্রী আমলারা সেখানে যেতে শ্রদ্ধা জানাতে l কিন্তু কালের বিবর্তনে আগরতলা শহর আজ পাল্টে গেছে l

স্মার্ট সিটি তে রুপান্তরিত হচ্ছে l পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে তার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে l যার দরুন বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই শহীদ মিনার কে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে l আগামী দিনে এই জায়গায় রাস্তা নির্মাণ করা হবে l এমনটাই সিদ্ধান্ত সরকারের l অনেকের মতে আগরতলার বহু স্মৃতি আজ বিলীন হয়ে গেছে l যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাস থাকবে l

ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ নামের একটি  পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজ্য সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটি সরিয়ে নেওয়া হয়। শহরের অনতিদূরে লিচু বাগান এলাকায় অ্যালবার্ট এক্কা নামের পার্কে মুক্তিযুদ্ধের ওইসব স্মৃতি রাখা হবে।

এর মধ্য দিয়েই গৌরবগাথার ইতিহাস মুখ লুকাতে যাচ্ছে প্রাচীরের আড়ালে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে আগরতলার বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে। স্মৃতিস্তম্ভ আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ২০ বিশিষ্ট নাগরিক।

খোঁজ নিয়ে ও পূর্বে সেখানে যাতায়তের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, পোস্ট অফিস চৌমুহনীটি আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। সেখানকার গোলচত্বর অর্থাৎ একটি চার রাস্তার মোড়ে ছিল স্মৃতিস্তম্ভটি। আগরতলা শহরে ঢুকতে এ পথটি ব্যবহার করতে হয় বলে সহজেই এটি নজরে আসত। অথচ ওই এলাকায় কখনো তেমন কোনো যানজট লক্ষ করা যায়নি।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সেখানকার ছুটির দিনে দুটি ক্রেন দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় ট্যাংক ও কামান। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এ অবস্থায় পশ্চিম জেলার জেলা শাসক ডা. শৈলেস কুমার যাদব একটি নোটিশ জারি করে জানান, শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম শহীদ জরয়ান অ্যালাবার্ট এক্কার নামে প্রতিষ্ঠিত আগরতলা লিচু বাগান এলাকার পার্কে এগুলো রাখা হবে।

দুই রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস ও সিপিআইএম তখন এর বিরোধিতা করলেও বিষয়টি ধোপে টেকেনি। পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনে প্রয়োজনে এসবের রেপ্লিকা তৈরি করে  রাখারও দাবি জানানো হয় তখন। এগুলো সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ত্রিপুরার ঐতিহ্যকে নষ্ট করার অপচেষ্টা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। বুধবার পত্রিকাটির প্রথম পাতার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বুকে নিয়ে আগরতলা পোস্ট অফিস চৌমুহনী ভারতীয় সেনাদলের আত্মত্যাগ ও ত্রিপুরাবাসীর অতিথিপরায়ণতার গৌরবগাথা জানান দিত। বিজয়স্তম্ভ গুঁড়িয়ে দিয়ে লিচু বাগানে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগে স্তম্ভিত, নির্বাক আগরতলার জনমানস। সিপিএমের কলাকুশলী, শিল্পীদের সংগঠন ত্রিপুরা সংস্কৃতি পরিষদ এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলার খবরে মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন দেশের ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এতে বলা হয়, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমুহনীর ৪০ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি ভারত ও বাংলাদেশের গণমানুষের অভিন্ন মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সৌহার্দ্যের অন্যতম প্রধান স্মৃতিচিহ্ন, যা দুই দেশের বীর শহীদদের সম্মিলিত রাখিবন্ধনের সাক্ষ্য।স্মৃতিস্তম্ভটি স্বমহিমায় আগের জায়গায় পুনঃস্থাপনের অনুরোধ জানান।  

লেখক