হেফাজতের তান্ডব:নেপথ্যের নায়ক মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মোবারক উল্লাহকে গ্রেফতারের দাবিতে বিজয়নগরে গণস্বাক্ষর

প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পৌরসভা কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের নেপথ্যের নায়ক হেফাজতের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক মুফতি মোবারক উল্লাহসহ সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়েছে।

শনিবার (১২ জুন) বেলা ১১ টার দিকে বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামিলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ বিজয়নগরসীর ব্যনারে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীর উদ্বোধন হয়।

সাজিদুর-মোবারকসহ সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তার দাবিতে গণস্বাক্ষর বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খানের সঞ্চালনায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক ও ইছাপুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল এর সভাপতিত্বে কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া,প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. লোকমান হোসেন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর জামান আরিফ, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামিলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এনামুল কবির সুমন, উপজেলা আওয়ামিলীগের সাংঘঠনিক সম্পাদক মৃনাল চৌধুরী লিটন প্রমুখ।

এ সময় অবিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডবের নেপথ্যের নায়ক হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক মাওলানা মোবারক উল্লাহ সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশসুপারের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, জেলা সিভিল সার্জনের অফিসসহ ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক দাঁড়িয়েছে। তবে তাণ্ডবের মূলহোতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহকে এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি।

গত ১ মে মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মোবারক উল্লাহসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেওয়ার জন্য সদর মডেল থানায় এজাহার দেন এমপি মোকতাদির চৌধুরী। তার পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার মামুন এজাহারটি জমা দেন। পরদিন ২ মে এজাহারে উল্লেখিত ফেসবুকের লিংকগুলো থেকে রাষ্ট্রবিরোধী ও উত্তেজনাকর পরিস্থতি তৈরির পোস্ট দেওয়া হয়েছিল কিনা- সেটি পরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে চিঠি দিয়েছে সদর মডেল থানা পুলিশ। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি।

এদিকে লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডবের মূলহোতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহ’র নামে যেন কোনো ধরনের মামলা নথিভুক্ত না হয় সেজন্য তদবির করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। কারণ তিনি জানেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হলে তারা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হবেন। এ বিষয়টি নিয়ে ঐ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ব্রাহ্মণবাড়িয়াজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।