দুঃসময়ের কান্ডারী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯

ব্রাম্মণবাড়িয়া তথা সারা বাংলাদেশে তিনি রবিউল ভাই নামে পরিচিতl আসলে কে এই রবিউল মুক্তাদির চৌধুরী? তিনি কোথায় থেকে কেমন করে এলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে? তাহলে ফিরে যেতে হয় সেই ছাত্র রাজনীতির শুরুতেl জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ভাইয়ের বিশেষ ঘনিষ্টচর মোকতাদির চৌধুরী ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখভাগে ছিলেন। ১৯৬৯-৭০ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হনl একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানিদের সাথে এক সম্মুখযুদ্ধে তিনি আহত হনl এই কারণে তাকে অনেকেই সম্মানের সাথে সম্মোধন করে থাকেন যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযুদ্ধাl স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে মোকতাদির চৌধুরী ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হনl ছাত্র রাজনীতির শুরুতেই তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ বক্তা ও লেখকl এখান থেকেই আমার সাথে রবিউল ভাইয়ের প্রথম পরিচয়l এই সময় আমরা ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি ঢাকার বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকালে লিফটলেট লেখায় সহযোগিতার জন্য তার শরণাপন্ন হতামl লেখায় তার কলমের দক্ষতা অসীমl কিভাবে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কি লিখতে হবে তার সবকিছুই ছিল তার নখদর্পনেl সময়ের সাথে সাথে এভাবেই একসময় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগরের নেতা ও কর্মীদের কাছে র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অত্যন্ত প্রিয় বেক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেনl অন্যদিকে শেখ কামাল কাছেও ছিলেন তিনি অতি প্রিয় মানুষ্l এছাড়া ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মমতাজ হোসেন (সাবেক রাষ্ট্রদূত) ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম (১৯৭২) দুইজনই ছিলেন তার খুব প্রিয় সঙ্গীl পরবর্তীতে সৈয়দ নুরুল ইসলাম নুরু ভাই সভাপতি হলে (১৯৭৩-৭৪) আমি ,রউফ ও ইউনুস একই কমিটিতে সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চারজনের সাথে রবিউল ভাইয়ের সম্পর্কটা আরো গাঢ় হয়l কারণ চারজনই ছিলেন কামাল খুবই কাছের ও প্রিয়l ফলে রবিউল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগটা ছিল একটু বেশিl আমাদের প্রতি তার সহযোগিতার হাত সবসময় ছিল প্রশস্থl ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করলে ঢাকা মহানগর জাতীয় ছাত্রলীগের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে রউফ ঢাকা মহানগরের সকল কলেজ সংগঠনগুলো তদারকি করার দায়িত্ব পেয়েছিলামl এই আহবায়ক কমিটিতে দুজন ছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আসা খন্দকার শওকত জুলিয়াসও (অবসরপ্রাপ্ত সচিব) সাথে ছিলেনl , রউফ ও জুলিয়াস এই তিজন কাকরাইলে অবস্থিত জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগরের কার্যালয়ে রবিউল ভাইয়ের সাথে লিফটলেট লেখা নিয়ে বার বার সহযোগিতা করেছে l এই সময় জাতীয় ছাত্রলীগের ২১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের উপরে নেমে আসে এক বিশাল অন্ধকারl সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রউফ শিকদার ও মোহাম্মদ ইউনুস কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাহাড়ের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাতে ঢাকা শহর ছাত্রলীগের আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে আমার উপর একটা বিরাট দায়িত্ব এসে পরেl এই দুঃসময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি কি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে গোপনীয় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারা হলেন ওবায়দুল কাদের, রবিউল আলম মুক্তাদির চৌধুরী, ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ, ম জাহাঙ্গীর, মমতাজ হোসেন, ফরিদপুরের শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, চট্টগ্রামের এস এম ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মুকুল বোস, মানিকগঞ্জের গোলাম মহিউদ্দিন ,তেজগাঁও কলেজের আকবর আলী মর্জি , তাহের, শওকত,তিতুমীর কলেজের রফিক, আইডিয়াল কলেজের সালাম, বাতেন, জাহাঙ্গীর, জগন্নাথ কলেজের মোহন, কামাল, সরোয়ার্দ্দী কলেজের হেলাল, নান্দু ও কামাল মজুমদার, ঢাকা সিটি কলেজের মামুন, ঢাকা কলেজের দেলওয়ার, সেলিম, লিয়াকত, লালমাটিয়া কলেজের পারভীন ও নাজমা সহ আরো অনেকে যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে নাl জেনারেল জিয়ার সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ঐসময় ছাত্রলীগের এই গোপনীয় কর্মতৎপরতা চালানো এতো সহজ ব্যাপার ছিল নাl ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রবিউল ভাই সহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীদের নেতৃত্বে ৪ নভেম্বরের পঁচাত্তরের মৌন মিছিল সংগঠিত করা হয়েছিলl তাদের নেতৃত্বেই ঢাকায় শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিরোধ যুদ্ধ। সামরিক শাসনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা ৪ নভেম্বরের নভেম্বরের মৌন মিছিলকে সফল করে তোলার জন্য ঢাকা শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রচারপত্র বিলি করেl এরআগে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই খন্দকার মোস্তাকের ডাকা সভায় ঢাকায় অবস্থানরত সংসদ সদস্যদের উপস্থিত না থাকার জন্য হুমকি চিসামরিক শাসনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা ৪ নভেম্বরের মৌন মিছিলকে সফল করে তোলার জন্য ঢাকা শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রচারপত্র বিলি করেl এরআগে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই খন্দকার মোস্তাকের ডাকা সভায় ঢাকায় অবস্থানরত সংসদ সদস্যদের উপস্থিত না থাকার জন্য হুমকি চিঠি বিলি করা হয়l এই কঠিন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী রবিউল ভাই সর্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একসময় মিথ্যা অভিযোগে জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার তাকে গ্রেফতার করেl পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ছাত্রলীগকে সংগঠিত এবং আওয়ামী লীগকে পুরুজ্জীবিত করতে কাজ শুরু করেন মোকতাদির চৌধুরী। তার এসকল আন্দোলন ও কর্মসূচিতে আজকের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সব সময় পাশে ছিলেনl পরবর্তীতে রবিউল ভাই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকুরীতে যোগদান করলেও গোপনে রাজনৈতিক কার্যকলাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনl ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যার পাশাপাশি থেকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে তিনি তার এই দায়িত্ব একটানা পাঁচ বৎসর পালন করেনl ২00১ সালে বিএনপি জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে চাকুরী থেকে জোরপূর্বক অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়l সুইডিশ পার্লামেন্টে পোস্ট ও টেলিকমিউনিকেশন কমিটির সভাপতি জেন্স হল্ম এম পি ও সুইডিশ লেফট পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নস্যি দাদগোস্তার এম পি সাথে ঢাকায় এক বৈঠকে রবিউল মোক্তাদির চৌধুরী পাশে লেখক বর্তমানে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিটির সভাপতিl এর পূর্বে তিনি নবম জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হওয়ার পর সংসদীয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মোকতাদির চৌধুরী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারাখেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নের্সের গভর্নর এবং আন্তর্জাতিক ইসলামিক ত্রাণ সংস্থারজাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর আসন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৩) থেকে নৌকা মার্কায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এক পরীক্ষিত নেতা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেনl যতটুকু জানা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৩ আসনে তার প্রতিপক্ষরা অত্যন্ত দুর্বলl কারণ এম পি রবিউল আলম মোকতাদিরচৌধুরী পর পর দুইবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনগণের ভাগ্যন্নোয়নে দিনরাতকাজ করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলায় বিগত ৮বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন। মোকতাদির চৌধুরী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আধুনিক ও নিরাপদ নগরীতেরুপান্তর করেছেন। ৩০ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোকতাদির চৌধুরী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে জনগণ প্রত্যাশা করছে। কারণ তার নেতৃত্বে এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্কুল কলেজের ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নদী-খাল খনন, ফ্লাইওভার/ওভারপাস নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে তাঁর নির্বাচনী এলাকার দু’টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বেড়েছে শিক্ষার হার এবং জনগণ পেয়েছে উন্নত জীবনের ছোঁয়া। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করেছেন। তিনি এই আসনে এম পি নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র আট বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চেহারা পাল্টে গেছে। এমন কোনএলাকা নেই যেখানে তার উন্নয়নের ছোয়া পৌঁছায়নিl ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের যানজট নিরসনে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন ফ্লাইওভার বা ওভারপাস। শুধু তাই নয়,খালপাড়ে ব্রিজ নির্মাণ সহ শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধণের জন্য নেওয়া হয়েছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। মোকতাদির চৌধুরী এম পিতাঁর নির্বাচনী আসনের দু’টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্য প্রায় ৪০কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন “শেখহাসিনা সড়ক”। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মধ্য গঙ্গার দুই পারের মানুষকে এক সুতোঁয় গেঁথেছে বহু আকাঙ্খিত ২৪ ফুট চওড়াপ্রায় ৯ কিলোমিটার এই সড়কটি। এটিকে ঘিরে দুই উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।