“আজ তাত্ত্বিক লেখক বদরুদ্দীন উমর এর জন্মদিন

প্রকাশিত: ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২১
     বাংলাদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতির অন্যতম দিকপাল; মার্কসবাদী লেনিনবাদী তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী, ইতিহাসবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের আজ জন্মদিন। ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা আবুল হাশিম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।

     দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের মধ্যে ১৯৫০ সালে তাঁরা সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে এই আন্দোলনের গবেষণায় তিনি পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।

     বর্ধমানে তার লেখাপড়া শুরু; এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন শাস্ত্রে পাঠ শেষে উমর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

     ষাটের দশকে বদরুদ্দীন উমর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছিলেন। সে সময় বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজকে শিক্ষিত ও আত্মোপলব্ধিতে সক্ষম করে তুলতে এবং পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করতে উমরের এই কাজগুলোর প্রভাব ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই তিনি ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামের বৃহৎ গবেষণা সমাপ্ত করেন।

     সামাজিক, অর্থনৈতিক,  রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত অনুসন্ধানে তাঁর গবেষণা ও লেখার পদ্ধতি অসাধারণ। ইতিমধ্যে তাঁর শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু লেখক, গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে উমরের যে অবদান, তার তুলনাই খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু তিনি এর মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখতে পারেননি। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে তাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর এক অসাধারন বিপ্লবী অবস্থান তৈরি হয়েছে।

    পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় রক্তচক্ষু থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্যই তিনি শিক্ষকতা ছেড়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা সংস্কৃতি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। সেই পত্রিকার নিয়মিত প্রধান লেখক ছিলেন বদরুদ্দীন উমর ও সইফ-উদ-দাহার। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ লেখা সে সময় তাতে প্রকাশিত হচ্ছিল। কয়েক সংখ্যা প্রকাশের পরই জরুরি অবস্থার কারণে সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যায় ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৮১ সালে সংস্কৃতি আবার প্রকাশ শুরু হয়। মাঝখানে অনিয়মিত হয়ে গেলেও এখনো তা প্রকাশিত হচ্ছে।

      তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের  কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। 

     বাংলা ভাষায় মার্ক্সবাদী সাহিত্য উপস্থিত করায় উমর অগ্রণী, ইংরেজিতে পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেণি সংগ্রাম ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন। বাংলাদেশে শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য নিয়ে উমরের ক্ষুরধার লেখা সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনাকে প্রসারিত করে।

সততা, নিষ্ঠা, আপসহীনতা, দৃঢ়তা – এসব শব্দই উমরের পরিচয়ে নির্দ্বিধায় যোগ করা যায়।

     বদরুদ্দীন উমর এর জীবনে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ও মানুষের মুক্তির রাজনীতি; তাঁকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। জন্মদিনে আজীবন শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমরকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

” তাত্ত্বিক লেখক
বদরুদ্দীন উমর “

     বাংলাদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতির অন্যতম দিকপাল; মার্কসবাদী লেনিনবাদী তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী, ইতিহাসবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের আজ জন্মদিন। ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা আবুল হাশিম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।

     দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের মধ্যে ১৯৫০ সালে তাঁরা সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে এই আন্দোলনের গবেষণায় তিনি পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।

     বর্ধমানে তার লেখাপড়া শুরু; এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন শাস্ত্রে পাঠ শেষে উমর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

     ষাটের দশকে বদরুদ্দীন উমর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছিলেন। সে সময় বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজকে শিক্ষিত ও আত্মোপলব্ধিতে সক্ষম করে তুলতে এবং পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করতে উমরের এই কাজগুলোর প্রভাব ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই তিনি ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামের বৃহৎ গবেষণা সমাপ্ত করেন।

     সামাজিক, অর্থনৈতিক,  রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত অনুসন্ধানে তাঁর গবেষণা ও লেখার পদ্ধতি অসাধারণ। ইতিমধ্যে তাঁর শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু লেখক, গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে উমরের যে অবদান, তার তুলনাই খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু তিনি এর মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখতে পারেননি। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে তাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর এক অসাধারন বিপ্লবী অবস্থান তৈরি হয়েছে।

    পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় রক্তচক্ষু থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্যই তিনি শিক্ষকতা ছেড়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা সংস্কৃতি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। সেই পত্রিকার নিয়মিত প্রধান লেখক ছিলেন বদরুদ্দীন উমর ও সইফ-উদ-দাহার। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ লেখা সে সময় তাতে প্রকাশিত হচ্ছিল। কয়েক সংখ্যা প্রকাশের পরই জরুরি অবস্থার কারণে সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যায় ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৮১ সালে সংস্কৃতি আবার প্রকাশ শুরু হয়। মাঝখানে অনিয়মিত হয়ে গেলেও এখনো তা প্রকাশিত হচ্ছে।

      তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের  কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। 

     বাংলা ভাষায় মার্ক্সবাদী সাহিত্য উপস্থিত করায় উমর অগ্রণী, ইংরেজিতে পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেণি সংগ্রাম ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন। বাংলাদেশে শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য নিয়ে উমরের ক্ষুরধার লেখা সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনাকে প্রসারিত করে।

সততা, নিষ্ঠা, আপসহীনতা, দৃঢ়তা – এসব শব্দই উমরের পরিচয়ে নির্দ্বিধায় যোগ করা যায়।

     বদরুদ্দীন উমর এর জীবনে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ও মানুষের মুক্তির রাজনীতি; তাঁকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। জন্মদিনে আজীবন শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমরকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।