স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে ঢাকায় শফী হত্যা মামলার আসামি বাবুনগরী

প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২১

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করতে ঢাকায় এসেছেন উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি সংগঠনটির সাবেক আমির শাহ আহমদ শফী হত্যা মামলার একজন চার্জশীটভুক্ত আসামি!

আজ সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে অংশ নিতে এদিন সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাবুনগরী।

সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ কয়েকটি ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন হেফাজত আমির। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদিসহ আরও কয়েকজন এতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে ঢাকায় আসেন হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। ঢাকায় পৌঁছে বারডেম হাসপাতালে নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করান তিনি।

বাবুনগরীর সঙ্গে হাটহাজারী থেকে ঢাকায় এসেছেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আহমদ শফীর সাবেক একান্ত সহকারী মাওলানা শফিউল আলম। সোমবার দুপুরে বাবুনগরীসহ ঢাকায় আসার বিষয়টি স্বীকার করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এ বিষয়ে বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারীদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, উনারা ফোন দিয়ে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছেন, মন্ত্রী মহোদয় আসতে বলছেন!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার দুপুরের পর জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর পরিচালিত খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও সময় চূড়ান্ত হয়নি। উনি কাল চলে যাবেন।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬-২৭ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ ও ব্যাপক সহিংস ঘটায় হেফাজত। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ করতে গিয়ে তারা ব্যাপক ধ্বংযজ্ঞ চালায়। হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশসুপারের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, জেলা সিভিল সার্জনের অফিসসহ ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে। ইসলামের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।

এই ঘটনার পর হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। এরপর সংগঠনটির অন্তত কয়েক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এর আগে একাধিকবার হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গ্রেফতার বন্ধ এবং গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

সারাদেশে নজিরবিহীন তাণ্ডবের পর সরকারের কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সরকারকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এ জন্য আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে যে তিন দফা শর্ত দেওয়া হয়েছিল তার প্রায় পুরোটাই দৃশ্যত মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করেছে জুনায়েদ বাবুনগরীপন্থীরা। সুএ মত ওপথ