গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের প্রয়াণ দিবস আজ বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২১ ১৮৬৩ সাল, তখন কুষ্টিয়ার কুমারখালি থেকে প্রকাশ হতো ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’। হরিনাথ মজুমদার’র সম্পাদনায় পত্রিকাটি ১৮৬৩ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২২ বছর প্রকাশ হয়েছে। পত্রিকাটি শুরুর দিকে মাসিক হলেও পরবতীসময়ে পাক্ষিক, সাপ্তাহিক এবং আবার মাসিক হিসেবে প্রকাশ হয়। জানা যায়, ‘গ্রামবার্ত্তা’ পত্রিকার জন্য সেই সময় সৃষ্টি হয়েছে অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রায় বাহাদুর জলধর সেন, দীনেন্দ্র কুমার রায়, মীর মশাররফ হোসেনের মতো লেখকদের। আজ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৬তম প্রয়াণ দিবস। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এই ব্যক্তি ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান। ১৮৩৩ সালের ২২ জুলাই কুমারখালির কুণ্ডুপাড়ায় জন্ম এই গুণী ব্যক্তির। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত বাউল সঙ্গীতেরও অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। এছাড়া ফকির চাঁদ বাউল নামেও পরিচয় ছিলো তার। ৪০টি গ্রন্থও রচনা করেছেন। তবে সব অবশ্য প্রকাশ হয়নি। তার লেখা ‘কবিতা কৌসদী’ এবং ‘বিজয় বসন্ত’ (১৮৬৯) শীর্ষক উপন্যাসে সাহিত্যপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। শিবনাথ শাস্ত্রী তার ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ গ্রন্থে কুমারখালির হরিনাথ মজুমদার প্রণীত ‘বিজয় বসন্ত’ ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ গ্রন্থকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করেন। শৈশবে বাবা-মা হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে কাঙাল হরিনাথ লেখাপড়া শিখেছিলেন সামান্যই। বালক বয়সে তিনি কুমারখালি বাজারে কাপড়ের দোকানে কাজ নিতে বাধ্য হন। এরপর ইংরেজদের কুঠির হেড অফিস কুমারখালি নীল কুঠিতে (৫১টি নীল কুঠির প্রধান) শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন। গবেষকদের মতে, শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতনের প্রতিকারের চিন্তা থেকেই পরবর্তী সময়ে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সম্পাদনা করেন। এ পত্রিকাতেই বাউল সম্রাট খ্যাত লালন শাহ’র গান প্রথম ছাপা হয়। গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা সে যুগে জমিদার, মহাজন, ব্রিটিশ সরকার এমনকি জোড়াসাঁকোর বাবু জমিদারদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল। এজন্য তার উপর প্রায়ই কোর্ট থেকে মানহানির সমন ও সর্তকতাপত্র আসতো এবং সরকারি নির্দেশে মাঝে মাঝে পত্রিকা বন্ধ রাখতে হতো। গণসঙ্গীত শিল্পী কমরেড হেমাঙ্গ বিশ্বাস তার এক লেখায় উল্লেখ করেন, রবীন্দ্রনাথের আগে ঠাকুর পরিবারের যেসব সদস্য জমিদার হিসেবে শিলাইদহে এসেছিলেন, তারা প্রজাবৎসল ছিলেন না। তাদের অত্যাচারের কথা কাঙাল হরিনাথ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকায় সাহসের সঙ্গে লিখতেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর হরিনাথকে শায়েস্তা করতে পাঞ্জাবি লাঠিয়াল বাহিনী পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন। এই খবর পেয়ে বাউল সাধক লালন শাহ’র শিষ্য দল একতারা ফেলে সড়কি-বল্লম নিয়ে পাঞ্জাবি লাঠিয়ালদের কোলকাতা হটিয়ে দিয়েছিলেন। কাঙাল হরিনাথ ১৮৫৪ সালের ১৩ জানুয়ারি কুমারখালিতে একটি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন এবং সেখানে অবৈতনিক শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তার উদ্যোগে ১৮৬৩ সালে কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেটি ‘কুমারখালি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। এই বিদ্যালয়কে বাংলাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে মনে করা হয়। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সম্পাদনার আগে কবি ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় নানা বিষয়ে লিখে হাত পাকিয়েছিলেন। বলা যায়, কবি গুপ্তের উপদেশ ও সহায়তায় কাঙাল হরিনাথ ক্রমে সুলেখক হয়ে ওঠেন। উল্লেখ্য, হরিনাথ ১৮৫৭ সাল থেকে দীর্ঘদিন হাতে লিখে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ প্রকাশ করেন। ১৮৭৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে গ্রামবার্ত্তার পাক্ষিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৬ সালে কুমারখালিতে মথুরানাথ মৈত্রের নামে কাঙাল হরিনাথের নিজ কুঠিরে একটি মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করা হয়, নাম দেয়া হয় এমএন প্রেস। এই মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনের পর থেকে গ্রামবার্ত্তা সাপ্তাহিক আকারে নিয়মিত প্রকাশ হতে থাকে। এই মুদ্রণযন্ত্রটি ছিলো এই উপমহাদেশের প্রথম ছাপখানা। ছাপাখানাটি আজও আছে কুমারখালির কুণ্ডুপাড়ায় কাঙাল কুটিরে। এই কুটিরে ফকির লালন সাঁই বহুবার এসেছেন। Related posts:হোটেলে খাওয়া-দাওয়া শেষে বগিতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যাবিজয়নগরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণবিজয়নগরে এশিয়ান টেলিভিশনের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Post Views: ২৯৪ SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: