টিআইবি দলবাজি ও দখলদারি আন্দোলনের মূল চেতনার জন্য অশনিসংকেত

প্রকাশিত: ১০:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
  • দখলবাজির প্রতিযোগিতা রক্তক্ষয়ী অর্জনকেও ব্যর্থ করে দেবে
    রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে হবে

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ববাদের অবসানের পর পতিত সরকার ও দলটির নেতাকর্মীদের ছেড়ে যাওয়া সব জায়গায় শুরু হওয়া দখল ও চাঁদাবাজি ‘নতুন বাংলাদেশ’র অভীষ্টের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি মনে করে, দলবাজি ও দখলদারি আন্দোলনের মূল চেতনার জন্য অশনিসংকেত। এ ধরনের প্রতিযোগিতা রক্তক্ষয়ী অর্জনকেও ব্যর্থ করে দেবে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল নির্যাসকে অনুধাবন করে তা সব পর্যায়ে দলীয় ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চর্চার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সব মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

দেশজুড়ে চলমান দলবাজি, দখলদারি ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতিকে ‘নতুন বাংলাদেশ’র স্বপ্নের সঙ্গে প্রতারণা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাম্য ও ন্যায্যতার দাবিতে পরিচালিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে কর্তৃত্ববাদের পতন হয়েছে। উন্মুক্ত হয়েছে নতুন বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অভূতপূর্ব সম্ভাবনা।

‘ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন রক্তপাত ও বিপুল প্রাণহানির বিনিময়ে অর্জিত এ সম্ভাবনাকে যারা নিজেদের রাজনৈতিক বিজয় ভাবছেন এবং দলবাজি, দখলদারি ও চাঁদাবাজির সুযোগে রূপান্তরের অপপ্রয়োগে লিপ্ত হচ্ছেন, তা আন্দোলনের মূল চেতনার জন্য অশনিসংকেত।’

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা এমন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে, যে বাংলাদেশ হবে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, জবরদখলবিহীন এবং সব প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহারের ঊর্ধ্বে। অথচ, কর্তৃত্ববাদের পতনের মুহূর্ত থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি, দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারত্বসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তৎপরতা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।

‘পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত দেড় দশক ধরে কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আড়ালে চলে যাওয়ায় শূন্যস্থান পূরণে ‘এখন আমাদের সময়’ প্রবণতাসহ যারা নিজেদের বিজয়ী ভাবছেন তারা আত্মঘাতী এ প্রক্রিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান আমাদের যে নিপীড়নহীন, দখলদারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে, তাকে প্রহসনে পরিণত করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছে বিভিন্ন মহল। জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইজারা, গণপরিবহনসহ সব খাতে দেশজুড়ে চলমান দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও পদ-পদবি দখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যা একদিকে যেমন জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণি-পেশাসহ সব বৈচিত্র্য নির্বিশেষে সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অন্যদিকে এ রক্তক্ষয়ী অর্জনকেও ব্যর্থ করে দেবে।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে পতিত কর্তৃত্ববাদের জঞ্জাল থেকে কোনো কোনো মহলের নবরূপে বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় আমরা শঙ্কিত।

সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এ আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনকে ব্যক্তি, দল, সংগঠন বা গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ হিসেবে নেওয়া যাবে না। জনগণের ন্যায্য সমঅধিকার নিশ্চিতের উপযোগী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে নতুন দিনের সূচনা হয়েছে, তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার কোনো অধিকার কারও নেই। অর্পিত বা অর্জিত ক্ষমতাকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব এই শব্দবন্ধে প্রতিস্থাপনের সঠিক সময় এখনই।

তিনি বলেন, ‘আগের সরকার পতনের ফলে দলবাজি, দখলদারি, চাঁদাবাজির সময় এখন আমাদের’—এই পালানুক্রমিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে জনমুখী রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন না করতে পারার অর্থ হলো—পূর্বতন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আদর্শিক কোনো পার্থক্য না থাকা।

দেশের সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাসহ একটি বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সুশাসিত স্বদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি বিশ্বাস করে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক দলসহ সব মহল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষাকে আন্তরিকভাবে অনুধাবন করবে এবং দলীয়, সংগঠনগত ও ব্যক্তি পর্যায়ে চর্চা করবে।