রোমে দেখা বঙ্গবন্ধু বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৪:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২৩ আশরাফ আহমেদ লেখক ও বিজ্ঞানী অবসাদক্লান্ত শরীরে গাইডের কথাগুলো শুনতে শুনতে মনটি বিষন্ন হয়ে আসছিল। সে এ ধরণের আরো অনেক তথ্য দিয়ে যাচ্ছিল, যা এখন আর মনে নেই। বিশ্বসভ্যতায় অসামান্য অবদানের জন্য যাদের প্রতি গভীর অনুরাগ অনুভব করতাম, তাঁদের জীবনের কালিমাময় দিকের কথা জেনে আমার পা যেন আর চলছিল না। পাহাড়ের ঢালু থেকে দূরে জুলিয়াস সিজারের বেদিটি দেখা যাচ্ছে। মনে হলো সম্রাটদের পূর্বের রোমে প্রজাতন্ত্রী শাসন ব্যাবস্থাই কি ভালো ছিল? এমন সময় বড়সড় দেহের আলখোল্লা জাতীয় পোষাক পরিহিত এক ব্যক্তি আমার সামনে খোড়াতে খোড়াতে এগিয়ে এলো। গাত্রবর্ণ পিতল। দেহের আয়তন থেকে আন্দাজ করলাম তিনি বঙ্গবন্ধু। কিন্তু কাছে এলে দেখতে পেলাম তাঁর শরীরে অনেকগুলো ছুরিকাঘাত। মাথা ও কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত একটি চোখকে ঢেকে দিয়েছে। অন্য চোখটিও অল্প একটু খোলা। পরনের রক্তভেজা পোষাকটিও আলুথালু হয়ে আছে। এই বীভৎস দৃশ্য দেখে আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। দুই পা পিছিয়ে গিয়ে উৎকণ্ঠিত স্বরে জিজ্ঞেস করলাম বিশ্বাসঘাতকরা বংগবন্ধুকে তো বুলেটের আঘাতে হত্যা করেছিল বলে জানি, আপনি কে? কারা আপনাকে আঘাত করেছে? ঘাতকরা কি এদিকে আসছে? আমি কি পুলিশ ডাকবো? তিনি বললেন, না তোমাকে পুলিশ ডাকতে হবে না। তোমার ভয় নেই, কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তোমার মতো অনেকেই আমাকে বঙ্গবন্ধু বলে ভুল করে থাকে। তুমি রোমের প্রাচীন ইতিহাস জানতে এসেছিলে। তাই পরলোক থেকে আমি উঠে এলাম। আমার নাম জুলিয়াস সিজার। পরলোক থেকে গত একুশশত বছর ধরে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি যখন প্রজাতন্ত্রের কন্সাল হয়ে রোম সাম্রাজ্যের শাসনভার হাতে নিলাম, দেখলাম সিনেটরদের ব্যক্তিস্বার্থ ও কূটচালের কারণে দেশের অগণিত সমস্যার কোনোটিই সমাধান হচ্ছে না। অথচ দরিদ্র চাষীরা হৃণে জর্জরিত, ক্যালেন্ডারের ভুলভ্রান্তিতে তাঁদের হৃণের বোঝা বেড়ে চলে। গরীবদের কষ্ট মোচন করতে গেলে ধনী সিনেটররা বাধা দেয়। মালিকদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে কৃতদাসরা বিদ্রোহ করে বসে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এদেশে বাস করেও নাগরিকের মর্যাদা পায় না। মোট কথা দেশে অরাজকতার মাত্রা বেড়ে চলছিল। সবার মতকে তোয়াক্কা করার গণতন্ত্র অনুসরণ করে তো আমি কিছু করতে পারছিলাম না। সেই কারণে কিছুটা কারসাজি করে সিনেটরদের সম্মতিতে নিজে ডিক্টেটর বনে গিয়ে অতি দ্রুত সেই সমস্যাগুলোর সমাধানও করে ফেলি। আমার সেটিই হয়েছিল অপরাধ! শুধু সিনেটররা নয়, বুদ্ধিজীবিদেরও কেউ কেউ সত্যমিথ্যা লিখে লিখে সমাজের একাংশকে আমার বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে। সুযোগ পেলে কবি ও নাট্যকার গাইয়াস আসিনিয়াস পোলিও’র লেখাগুলো পড়ে দেখো। ক্ষমতা নেয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় ওরা আমাকে হত্যা করলো, হত্যা করলো আমারই অতি বিশ্বস্তজন। তোমার বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তো তাই ঘটেছিল! তাঁকে ওরা হত্যা করলো মাত্র সাত মাসের মাথায়! তোমার বঙ্গবন্ধু সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের হাল ধরেন তখন মানুষের আশা ছিল রাতারাতি দেশটি বেহেশতে পরিণত হয়ে যাবে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত কপর্দকশুণ্য দেশে কি তা কখনো সম্ভব? তারপর ছিল নানা মুনির নানা মত। রোমের অধিবাসী না হলেও আমি যেমন অনেককে রোমান নাগরিকত্ব দিয়েছিলাম, তোমাদের বংগবন্ধুও কি বিভিন্ন উপজাতিকে বাঙালি বলে অভিহিত করেননি? অন্যদিকে তাঁর নিজ দলের ভেতরেই কেউ চাইছিল দেশটিকে রাতারাতি কমুনিস্ট বানিয়ে ফেলতে আবার কেউ চাইছিল পাকিস্তানি সময়কার ধর্মীয় উত্তেজনা বজায় রাখতে। আর অনেকগুলো বিরোধী দলের অস্তিত্ব তো ছিলোই। তাঁরা তো তাঁকে শান্তিমতো কাজ করতে দিচ্ছিলো না। এই অবস্থায় কি কোনো দেশে গণতন্ত্র চলে? স্বল্প সময়ে অনেক সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজন একাগ্রতা। তা তো তিনি পাননি। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি সৃষ্টি করেছিলেন একদলীয় বাকসাল। ষড়যন্ত্রকারীরা তো বটেই, অনেক বুদ্ধিজীবিরাও তাঁদের জিহবা ও কলম ধারালেন তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁরা শুধু তাকেই মারলো না, হত্যা করলো তাঁর পুরো পরিবারকে! তোমার গাইড এতোক্ষণ রোমন সম্রাটদের নৃশংসতার কথা বর্ণনা করছিলেন। ভেবে দেখ তোমাদের ষড়যন্ত্রকারীদের নৃশংসতার কাছে কি সেসবের তুলনা হয়? আরেকটি কথা তোমাকে বলে যেতে চাই। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই সবসময় মংগলজনক। অথচ আদর্শ ও একক গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। দেশ, কাল, ও মানসিক প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে এর প্রকারভেদ হয়। জনসংখ্যা যখন বেড়ে যায়, সমস্যাও বেড়ে যায়। এর সাথে সম্পদের অভাব ও অশিক্ষা যোগ হলে গণতন্ত্র আর ফলপ্রসু হয় না। অথচ এই কথাটিই যুগে যুগে লোকজন ভুলে যায়। ঠিক এই অবস্থাই সৃষ্টি হয়েছিল আমার সময়ে রোমে এবং তোমাদের সময়ে বাংলাদেশে। দুই হাজার বছরেরও বেশি ব্যবধানে হলেও প্রজাদের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে আমি এবং তোমার বঙ্গবন্ধু স্ব স্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন এনেছিলাম মাত্র। তাতে গুটিকয় লোকের আঁতে ঘা লাগলেও দুজনেই দেশের সমূহ কল্যাণ সাধন করতে পেরেছিলাম। ভবিষ্যতে, আরো দুই হাজার বছর পর্যন্ত বারবার দেখতে পাবে দেশবাসীর কল্যাণই যাদের মূলমন্ত্র, সমস্যাসংকুল দেশে দেশে সেই নেতারা একই পন্থা অবলম্বন করবে। তাতে তোমরা বিচলিত হয়ো না। দেখতে পাবে যে সময়কালটা তোমার মতো গুটিকয় শিক্ষিত লোক তোমার গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছো বলে মনে করছো, ইতিহাসের মাপকাঠিতে তার স্থায়ীত্ব অতি ক্ষুদ্র! এর বিনিময়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর যে উপকার হবে, তা-ই বেঁচে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। বেঁচে থাকবেন তোমাদের বঙ্গবন্ধু, যেমন আমিও বেঁচে আছি সারা পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে! এই বলে তিনি উধাও হয়ে গেলেন। টুর গাইড ততোক্ষণে আমাদের কলোসিয়ামের চত্বরে নিয়ে এলো। Related posts:মা ফোন না দেওয়ায় অভিমানে আত্মঘাতী ১২ বছরের শিশুব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদে পুলিশ মোতায়েন, সভা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ৮ সদস্যকেগুজব বন্ধে সর্বস্তরের সহযোগিতা কামনা করেন ওসি নোমান Post Views: ১১৬ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: