পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মহাপ্রয়ান তাঁর কর্ম ও আদর্শ হোক উজ্জ্বল পাথেয় বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২৩ নিউজ ডেস্ক: আমাদের ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় ছিল গেল শতকের ষাটের দশক। এই সময়ে শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন পেরিয়ে আসে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সেই সময়ে যেসব তরুণ নেতা পাকিস্তানি শাসকদের জেল-জুলুম উপেক্ষা করে বাম রাজনীতির দীপশিখা প্রজ্বালন করেছেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁদের অন্যতম। প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হিসেবে এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ‘ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন’–এর যৌথ বাহিনী গড়ে তোলায়ও তাঁর নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ছিল। বর্তমান সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই বাহিনীকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল না, আইনি লড়াই করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও তাঁর সহযাত্রীরা সেই স্বীকৃতি আদায় করেন। স্বাধীনতার পর পঙ্কজ ভট্টাচার্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনসায়াহ্নে এসে বহুধাবিভক্ত ন্যাপের ঐক্য গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঐক্য ন্যাপ; যদিও সেই প্রয়াস পুরোপুরি সফল হয়েছে বলা যাবে না। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যেখানেই অন্যায়-অত্যাচার দেখেছেন, সাম্প্রদায়িক ভেদনীতি দেখেছেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছুটে গেছেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য মোট চারবার জেল খেটেছেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সালে আনা হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’র অভিযোগ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বই আমার সেই সব দিন-এ একজন নিবেদিতপ্রাণ ও সংগ্রামী রাজনীতিকের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, যে দলই করুন না কেন, নীতি ও আদর্শে ছিলেন অবিচল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এই রাজনীতিক। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ৮৪ বছর বেঁচে ছিলেন। যেকোনো মানুষের জন্য এটি একটি পরিণত বয়স হিসেবেই বিবেচিত। কিন্তু তারপরও বলব, তাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি নির্দিষ্ট দলের রাজনীতি করতেন, কিন্তু দলীয় সংকীর্ণতা থেকে বরাবর নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন। দেশপ্রেমের নানা উদাহরণ এদেশে আছে। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্যের দেশপ্রেম আর আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি নিষ্ঠা এদেশে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি রাজনীতি করেছেন শোষিত মানুষের সঙ্গে মিশে থাকার জন্যে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকাকালীন বহুবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৬৫ সালে ঘটে এক হৃদয় নাড়া দেয়া ঘটনা। চট্টগ্রাম থেকে তাকে যখন ট্রেনে কুমিল্লা জেলে পাঠানো হচ্ছে। সেই একই ট্রেনে তার মা বাবা দেশ ছেড়ে ভারত চলে যাচ্ছেন। দেশ, জাতি, জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। যেদেশে তার পূর্ব পুরুষের শেকড়, সেই দেশেই বারবার জীবন বাজি রাখেন তিনি। কিন্তু চট্টগ্রামের রাওজানে পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির হিসাব বুঝে নিতে যাননি কোনো দিন। বিষয় সম্পত্তির মোহ থেকে উর্দ্ধে উঠে সংগ্রামের উত্তাপ ও উষ্ণতায় সাজিয়েছেন জীবন। যে জীবনের দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেটেছে পার্টি অফিসে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে অথবা একাকী রাজনৈতিক ভাষা নির্মাণের নিবিড় সাধনায়।জীবনে তিনি মোট চারবার জেল খেটেছেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সালে আনা হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’র অভিযোগ। গ্রেপ্তার করে তাঁকে ডিবি অফিসে আনা হয়। তারপর কঠিন জেরার পর তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।তাঁর জেলজীবনের অভিজ্ঞতাও খুবই সমৃদ্ধ। তিনি জেলে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর সাহচর্য। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি তাঁর সাহচর্যে ছিলেন ১৯ দিন। জেল থেকে যেদিন পঙ্কজদা ছাড়া পান, তখন তাঁকে মাথা নিচু করে ছোট ফটক দিয়ে নয়, বঙ্গবন্ধু জেল কর্তৃপক্ষকে বলেন পুরো ফটক খুলে দিতে। মাথা উঁচু করে পঙ্কজদা বেরিয়ে আসেন জেলের বাইরে। দেখতে দেখতে শুরু হয়ে যায় উনসত্তরের উত্তাল গণ-আন্দোলন। মনে রাখতে হবে, এ দেশের প্রতিটি স্তরের গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন পঙ্কজদা। ফলে জেল খেটেছেন, আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তাঁর জীবনে বিশ্রাম বলে কিছু ছিল না। সভা-সমাবেশে তিনি তাঁর ভাবগম্ভীর স্বরে যখন ভাষণ দিতেন, দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা শুনতেন। উদ্দীপ্ত হতেন। Related posts:জেলা প্রশাসক নিয়োগ পেয়েছেন বিজয়নগর কৃতি সন্তান মোহাম্মাদ জাহেদুর রহমানখেলাধুলা মানবিক মূল্যবোধ ও মেধা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম মৃনাল চৌধুরী লিটনবাংলাদেশ কী বঙ্গবন্ধুর সময়ে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ছিল? Post Views: ২৪ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: