বান্দরবানের থানচিতে অভিযানে আরও ২০ জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩

বান্দরবানের থানচিতে র‍্যাবের চলমান অভিযানে আরও ২০ জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তার মধ্যে ১৭ জঙ্গি সদস্য ও ৩ জন বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন কেএনএফ সদস্য। উপজেলার রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। এসময় জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরীর সরঞ্জাম, উগ্রবাদি বই, কনটেন্ট, লিপলেট ও অস্ত্র ক্রয়ের জন্য রাখা নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—কুমিল্লা সদরের মোঃ মাহবুবুর রহমানের ছেলে মোঃ আস সামী রহমান প্রকাশ সাদ (১৯), বরগুনার বেতাগির মালেক মোল্লার ছেলে মোঃ সোহেল মোল্লা সাইফুল্লাহ (২২), পটুয়াখালী সদরের ফোরকান ফকিরের ছেলে মো. আল আমিন ফকির মোস্তাক (১৯), কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের আব্দুল লতিফের ছেলে মোঃ জহিরুল ইসলাম প্রকাশ ওমর ফারুক (২৭), পটুয়াখালী সদরের আলতাফ হোসেনের ছেলে মোঃ মিরাজ শিকদার প্রকাশ আশরাফ হোসেন দোলন (২৬), মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে রিয়াজ শেখ জায়েদ (২৪),পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকার ইসমাইল হোসেন হাওলাদারের ছেলে মোঃ ওবায়দুল্লাহ (২০), পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ এলাকার আনিছ মুসল্লির ছেলে জুয়েল মাহমুদ (২৭), টাঙ্গাইলের দুলাল রহমানের ছেলে মোঃ ইলিয়াস রহমান (৩২), ঝালকাঠি সদরের আবু ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে মোঃ হাবিবুর রহমান (২৩), কুমিল্লা সদরের মালেক ফরাজীর ছেলে মোঃ সাখাওয়াত হোসেইন (২১),বরিশাল কোতয়ালী থানা এলাকার নাসির হাওলাদারের ছেলে মোঃ আব্দুস সালাম (২৮), কুমিল্লা লাকসামের মাওলানা হোচাইন আহম্মদের ছেলে যোবায়ের আহম্মেদ (২৯), পটুয়াখালী দশমিনা এলাকার মাহবুব মাহব্বরের ছেলে মোঃ শামীম হোসেন (২৬), হবিগঞ্জের মাধবপুরের মৃত কুতুবুর রহমানের ছেলে তাওয়াবুর রহমান সোহান (২০), বরিশালের গোলাম মোস্তফার ছেলে মোহাম্মদ মাহমুদ ডাকুয়া (২০), মাগুরার মৃত শামসুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আবু হুরাইরা (২২) ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন কেএনএফ এর সদস্য লাল মোল সিয়াম বম, ফ্লাগ ক্রস ও মানসম পাংকুয়া।

বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, নব্য এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বান্দরবানের থানচির লোয়াংমুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গি ও পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে। একপর্যায়ে তাদের সাথে র‍্যাবের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল ভোর থেকে পরিচালিত র‍্যাবের এ অভিযানে ১৭ জন জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত লাল মোল সিয়াম বম রেমাক্রি এলাকার কেএনএফ-এর পুরোনো সদস্য। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পর থেকেই তার নেতৃত্বে কেটিসি এবং আশেপাশের এলাকা থেকে জঙ্গিদের পাহাড় থেকে আত্মগোপনে সমতলে আসার সকল ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পালন করে। সে জঙ্গিদের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা, রশদ সরবরাহ ও অন্যান্য সকল ধরণের সহযোগিতা করত। চৌদ্দ মাইল এলাকায় তার একটি দোকান রয়েছে। সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি অনুসরণ করে কেএনফ এর সদস্যদের অবগত করত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সিয়াম বম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণে অত্যন্ত পারদর্শী। ফ্লাগ ক্রস কেএনএফ এর একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য ও প্রশিক্ষক। সে নাথান বোম এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫ জঙ্গী সদস্যকে বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি জঙ্গি সংগঠনের এক সদস্যের কবরের সন্ধানে র‍্যাবের একটি দল বান্দরবানের লোয়াংমল পাড়ায় যায়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কবরের অবস্থান পাওয়া যায়নি। এরপর ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনটির শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ী অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় নজরদারী পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের পরিচালিত অভিযানে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৩৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।