৫০ বছর পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নারী আলোকচিত্রীমুক্তিযুদ্ধের সময় হ্যানিং যখন ছবি তুলছিলেন,

প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২

ফরাসি ফটোগ্রাফার অ্যান ডি হেনিং যখন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন গল্পগুলো দৃশ্যমানভাবে নথিভুক্ত করছিলেন। সেসময় একজন যুবক তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে অনুরোধ করেছিলেন। এই ৭৬ বছর বয়সী বিখ্যাত ফটোগ্রাফার, “উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেকিং: অ্যান ডি হেনিংয়ের ফটোগ্রাফ” প্রদর্শনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার ২৫ বছর বয়সী সময়ের সাংবাদিকতায় ফিরে যান।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী, শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই’র ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়, সামদানী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাদিয়া সামদানী।

৫০ বছর পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নারী আলোকচিত্রী
মুক্তিযুদ্ধের সময় হ্যানিং যখন ছবি তুলছিলেন, তখন এক যুবক তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে অনুরোধ করেছিলেন

ফরাসি ফটোগ্রাফার অ্যান ডি হেনিংয়ের তোলা ছবি-মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধার কাঁধে ঝুলছে থ্রি নট থ্রি এনফিল্ড রাইফেল। ছবিটি কুষ্টিয়া থেকে তুলেছিলেন অ্যান ডি হেনিং/ সংগৃহীত
ফরাসি ফটোগ্রাফার অ্যান ডি হেনিং যখন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন গল্পগুলো দৃশ্যমানভাবে নথিভুক্ত করছিলেন। সেসময় একজন যুবক তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে অনুরোধ করেছিলেন। এই ৭৬ বছর বয়সী বিখ্যাত ফটোগ্রাফার, “উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেকিং: অ্যান ডি হেনিংয়ের ফটোগ্রাফ” প্রদর্শনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার ২৫ বছর বয়সী সময়ের সাংবাদিকতায় ফিরে যান।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী, শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই’র ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়, সামদানী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাদিয়া সামদানী।
অ্যান ডি হেনিংয়ের শার্টে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে দিচ্ছেন ফটোগ্রাফার মিশেল লরেন্ট। পাশেই বসে দেখছেন এপি সংবাদদাতা ডেনিস নিল্ড। ৯ এপ্রিল, ১৯৭১/ সংগৃহীত
দীর্ঘ ৫০ বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসার পর অ্যান ডি হেনিং সাংবাদিকদের বলেন, “ভারত থেকে প্রচণ্ড উত্তাপ ও নিস্তব্ধতার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি দেওয়ার প্রথম স্মরণীয় স্মৃতিটি হলো ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকের। আমি দেখেছি, মুষ্টিমেয় কিছু তরুণ মুক্তিবাহিনী তাদের অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসছে। বাঁশের খুঁটিতে উড়ছে সবুজ, লাল ও হলুদ বাংলাদেশের পতাকা। তাদের পরনে ছিল খাকি ট্রাউজার এবং জীর্ণ শার্ট। তাদের হাতে ধরা পুরনো থ্রি নট থ্রি এনফিল্ড রাইফেল। তারা আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের অভ্যর্থনা জানিয়ে, বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলেছিল ‘আপনারা এখন স্বাধীন বাংলাদেশে’। তারা তাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে উঁচু করে দৃঢ় সংকল্পে চিৎকার করে উঠে ‘জয় বাংলা’।”

হ্যানিং বলেন, “১৯৭১ সালে আমি যখন বাংলাদেশের গল্পগুলো ক্যাপচার করছিলাম, তখন একজন যুবক আমার কাছে বর্ণনা করেছিলেন যে, কীভাবে নিরপরাধ লোকদের হত্যা করা হচ্ছে এবং বিশ্ববাসীকে এটি জানাতে আমাকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকার দিনের বিপরীতে বিজয় দিবসে বাংলাদেশে এসে মানুষের আনন্দ দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, “এমন দিনে ঢাকায় আসা গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ ছিল। জাতি যখন বিজয় উদযাপন করছে এবং রাজধানীসহ সারা দেশে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় যেসব জায়গায় যাওয়া হয়েছিল, আমি সেসব জায়গা সফর করতে চাই।”

যুদ্ধকালীন গল্প কভার করার ক্ষেত্রে নারী ফটোগ্রাফার ও সাংবাদিকদের ভূমিকার তুলে ধরে তিনি বলেন, “নারী সাংবাদিকরা তাদের পুরুষ সহযোগীদের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নারীর সংখ্যা কম হওয়া ছাড়া আর কোনো পার্থক্য ছিল না।”
অ্যান ডি হেনিং কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছিলেন। তার ছবিগুলো ছিল আশ্রয়প্রার্থী দুস্থ পিতা-পুত্র থেকে শুরু করে একটি ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি স্যাবার জেটের গোলা বর্ষণ করা বাড়ি পর্যন্ত।

হেনিং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশেও এসেছিলেন, তখন তিনি জাতির পিতার রঙিন ছবি ধারণ করেছিলেন, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর যে রঙিন ছবিগুলো তিনি তুলেছিলেন এবং কিউরেট করেছিলেন তার অল্প কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। কারণ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এবং পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসকদের দখলের পর বেশিরভাগ ছবি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।