মুক্তিযোদ্বা ছায়েরা বেগমের তথ্যের ভিত্তিতে মুকুন্দপুর মুক্ত হয় বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২২ ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকার জন্য প্রাণের পাশাপাশি অগুনতি মানুষের জীবন-জীবিকার ত্যাগের গল্পও কম নয়। বিশেষ করে অনেক নারী হারিয়েছেন সন্তান ও স্বজন। নিজেই হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র বা নেপথ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের করেছেন সরাসরি সহযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধকালে এই নারীদের জীবন সংগ্রাম নিয়েই বাবা আজিজ চৌধুরীকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হানাদারদের ক্যাম্পে যেতে হতো। বাঙ্কার খননসহ টুকটাক কাজ করে দিতেন তিনি। একসময় তাকেও বাধ্য হয়ে ক্যাম্পে যেতে হয়। সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। সেই থেকেই ক্ষোভ জন্ম নেয় হানাদারদের প্রতি। ক্ষোভ থেকেই প্রতিশোধের স্পৃহা। কৌশলে সখ্য গড়ে তোলেন হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে। গল্পের ছলে জেনে নেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে করা অপারেশনের দিনক্ষণ। জানিয়ে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তিনি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুরের সেজামোড়ার ছায়েরা বেগম। একাত্তরে ছায়েরা বেগম ১৫-১৬ বছরের কিশোরী। মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবদুল আজিজ চৌকিদার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঘরে সৎমা। পারিবারিক অনুশাসনের অভাবে কিছুটা ডানপিটে ছায়েরার দিকে নজর পড়ে পাকিস্তানি হানাদারদের। একপর্যায়ে তাকে ক্যাম্পে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। যতই দিন যেতে থাকে, নরপশুদের প্রতি তার ঘৃণাও তীব্র হতে থাকে। নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনীর কমান্ডারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পৌঁছে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে একাত্তরের নভেম্বরের ১৮ ও ১৯ তারিখের যুদ্ধে মুকুন্দপুরকে মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তুমুল যুদ্ধের পর হানাদারদের ২৮ জন বন্দি হয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। ছায়েরা বেগমের দুঃসাহসিক এ ভূমিকার কথা জানা যায় বীরযোদ্ধা মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার ‘জনযুদ্ধে গণযোদ্ধা’ গ্রন্থ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের মুকুন্দপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সায়ীদ আহমেদ বিপি (অব.) (তৎকালীন লে.) মুকুন্দপুর মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক মুকুন্দপুর যুদ্ধে ছায়েরা বেগমের এ ভূমিকা তুলে ধরার আগ পর্যন্ত তার এ অবদানের কথা কেউ জানতে পারেননি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত সোমবার সমকাল মুখোমুখি হয় নারী মুক্তিযোদ্ধা ছায়েরা বেগমের। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছায়েরা বেগম জানান যুদ্ধদিনের কথা। একই সঙ্গে জানালেন দুই বছর ধরে তার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা জীবন যাপনের কথাও। যুদ্ধকালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ছায়েরা বেগম বলেন, বাবার কাজের সুবাদে আমাকেও ক্যাম্পে যেতে হতো। এক সময় তাদের কোম্পানি কমান্ডার আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এর প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকি। এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরিচয় হয় সায়ীদ স্যারের সঙ্গে (মেজর জেনারেল (অব.) সায়ীদ আহমেদ)। তাকে গোয়ালনগরে থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানসহ গোলাবারুদের খবর দিতাম। কোথায় তাদের বাংকার এবং অস্ত্র ও গুলি রাখা হয়েছে, সেসবও জানিয়ে দিতাম। এ তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর যুদ্ধ করে মুকুন্দপুর হানাদারমুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এদিকে, মুকুন্দপুরের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে করা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশন ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা তাকে সন্দেহ করতে থাকে। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফেরেন। এরপর নানাজনের কথা শুনে মন খারাপ হলে সিলেটে মামাবাড়ি চলে যান। সেখানে দুই বছর পর তার বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে নোয়াখালী চলে যান। তিন বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। এরই মধ্যে ৩০ বছর পর জেনারেল সায়ীদের সহায়তায় মুকুন্দপুর আসেন। এরপর থেকে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে নিয়মিতই সম্মাননা জানানো হতো তাকে। মেজর জেনারেল (অব.) সায়ীদ আহমেদ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পরিপত্রের শর্তের বেড়াজালে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তার ভাতা উত্তোলন স্থগিত রয়েছে। এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তিসহ সনদ প্রাপ্তির জন্য ২০১৮ সালের মার্চ মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্যের চাহিদাপত্র (ডিও লেটার), মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সায়ীদ আহমেদ, , সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সুপারিশসহ আবেদন সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলেও মুক্তিযোদ্ধা ছায়েরা বেগম তালিকা আটকে থাকার বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে শেষ পর্যন্ত সায়রা বেগম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় ছায়েরা বেগম বিজয়নগর নিউজএর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাকি জীবনটা একটু শান্তিতে থাকতে চাই। Related posts:ব্যবসায় হাত মেলালেন আদানি-আম্বানিবিজয়নগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নাড়ী ও শিশুসহ ৪ জন আহতজিয়া ও খালেদার সংসার টিকিয়ে রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু Post Views: ১৫৩ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: