আগস্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালীর কান্নাভেজা

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২২

মৃনাল চৌধুরী লিটন।

আগস্ট মানেই শোক, আগস্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালীর কান্নাভেজা পরম বেদনা। আগস্ট এলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালীর মাথা। ডুকরে কেঁদে ওঠে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতির হৃদয়। চারদিকে কেবলই স্রোত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনায় গান গায়। নামে শোকের মিছিল। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ। পিতাহীন দেশে, সঙ্কটে উপনীত বাঙালী তাই এখনও আশ্রয় খোঁজে তাঁরই আদর্শে, রেখে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তাঁরই স্বপ্নাকাশে। মানুষ যূথবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন শপথ নেয় বাঙালী। কেননা জীবনের সুখ, স্বস্তি, আরাম, মোহ, অর্থকড়ি- সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান মানুষ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে কীভাবে একজন মানুষ অবলীলায় বিসর্জন দিতে পারেন নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, তার কালজয়ী ইতিহাস রচে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের প্রথম বাঙালী যাঁর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য, বাঙালী জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবয়বে। অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আগে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালী জাতিয়তাবাদের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই তিনি বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের জনক। পহেলা আগস্ট থেকে প্রতিদিনই অজস্র সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।“হে বঙ্গবন্ধু, নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছো শুনে/ আমি কাটিয়াছি এক অস্থির সময়/ …উত্তরহীন এক দীপ্র প্রশ্ন নিয়ে/ বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে গড়ে তুলেছিলে স্বদেশ তোমার/ গড়েছিলে এক স্বপ্নময় জগৎ/ কিন্তু এ কোন প্রতিদান পেলে তুমি/ তোমার নিজেরই হাতে গড়া বাংলাদেশের কাছ থেকে?।” ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকা-ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের মণিপুরের প্রথম সারির কবি এলাংবম নীলকান্ত তাঁর রচিত ‘তীর্থযাত্রা’ কাব্যগ্রন্থে এভাবেই ক্ষেদোক্তি প্রকাশ করেন। দেখতে দেখতে ৪৭টি বছর পেরিয়ে গেছে। রাত পোহালেই কাল সেই ভয়াল কালরাত, ১৫ আগস্ট। জাতির সব হারানোর দিন। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। এতকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকের হাতে।

৪৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়।

কিন্তু তাতে তো এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককে একটি জাতির হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি ফিরে আসেন প্রতিটি উৎসবে, আনন্দ-বেদনায়। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

দিনটি তাই বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। কাল সেই শোকের দিন, কান্নার দিন। জাতীয় শোক দিবসে বাঙালী গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী।
আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল ও অজস্র সংগঠন জাতীয় শোক দিবস পালনে গ্রহণ করেছে বিস্তারিত কর্মসূচী। করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজস্র রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে জাতীয় শোক দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচী।