মুক্তিযুদ্ধে বিজয়নগর

প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২২

মৃনাল চৌধুরী লিটন

বিজয়নগর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাথে সংযুক্ত ছিল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা হিসাবে পরিচিত ছিল ২০১০ সালে বিজয়নগর উপজেলা স্থাপিত হলে তখন থেকেই আমরা তখন থেকেই আমরা বিজয়নগর উপজেলা হিসেবে পরিচিত পায় বিজয়নগর উপজেলার নামের সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধ একাত্ম হয়ে আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধারা ১৯শে নভেম্বর মুকুন্দপুর হানাদার বাহিনী মুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধারা বিজয়ের বেশে প্রবেশ করে আর সেই বিজয়ের ঘটনা স্বরণীয় করে রাখতেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা সৃস্টি করে এ-র নাম করন করেন বিজয়নগর।

বিজয়নগর উপজেলার পটভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিগত ৩ আগষ্ট ২০১০ খ্রিঃ তারিখে ৪৮২তম উপজেলা হিসেবে এর প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছেএবং উপজেলা সৃষ্টির ১০ইউনিয়ন জনগন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব বর্তমানে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা র আ ম উবাইদুল মোক্তাদির চৌধুরীর নিকট শরনাপর্ন হলে তিনি নতুন উপজেলা সৃস্টির জন্য ভূমিকা গ্রহণ করেন এর তার ধারাবাহিকতায় এই উপজেলা সৃস্টি হয় উপজেলা সৃস্টি হলে এলাকার জনগন দল মত নির্বিশেষে তাকে এই উপজেলার স্হপতি বলা হয় ইতোপূর্বে উপজেলাটি ব্রা‏হ্ম‏ণবাড়িয়া সদর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও তিতাস নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন বলে এখানে ভিন্নধর্মী একটি আবহ ও আমেজ রয়েছে। ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ২২১.১৭ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের এ উপজেলায় হাওর, সমতল ভূমি এবং ছোট পাহাড় এ তিন ধরনের ভূমিরম্নপ এর এক অপরম্নপ সমন্বয় রয়েছে । সরকারের নবসৃষ্ট এ উপজেলাটি ভৌগলিকভাবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উপজেলা । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর হতে সড়ক পথে বিজয়নগর উপজেলার দুরত্ব ৩৫ কি.মি.।
বৃটিশ শাসনামলে ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে এ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ব্র‏‏‏হ্ম‏ণবাড়িয়াসহ এত্দঅঞ্চলে স্থল যোগাযোগ সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। উল্লেখ্য যে, সিংগারবিলের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের যোগাযোগের প্রায় ১৫০ বছরের পুরাতন প্রধান সড়কটি এখনও ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। লালমাটি সমৃদ্ধ পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও সিংগারবিল ইউনিয়নে রয়েছে প্রাকৃতিক কাঁঠাল, লিচু, মাল্টা ও পেয়ারাসহ ভিন্ন ধর্মী নানা বৃক্ষর অপরূপ সমাহার। মননশীল মানুষকে এর সৌন্দর্য আকর্ষণ করবেই। তা ছাড়া কালাছড়া চা বাগানে নাম না জানা অজানা শহীদদের গণ কবর ও রয়েছে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯ নভেম্বর এ উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর এলাকাটি মুক্ত হয়েছিল। যা মুকুন্দপুর দিবস হিসেবে প্রতি বছর পালন করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা এ ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল। ২০১০ সালে বিজয় দিবস উদযাপনকালে এ উপজেলার নামকরন করা হয় বিজয়নগর ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম টিপরা) জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
এ অঞ্চল প্রাচীন বাংলার সমতট নামক জনপদের অংশ ছিল।মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্গত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কারণে সরাইল পরগনা কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। বাংলার বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া মসনদ-এ আলা ঈসা খাঁর বংশ পরিচয় থেকে জানা যায় ভারতের বাইশওয়ারা রাজ্যের এক যুবরাজ কালিদাস গজদানী সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুলউলামা (রাঃ) এর নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম ধারণ করেন। সোলায়মান খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গে আগমন করেন। তিনি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের পর থেকে সর্বপ্রথম সরাইল পরগনার জায়গীর প্রাপ্ত হন। সোলায়মান খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠান বাহিনী মিথ্যা সন্ধির প্রস্তাবে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময়ে ঈসা খাঁর বয়স ছিল দশ বছর। পরবর্তীতে স্বীয় প্রতিভা বলে তিনি ভাটীরাজ্যের এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। ভাটী রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খাঁর সঙ্গে মোঘল বাহিনীর যুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈসা খাঁ সে সময়ে সরাইলে অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ভাটীরাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি রূপে তাঁর শাসনকেন্দ্র সরাইল থেকে রসানার গাঁয়ে এবং সাময়িক ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের জঙ্গল বাড়িতে স্থানান্তর করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ হতে ত্রিপুরা জেলার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব পাকিস্তান অংশের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।
ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে। এ জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দীপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহীদ হন।
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ ম্যানেজার মি হ্যালিডের কুঠি সরাইল থেকে শহরের মৌড়াইলে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এটি ভেঙ্গে সরকারি অফিস ঘর করা হয়েছে। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়নগর

বিজয়নগর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাথে সংযুক্ত ছিল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা হিসাবে পরিচিত ছিল ২০১০ সালে বিজয়নগর উপজেলা স্থাপিত হলে তখন থেকেই আমরা তখন থেকেই আমরা বিজয়নগর উপজেলা হিসেবে পরিচিত পায় বিজয়নগর উপজেলার নামের সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধ একাত্ম হয়ে আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধারা ১৯শে নভেম্বর মুকুন্দপুর হানাদার বাহিনী মুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধারা বিজয়ের বেশে প্রবেশ করে আর সেই বিজয়ের ঘটনা স্বরণীয় করে রাখতেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা সৃস্টি করে এ-র নাম করন করেন বিজয়নগর।

বিজয়নগর উপজেলার পটভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিগত ৩ আগষ্ট ২০১০ খ্রিঃ তারিখে ৪৮২তম উপজেলা হিসেবে এর প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছেএবং উপজেলা সৃষ্টির ১০ইউনিয়ন জনগন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব বর্তমানে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা র আ ম উবাইদুল মোক্তাদির চৌধুরীর নিকট শরনাপর্ন হলে তিনি নতুন উপজেলা সৃস্টির জন্য ভূমিকা গ্রহণ করেন এর তার ধারাবাহিকতায় এই উপজেলা সৃস্টি হয় উপজেলা সৃস্টি হলে এলাকার জনগন দল মত নির্বিশেষে তাকে এই উপজেলার স্হপতি বলা হয় ইতোপূর্বে উপজেলাটি ব্রা‏হ্ম‏ণবাড়িয়া সদর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও তিতাস নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন বলে এখানে ভিন্নধর্মী একটি আবহ ও আমেজ রয়েছে। ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ২২১.১৭ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের এ উপজেলায় হাওর, সমতল ভূমি এবং ছোট পাহাড় এ তিন ধরনের ভূমিরম্নপ এর এক অপরম্নপ সমন্বয় রয়েছে । সরকারের নবসৃষ্ট এ উপজেলাটি ভৌগলিকভাবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উপজেলা । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর হতে সড়ক পথে বিজয়নগর উপজেলার দুরত্ব ৩৫ কি.মি.।
বৃটিশ শাসনামলে ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে এ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ব্র‏‏‏হ্ম‏ণবাড়িয়াসহ এত্দঅঞ্চলে স্থল যোগাযোগ সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। উল্লেখ্য যে, সিংগারবিলের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের যোগাযোগের প্রায় ১৫০ বছরের পুরাতন প্রধান সড়কটি এখনও ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। লালমাটি সমৃদ্ধ পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও সিংগারবিল ইউনিয়নে রয়েছে প্রাকৃতিক কাঁঠাল, লিচু, মাল্টা ও পেয়ারাসহ ভিন্ন ধর্মী নানা বৃক্ষর অপরূপ সমাহার। মননশীল মানুষকে এর সৌন্দর্য আকর্ষণ করবেই। তা ছাড়া কালাছড়া চা বাগানে নাম না জানা অজানা শহীদদের গণ কবর ও রয়েছে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯ নভেম্বর এ উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর এলাকাটি মুক্ত হয়েছিল। যা মুকুন্দপুর দিবস হিসেবে প্রতি বছর পালন করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা এ ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল। ২০১০ সালে বিজয় দিবস উদযাপনকালে এ উপজেলার নামকরন করা হয় বিজয়নগর ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম টিপরা) জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
এ অঞ্চল প্রাচীন বাংলার সমতট নামক জনপদের অংশ ছিল।মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্গত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কারণে সরাইল পরগনা কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। বাংলার বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া মসনদ-এ আলা ঈসা খাঁর বংশ পরিচয় থেকে জানা যায় ভারতের বাইশওয়ারা রাজ্যের এক যুবরাজ কালিদাস গজদানী সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুলউলামা (রাঃ) এর নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম ধারণ করেন। সোলায়মান খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গে আগমন করেন। তিনি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের পর থেকে সর্বপ্রথম সরাইল পরগনার জায়গীর প্রাপ্ত হন। সোলায়মান খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠান বাহিনী মিথ্যা সন্ধির প্রস্তাবে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময়ে ঈসা খাঁর বয়স ছিল দশ বছর। পরবর্তীতে স্বীয় প্রতিভা বলে তিনি ভাটীরাজ্যের এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। ভাটী রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খাঁর সঙ্গে মোঘল বাহিনীর যুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈসা খাঁ সে সময়ে সরাইলে অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ভাটীরাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি রূপে তাঁর শাসনকেন্দ্র সরাইল থেকে রসানার গাঁয়ে এবং সাময়িক ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের জঙ্গল বাড়িতে স্থানান্তর করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ হতে ত্রিপুরা জেলার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব পাকিস্তান অংশের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।
ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে। এ জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দীপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহীদ হন।
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ ম্যানেজার মি হ্যালিডের কুঠি সরাইল থেকে শহরের মৌড়াইলে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এটি ভেঙ্গে সরকারি অফিস ঘর করা হয়েছে। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।।

চলমান প্রতি শনিবার