আজ অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মহা প্রয়ান দিবস

প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২২

।। মৃনাল চৌধুরী লিটন।।

১৬ই জুন অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ ইউনাইটেড বেঙ্গলের পুরোধা শোষন ও বৈষম্যহীন স্বাধীন ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার অন্যতম আপোষহীন জাতীয়তাবাদী নেতা আমাদের বিক্রমপুরের গর্ব ও কৃতি সন্তান দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (সি. আর দাস) এর মহা প্রয়ান দিবস আজ। ১৯২৫ সালের এই দিনে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে বাঙ্গালির ইতিহাসের এই বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজ হিতৈষী, প্রথিতযশা খ্যাতিমান আইনজীবী মৃত্যুবরণ করেন।

দেশ বন্ধুর পিতা ভুবনমোহন দাস ছিলেন একজন নামকরা এটর্নি। ১৮৭০ সালের ৫ই নভেম্বর কোলকাতার পটলডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন দেশবন্ধু। তাদের পৈত্রিক বাড়ী ঐতিহাসিক বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজং উপজেলার তেলিরবাগ গ্রামে। বিলেত থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করে দেশে ফিরে আইন পেশা ত্যাগ করে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদিয়ে কারাবরণ করেন।

পরাধীন ভারতবর্ষকে বিদেশী ইংরেজ শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করার আন্দোলন সংগ্রামের সুচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলা থেকেই। বাংলার বিপ্লবীদের নেতৃত্ব ও সাহসীকতায় ইংরেজদের ভারতবর্ষ শাসনের দীর্ঘ পরিকল্পনার ভিতকে কাপিয়ে দিয়েছিল। সে কারনেই ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ইউনাইটেড বৃহৎ বেঙ্গল প্রদেশকে দুভাগে বিভক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে ইউনাইটেড বেঙ্গল প্রদেশ ছিল উড়িষ্যা, বিহার, আসাম ও বাংলা নিয়ে গঠিত। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস বাংলাকে বিভক্ত করার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ নামে তিব্র অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন থেকেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের গোপন সংগঠন অনুশিলন সমিতি গড়ে উঠেছিল।

দেশবন্ধু এই গোপন সংগঠনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন ছিলেন। ইংরেজদের ভয় ছিল দেশবন্ধুর নেতৃত্বে বিপ্লবীদের আন্দোলনের দাবানল ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বিহারকে আলাদা করে বেঙ্গল এ্যাক্ট সংশোধন করে বিভক্ত বাংলাকে পুনরায় একত্রিত করে ইউনাইটেড গ্রেড বেঙ্গল ঘোষনা করেছিলেন। সেই বছরই ইংরেজ শাসকগণ রাজধানী কোলকাতা থেকে সড়িয়ে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। দেশ বন্ধুর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তখনকার সমগ্র ভারতবর্ষে দারুণভাবে প্রভাব সৃষ্টি করেছিল।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় প্রখ্যাত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে বৃটিশ সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবন্ধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আইনি লাড়াই করে নেতাদের মুক্ত করেছিলেন। আইন ব্যবসায় তখনকার দিনে প্রখ্যাত আইনজীবী দেশবন্ধুর দৈনিক আয় ছিল কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু সর্বস্ব আয়, পৈত্রিক জায়গাজমি সবকিছু দেশের জন্য উজার করে দিয়েছেন এই সর্বত্যাগী নেতা। এ কারনেই বাংলার মানুষ মহান এই সর্বত্যাগী বিপ্লবী নেতাকে দেশবন্ধু উপাধীতে ভুষিত করেছিলেন।

১৯২২ সালে দেশবন্ধু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালে বাংলাকে ভাগ করার প্রশ্নে কংগ্রেসের অবাঙ্গালী নেতাদের সাথে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু কংগ্রেসের রাজনীতি ত্যাগ করে জওয়াহেরলাল নেহেরুর পিতা কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরু ও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি(এস.এন ব্যানার্জি)কে সাথে নিয়ে ব্রিটিশের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বরাজ পার্টি নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন।

বাংলার প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অনলবর্ষী বক্তা বাঙ্গালি মুসলমানদের বাংলাভাষার পক্ষে জাগরনের আরেক পথিকৃৎ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ চন্দ্র বসু দেশবন্ধুর স্বরাজ পার্টিতে যোগদান করে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করেছিলেন। বাঙ্গালি জাতির দুর্ভাগ্য মহান এই খ্যাতিমান কালজয়ী নেতা ১৯২৪ সালে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসার জন্য দার্জিলিং এ প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তার স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতির দিকে যেথে থাকলে ১৯২৫ সালের এই দিনে বড় অসময়ে দেশবন্ধুর জীবনাবসান ঘটেছিল।

দেশবন্ধু সি.আর দাসের এই অকাল মৃত্যুতে ভারতবর্ষের জাতীয় রাজনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তার মাশুল কমবেশী সকলেই এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি পরিণতবয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে বেঙ্গলসহ অবিভক্ত ভারতবর্ষের চেহারা হতো অন্যরকম। আমরাও নিশ্চয় হতে পারতাম অন্যরকম ব্যতিক্রমী এক সভ্যজাতি। বিক্রমপুরের এই অবহেলিত মাটি শুধু অবিভক্ত ভারতবর্ষকেই নয় পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে আরও অনেক গুণী মনিষী সন্তানকে। আমার প্রয়াত পিতাও শরৎ চন্দ্র বসুর সাথে দীর্ঘদিন স্বদেশী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বাঙ্গালির স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদুত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে তার মহাপ্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

১৬ই জুন অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ ইউনাইটেড বেঙ্গলের পুরোধা শোষন ও বৈষম্যহীন স্বাধীন ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার অন্যতম আপোষহীন জাতীয়তাবাদী নেতা আমাদের বিক্রমপুরের গর্ব ও কৃতি সন্তান দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (সি. আর দাস) এর মহা প্রয়ান দিবস আজ। ১৯২৫ সালের এই দিনে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে বাঙ্গালির ইতিহাসের এই বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজ হিতৈষী, প্রথিতযশা খ্যাতিমান আইনজীবী মৃত্যুবরণ করেন।

দেশ বন্ধুর পিতা ভুবনমোহন দাস ছিলেন একজন নামকরা এটর্নি। ১৮৭০ সালের ৫ই নভেম্বর কোলকাতার পটলডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন দেশবন্ধু। তাদের পৈত্রিক বাড়ী ঐতিহাসিক বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজং উপজেলার তেলিরবাগ গ্রামে। বিলেত থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করে দেশে ফিরে আইন পেশা ত্যাগ করে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদিয়ে কারাবরণ করেন।

পরাধীন ভারতবর্ষকে বিদেশী ইংরেজ শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করার আন্দোলন সংগ্রামের সুচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলা থেকেই। বাংলার বিপ্লবীদের নেতৃত্ব ও সাহসীকতায় ইংরেজদের ভারতবর্ষ শাসনের দীর্ঘ পরিকল্পনার ভিতকে কাপিয়ে দিয়েছিল। সে কারনেই ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ইউনাইটেড বৃহৎ বেঙ্গল প্রদেশকে দুভাগে বিভক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে ইউনাইটেড বেঙ্গল প্রদেশ ছিল উড়িষ্যা, বিহার, আসাম ও বাংলা নিয়ে গঠিত। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস বাংলাকে বিভক্ত করার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ নামে তিব্র অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন থেকেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের গোপন সংগঠন অনুশিলন সমিতি গড়ে উঠেছিল।

দেশবন্ধু এই গোপন সংগঠনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন ছিলেন। ইংরেজদের ভয় ছিল দেশবন্ধুর নেতৃত্বে বিপ্লবীদের আন্দোলনের দাবানল ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বিহারকে আলাদা করে বেঙ্গল এ্যাক্ট সংশোধন করে বিভক্ত বাংলাকে পুনরায় একত্রিত করে ইউনাইটেড গ্রেড বেঙ্গল ঘোষনা করেছিলেন। সেই বছরই ইংরেজ শাসকগণ রাজধানী কোলকাতা থেকে সড়িয়ে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। দেশ বন্ধুর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তখনকার সমগ্র ভারতবর্ষে দারুণভাবে প্রভাব সৃষ্টি করেছিল।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় প্রখ্যাত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে বৃটিশ সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবন্ধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আইনি লাড়াই করে নেতাদের মুক্ত করেছিলেন। আইন ব্যবসায় তখনকার দিনে প্রখ্যাত আইনজীবী দেশবন্ধুর দৈনিক আয় ছিল কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু সর্বস্ব আয়, পৈত্রিক জায়গাজমি সবকিছু দেশের জন্য উজার করে দিয়েছেন এই সর্বত্যাগী নেতা। এ কারনেই বাংলার মানুষ মহান এই সর্বত্যাগী বিপ্লবী নেতাকে দেশবন্ধু উপাধীতে ভুষিত করেছিলেন।

১৯২২ সালে দেশবন্ধু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালে বাংলাকে ভাগ করার প্রশ্নে কংগ্রেসের অবাঙ্গালী নেতাদের সাথে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু কংগ্রেসের রাজনীতি ত্যাগ করে জওয়াহেরলাল নেহেরুর পিতা কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরু ও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি(এস.এন ব্যানার্জি)কে সাথে নিয়ে ব্রিটিশের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বরাজ পার্টি নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন।

বাংলার প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অনলবর্ষী বক্তা বাঙ্গালি মুসলমানদের বাংলাভাষার পক্ষে জাগরনের আরেক পথিকৃৎ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ চন্দ্র বসু দেশবন্ধুর স্বরাজ পার্টিতে যোগদান করে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করেছিলেন। বাঙ্গালি জাতির দুর্ভাগ্য মহান এই খ্যাতিমান কালজয়ী নেতা ১৯২৪ সালে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসার জন্য দার্জিলিং এ প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তার স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতির দিকে যেথে থাকলে ১৯২৫ সালের এই দিনে বড় অসময়ে দেশবন্ধুর জীবনাবসান ঘটেছিল।

দেশবন্ধু সি.আর দাসের এই অকাল মৃত্যুতে ভারতবর্ষের জাতীয় রাজনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তার মাশুল কমবেশী সকলেই এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি পরিণতবয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে বেঙ্গলসহ অবিভক্ত ভারতবর্ষের চেহারা হতো অন্যরকম। আমরাও নিশ্চয় হতে পারতাম অন্যরকম ব্যতিক্রমী এক সভ্যজাতি। বিক্রমপুরের এই অবহেলিত মাটি শুধু অবিভক্ত ভারতবর্ষকেই নয় পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে আরও অনেক গুণী মনিষী সন্তানকে। আমার প্রয়াত পিতাও শরৎ চন্দ্র বসুর সাথে দীর্ঘদিন স্বদেশী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বাঙ্গালির স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদুত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে তার মহাপ্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

১৬ই জুন অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ ইউনাইটেড বেঙ্গলের পুরোধা শোষন ও বৈষম্যহীন স্বাধীন ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার অন্যতম আপোষহীন জাতীয়তাবাদী নেতা আমাদের বিক্রমপুরের গর্ব ও কৃতি সন্তান দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (সি. আর দাস) এর মহা প্রয়ান দিবস আজ। ১৯২৫ সালের এই দিনে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে বাঙ্গালির ইতিহাসের এই বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজ হিতৈষী, প্রথিতযশা খ্যাতিমান আইনজীবী মৃত্যুবরণ করেন।

দেশ বন্ধুর পিতা ভুবনমোহন দাস ছিলেন একজন নামকরা এটর্নি। ১৮৭০ সালের ৫ই নভেম্বর কোলকাতার পটলডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন দেশবন্ধু। তাদের পৈত্রিক বাড়ী ঐতিহাসিক বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজং উপজেলার তেলিরবাগ গ্রামে। বিলেত থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করে দেশে ফিরে আইন পেশা ত্যাগ করে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদিয়ে কারাবরণ করেন।

পরাধীন ভারতবর্ষকে বিদেশী ইংরেজ শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করার আন্দোলন সংগ্রামের সুচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলা থেকেই। বাংলার বিপ্লবীদের নেতৃত্ব ও সাহসীকতায় ইংরেজদের ভারতবর্ষ শাসনের দীর্ঘ পরিকল্পনার ভিতকে কাপিয়ে দিয়েছিল। সে কারনেই ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ইউনাইটেড বৃহৎ বেঙ্গল প্রদেশকে দুভাগে বিভক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে ইউনাইটেড বেঙ্গল প্রদেশ ছিল উড়িষ্যা, বিহার, আসাম ও বাংলা নিয়ে গঠিত। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস বাংলাকে বিভক্ত করার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ নামে তিব্র অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন থেকেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের গোপন সংগঠন অনুশিলন সমিতি গড়ে উঠেছিল।

দেশবন্ধু এই গোপন সংগঠনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন ছিলেন। ইংরেজদের ভয় ছিল দেশবন্ধুর নেতৃত্বে বিপ্লবীদের আন্দোলনের দাবানল ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বিহারকে আলাদা করে বেঙ্গল এ্যাক্ট সংশোধন করে বিভক্ত বাংলাকে পুনরায় একত্রিত করে ইউনাইটেড গ্রেড বেঙ্গল ঘোষনা করেছিলেন। সেই বছরই ইংরেজ শাসকগণ রাজধানী কোলকাতা থেকে সড়িয়ে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। দেশ বন্ধুর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তখনকার সমগ্র ভারতবর্ষে দারুণভাবে প্রভাব সৃষ্টি করেছিল।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় প্রখ্যাত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে বৃটিশ সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবন্ধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আইনি লাড়াই করে নেতাদের মুক্ত করেছিলেন। আইন ব্যবসায় তখনকার দিনে প্রখ্যাত আইনজীবী দেশবন্ধুর দৈনিক আয় ছিল কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু সর্বস্ব আয়, পৈত্রিক জায়গাজমি সবকিছু দেশের জন্য উজার করে দিয়েছেন এই সর্বত্যাগী নেতা। এ কারনেই বাংলার মানুষ মহান এই সর্বত্যাগী বিপ্লবী নেতাকে দেশবন্ধু উপাধীতে ভুষিত করেছিলেন।

১৯২২ সালে দেশবন্ধু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালে বাংলাকে ভাগ করার প্রশ্নে কংগ্রেসের অবাঙ্গালী নেতাদের সাথে মতপার্থক্য হওয়ায় ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু কংগ্রেসের রাজনীতি ত্যাগ করে জওয়াহেরলাল নেহেরুর পিতা কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরু ও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি(এস.এন ব্যানার্জি)কে সাথে নিয়ে ব্রিটিশের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বরাজ পার্টি নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন।

বাংলার প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অনলবর্ষী বক্তা বাঙ্গালি মুসলমানদের বাংলাভাষার পক্ষে জাগরনের আরেক পথিকৃৎ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ চন্দ্র বসু দেশবন্ধুর স্বরাজ পার্টিতে যোগদান করে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করেছিলেন। বাঙ্গালি জাতির দুর্ভাগ্য মহান এই খ্যাতিমান কালজয়ী নেতা ১৯২৪ সালে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসার জন্য দার্জিলিং এ প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তার স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতির দিকে যেথে থাকলে ১৯২৫ সালের এই দিনে বড় অসময়ে দেশবন্ধুর জীবনাবসান ঘটেছিল।

দেশবন্ধু সি.আর দাসের এই অকাল মৃত্যুতে ভারতবর্ষের জাতীয় রাজনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তার মাশুল কমবেশী সকলেই এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি পরিণতবয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে বেঙ্গলসহ অবিভক্ত ভারতবর্ষের চেহারা হতো অন্যরকম। আমরাও নিশ্চয় হতে পারতাম অন্যরকম ব্যতিক্রমী এক সভ্যজাতি। বিক্রমপুরের এই অবহেলিত মাটি শুধু অবিভক্ত ভারতবর্ষকেই নয় পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে আরও অনেক গুণী মনিষী সন্তানকে। বাঙ্গালির স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদুত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে তার মহাপ্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।