আজ ১৩ই মে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের তিরোধান দিবস বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২২ আজ ১৩ই মে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের তিরোধান দিবস।তাঁর জন্ম ১৯২৬ সালে কলকাতায়।সুকান্তের পিতা-নিবারণ ভট্টাচার্য,মা-সুণীতি দেবী।তাঁর পিতৃস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ।অভিবক্ত ভারতে তখন অনেক নামকরা কবি ছিলেন,যেমন,বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম আরও অনেকেই কিন্তু কবি সুকান্ত ছিলেন তাদের সবার থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম।কবি সুকান্ত ছিলেন বিপ্লবী,মানবতাবাদী, আন্তর্জাতিকতাবাদী ও সাম্যবাদী।তাঁর প্রতিটি কবিতায় নিপীড়িত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন যা এককভাবে আর কোন কবির মধ্যে দেখা যায় না।সুকান্ত পাঠশালায় পড়াকালীন’সঞ্চয়’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা বের করেছিলেন।লেখার শুরু তখন থেকেই।ছোটবেলায় ১৯৩৭ সালে তাঁর মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে কবির জীবনে নেমে আসে নানা বিপর্যয়।পারিবারিক অার্থিক বিপর্যয়ের ফলে সুকান্তের প্রাতিষ্টানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে হাইস্কুলেই।পরে কলকাতা বিণ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দুইবার মেট্টিক পরীক্ষা দিয়েও অঙ্কে দুর্বল থাকায় অকৃতকার্য হন।কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সুকান্তের কবিতা পড়ে যারপরন্যায় মুগ্ধ হন।পরবর্তীতে তিনিই তাঁকে কবিমহলে পরিচয় করিয়ে দেন।“জীবনের অভিজ্ঞতাকে ক্ষমতায় বেঁধে সুকান্ত যখন কবিতার বিদ্যুতশক্তিকে কলকারখানায়, ক্ষেতে খামারে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে শুরু করেছে,ঠিক তখনই মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিয়ে গেছে।শুরুতেই সমাপ্তির এই শোকে বাংলা সাহিত্য চিরদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলবে।”১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪১ সাল, মাত্র তিন বছর তাঁর লেখার বয়স।তিন বছরেই প্রায় ৮/৯টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করে গেছেন যেগুলো তাঁকে বাংলা সাহিত্যে তো অবশ্যই যতদিন বিশ্বে নিপীড়িত মানুষের উপর পূঁজিবাদী ধনিক শ্রেনীর ণোষণ থাকবে ততদিন তাঁকে অমর করে রাখবে।সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা এখন আর কেবল তাঁর কবিতা নয়–দেশের, দশের ও বিশ্বের।তাঁর মৃত্যুর পর কবি জগদীশ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন,”…যে কবির বাণী শোনবার জন্যে কবিগুরু কান পেতেছিলেন সুকান্ত সেই কবি।শৌখিন মজদুরি নয়,কৃষাণের জীবনের সে ছিল সত্যিকার শরিক,কর্মে ও কথায় তাদেরই সাথে ঘনিষ্ট আত্মীয়তা ছিল তাঁর,মাটির রসে ঋদ্ধ ও পুষ্ট তাঁর দেহমন।মাটির বুক থেকে সে উঠে এসেছিল।”ব্যক্তিজীবনে সুকান্ত একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।নিন্মের শেষ চার পঙতিতে–‘আর মনে করো আকাশে আছে এক দ্রুব নক্ষত্রনদীর ধারায় আছে গতির নির্দেশ,অরন্যের মর্মর ধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষাআর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন।’ঐতিহাসিক,ছারপত্র। কবি সুকান্ত যে আদর্শের কথা বলে গেছেন তা পৃথিবীর সমস্ত মতবাদের চেয়েও প্রাচীন,সমস্ত আদর্শের চেয়েও বড়। "তাঁর প্রথম দিকের অনেক রচনাতেই দলীয় শ্লোগান খুব স্পষ্ট ছিল,কিন্তু মনের বালকত্ব উত্তীর্ণ হবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আত্মবিশ্বাস আত্মপ্রকাশকে অনন্যাপরতন্ত্র করে তুলেছিল।...." ১৯৪১ সালে সুকান্ত বাম রাজনীতিতে আসেন।একজন কমিউনিষ্ট পার্টির কর্মী হিসাবে তৎকালীন মূল রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।১৯৪৩ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির উদ্দোগে 'শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সেবা-স্বাধীনতা'র আদর্শে যে কিশোর -সংগঠন গড়ে উঠেছিল সুকান্তকে তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। সুকান্ত ছিলেন বিপ্লবী, সাম্যবাদী।তিনি তাঁর কবিতায় পৃথিবীর জঞ্জাল সরানোর কথা বলেছেন,দেশলায়ের কাঠি দ্বারা আগুন জালাবার কথা বলেছেন আবার অঙ্গিকার করছেন, এ বিশ্বটাকে সকল শিশুদের বাসযোগ্য করতে।আরও বলে গেছেন,ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।মানব মুক্তির জন্য এর থেকে বিপ্লবী কথা আর কি হতে পারে আমাদের জানা নেই। পার্টির কাজে রাত দিন পরিশ্রম ও বিশ্রামের অভাবে, দারিদ্রতা তো ছিলই, সুকান্তের শরীর অচিরেই ভেঙ্গে পড়ে।অসুস্থ সুকান্তকে কমিউনিষ্ট পার্টির হাসপাতালে 'রেড এড হোম'-এ ভর্তি করা হয়।এখানে কিছুদিন থাকার পর পূণরায় নতুন করে 'রেড এড কিওর হোম' ১০৯,লাউডন ষ্ট্রিটে প্রতিষ্টিত হলে এখানে চিকিৎসার জন্যে আনা হয় তাঁকে।অসুখ ক্রমে জটিল আকার ধারণ করলে ১৯৪৭ সালের ১২ই এপ্রিল যাদবপুর যক্ষা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।কিন্তু কোনভাবেই তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।১৯৪৭ সালের ১৩ ই মে মঙ্গলবার সকালবেলা তিনি মারা যান।তখন তাঁর বয়স মাত্র একুশ। আজকের দিনে তাঁর প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা ও লাল সালাম। Related posts:মোক্তাদির চৌধুরীকে উদ্দেশ্য শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের মুরব্বিজ্ঞানবিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় বিজয়নগর এর কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন করে আরো ২জন আক্রান্ত, ২২১ জনের নমুনায় পজিটিভ ১৪ Post Views: ১৪৪ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: