পৃথিবীর বুকে ব্যবধান গড়ে দেয়া পাঁচ বীর যোদ্ধা……

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২২

পৃথিবীর বুকে ব্যবধান গড়ে দেয়া পাঁচ বীর যোদ্ধা……

👉 মোছাম্মৎ তারামন বেগম (তারামন বিবি) ছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের সমুখ যোদ্ধা। স্বাধীনতার লড়াইয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাঁকে বীর প্রতীক উপাধি দেয়া হয়েছিল। সরকারি গেজেট অনুসারে তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪।​

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাঠি ইউনিয়নের কাছারিপাড়ার শংকর মাধবপুর গ্রামে তারামন বিবির জন্ম। শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী একটি গানবোট নিয়ে তারামন বিবির ক্যাম্পের দিকে আসতে থাকে। খবর পেয়ে তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সেই দলকে সমুখ যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করেন। পরবর্তীতেও তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এসব যুদ্ধে বেশ কয়েকবার মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন তাঁর জন্মভূমি থেকে।

👉 ফুলন দেবীঃ উপমহাদেশের ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে রইবেন চিরকাল। তাঁর মতো শারীরিক নিপীড়ন সহ্য করে ‘দ্রোহের প্রতীক’ রূপে ফিরে আসার উদাহরণ খুব বেশি নেই। উত্তর প্রদেশের কানপুর থেকে শ’খানেক মাইল দুরের গ্রাম বেহমাইতে ১৯৭৯ সালে উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্ত বেশ কিছু ‘অমানুষ’, ২৩ দিন যাবত শারীরিক নিপীড়ন করেছিল। প্রতিশোধ নিয়েছিলেন ১৯৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, বেহমাই গ্রামে উপস্থিত হয়ে তিনি গুলি করে হত্যা করেছিলেন ২২ জন ঠাকুরকে। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আশ্বাসে আত্মসমর্পণ করেন। অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর ছবি এবং দেবী দুর্গার প্রতিমার সামনে। ১১ বছরের সাজা শেষে দু’বার লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই তাঁকে হত্যা করে শের সিং নামের এক ব্যক্তি, পরবর্তীতে জানা যায় বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতেই তাঁকে হত্যা করা হয়।

👉 লায়লা খালেদঃ প্যালেস্টাইনের হাইফায় জন্ম নেয়া মানুষটি নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হন সপরিবারে। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কারণে শরণার্থী হিসেবে বেড়ে ওঠেন লেবাননে। পপুলার ফ্রন্ট দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের একজন গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তিনি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট তাঁর দলের কয়েকজন সদস্যের সাথে বিমান ছিনতাইয়ে অংশ নেন। পাইলটকে তিনি হাইফা হয়ে দামেস্ক যেতে বাধ্য করেন। দু’জন ইসরাইলী ছাড়া বিমানের সকল যাত্রীকে দামেস্কে নামিয়ে দেয়া হয়। ইসরায়েলি জিম্মিদের দিয়ে পরবর্তীতে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় করা হয়। ছিনতাইকৃত বিমানটির সামনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।বিমান ছিনতাইয়ের সময় এডি এডামস নামক এক ব্যক্তি লায়লার একটি ছবি তোলেন। ছবিতে লায়লা একে-৪৭ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে এ ছবিটা বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে খ্যাতি লাভ করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়। গেরিলা লায়লা খালেদ বেঁচে আছেন, বর্তমানে লন্ডনে বাস করেন।

👉 রেহানাঃ ২০১০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক ও সিরিয়ার দীর্ঘ এলাকা চলে যায় বর্বর জল্লাদ আইসিসের কব্জায়। এদের বর্বরতা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। সে সময়ে কুর্দি গেরিলারা (YPJ) সিরিয়ায় নিজেদের অঞ্চলে আইসিসকে রুখে দিয়েছিল। এবং সেই প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন কুর্দি নারী গেরিলারা। তাঁদেরই একজন রেহানা, তিনি কোবান অঞ্চলের মানুষ। তিনি হত্যা করেছিলেন শতাধিক আইসিস জল্লাদকে। এই ঘটনা টুইটার এবং অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছিল। ২০১৪ সালের অক্টোবরে আইসিস দাবী করে রেহানাকে তারা হত্যা করেছে, প্রমাণ হিসেবে একটি শিরোচ্ছেদ করা ছিন্ন মাথা প্রদর্শন করে। তবে, কুর্দি গেরিলারা এই দাবী প্রত্যাখ্যান করে। হয়তো রেহানা আজো বেঁচে আছেন, হয়তো নেই। তাঁর বীরত্ব আরব নারীদের মাঝে ছড়িয়ে পরুক এটি চাওয়া।

👉 আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (IRA) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল লড়াই চালিয়ে আসা সংগঠন। ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের কার্যক্রম যথেষ্ট ভীতির সঞ্চার করেছিল জনজীবনে। ১৯৭০ সালে বেলফাস্টে এই নারী যোদ্ধাকে (ছবি দ্রষ্টব্য) আমেরিকার তৈরি AR18 অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের দিকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। ছবিটি তুলেছিলেন আইরিশ আলোকচিত্রী কোলম্যান ডয়লে। এই গেরিলা যোদ্ধার পরিনতি সম্পর্কে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়না এমনকি তাঁর নামও অজানা।

পৃথিবীর প্রতিটি দিন মানুষের, আমাদের জন্ম থেকে শুরু করে প্রথম উচ্চারণসহ সকল অর্জনে আপনাদের অবদান যে কারও চেয়ে বেশী। আমরা কৃতজ্ঞ।

জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশের সকল নারী’র, জয় পৃথিবীর সকল মানুষের।