১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ১৯৭১ সাল……

প্রকাশিত: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২২

১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ১৯৭১ সাল……।

৪৩,০০০ টন গম নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘SS Erna Elizabeth’ নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে উল্লেখিত গম খালাস করার কথা। কিন্তু, অনেকের প্রিয় ‘পাকিস্তানী মুসলমান ভাইরা’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই খাদ্য শস্য বাঙালিদের না দেবার। সেদিন জাহাজটির পন্য খালাস না করেই, গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচী নিয়ে যাওয়া হয়। স্মর্তব্য, একাত্তরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও দুটি খাদ্যবাহী জাহাজ ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় করাচীতে।

পৃথিবীতে অনেক কিছুই রাজনৈতিক ও সামরিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়, জ্বালানি তেল তার অন্যতম। সবচেয়ে জঘন্য হচ্ছে খাদ্য নিয়ে রাজনীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান একাত্তরে খাদ্য রাজনীতিই করেছিল।

উপমহাদেশ লুঠে নেয়া ব্রিটিশরাও, একই ভূমিকা রেখেছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪৩ সালে যখন বাংলার মানুষ বেঘোরে মরছিল, ‘চার্চিল’ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। শুধু তাই নয়, অন্যেরা যেন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে না আসে সে বিষয়েও চার্চিল ব্যবস্থা নিয়েছিল।

দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মৃত্যুতে চার্চিল সামান্য দয়া অনুভব করেনি বরং মন্তব্য করেছিল, ‘ভারতবাসী, খরগোসের মত বাচ্চা দেয়।’

ব্রিটিশ বর্বর চার্চিলের মতোই, ১৯৭৪ সালের খাদ্য সংকটে হেনরি কিসিঞ্জার খাদ্যকে ব্যবহার করেছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কারণ, একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো পরাশক্তির পরাজয়। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ এরা নিয়েছিল ১৯৭৪ সালের খাদ্য সংকটে এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

১৯৪৫ সালে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হিসেবে শ্বেতাঙ্গদের হাতে ‘পয়দা’ হওয়া জাতিসংঘ, ২০২২ সাল অবধি কোন যুদ্ধটি থামাতে সক্ষম হয়েছে আমাদের জানা নেই। আমাদের স্মরণে আসছে না, এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে সবার নাকের ডগায় আরোপিত যুদ্ধের ফলে, অবধারিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা কোটি কোটি আদম সন্তানকে বাঁচাতে কোন কার্যকর ভূমিকা রেখেছে ?

🔴 পৃথিবীর সুস্পষ্টভাবেই ২ ভাগে বিভক্ত। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বর্ণবাদী, বর্বর, নির্মম শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকে সবার চোখের সামনে ‘নাঙা’ করে দিয়েছে। ‘সাদা শরণার্থী’ আর ‘কালো শরণার্থী’ কিন্তু এক নয়।

‘সাদা আর কালো’তে বিভক্ত পৃথিবী, ধনী আর নির্ধনে লড়াই চলছে।

🔴🔴 অন্যদিকে, আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোন সুযোগ নেই। নিশ্চিতভাবেই, পরাজিত পাকিস্তানী ভাবধারার অমানুষরা থেমে নেই। এমনকি দু’হাজার সালের পর জন্মানো শিশুটিও সেই ভাবধারা লালন করতে পারে। একাত্তরে, শত্রু ছিল চিহ্নিত, আজ সে বহুরূপী।