১৯শে নভেম্বর মুকুন্দপুর মুক্ত বিজয় বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২১ মুকুন্দপুর বিজয় ভারত সীমান্তের কাছে ব্রাþণবাড়িয়া জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম মুকুন্দপুর। গ্রামটি বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মত সমতল নয়। ছোট ছোট টিলা, ছড়ানো ছিটানো ঝোপ ঝাড় আর চড়াই উৎরাইএর মাঝ নিচু জলাভূমি এলাকাটিকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছে। রেলপথে আখাউড়া থেকে সিলেট যাবার সময় আজমপুর রেলষ্টেশন পেরিয়ে সিংগারবিল, আর তারপরেই ছোট্ট ষ্টেশন মুকুন্দপুর। ভারত সীমান্তের ৫০০ গজ পশ্চিমের এই রেল ষ্টেসনটি মুকুন্দপুরের নিস্তরঙ্গ জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। মাঝে মাঝে দু একটি লোকাল ট্রেন এখানে থেমে মুকুন্দপুরের নিস্তব্ধতায় নাড়া দিয়ে যায়। ১৯৭১ এর মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি দল বিনা বাঁধায় এখানে পৌছে সিলেট আখাউড়া রেলপথ নিয়ন্ত্রনের লক্ষে রেল ষ্টেশনের পূর্ব দিকে অপেক্ষাকৃত উঁচু একটি টিলায় ঘাঁটি গাড়ে। ধীরে ধীরে মুকুন্দপুর বর্ডার আউটপোষ্ট ঘিরে পাকিস্তানিদের একটি শক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে ওঠে।পাকিস্তানি বাহিনীর মূল কাজ রেলপথ নিয়ন্ত্রন হলেও স্বভাবগত কারনেই তারা এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরবর্তী পাঁচ মাস এইগ্রাম রাজাকার আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিনত হয়। গ্রামবাসী হয়ে পড়ে শত্রুর হাতে অবরুদ্ধ। অক্টোবরে লে: কর্ণেল শফিউল্লার (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল ও বাংলাদেশের ২য় সেনাপ্রধান; প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল আব্দুর রব) নেতৃত্বে ভারতের ফটিকছড়ায় এস ফোর্স গঠিত হয়। অনতিদূরের মুকুন্দপুরের খবর তার কানে আগেই পৌছেছিল। তিনি নভেম্বরে মুকুন্দপুর শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। ইতমধ্যে ধর্মঘর যুদ্ধের বিপর্যয় শফিউল্লাহকে ভাবিয়ে তোলে। ততদিনে পাকিস্তানের ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি প্লাটুন ও রাজাকারদের সম্মিলনে মুকুন্দপুর প্রায় দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে। এরকম ফর্টিফাইড একটি দুর্গ আক্রমনের জন্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। অক্টোবরের বাকি সময় কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শফিউল্লা তার বাহিনীকে পরবর্তী অভিযানের জন্যে প্রস্তুত করে তোলেন। মূল আক্রমনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২ ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টকে। এই ইউনিটের অধিনায়ক মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল ও তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) মুকুন্দপুরের সবচেয়ে নিকটবর্তী মুক্তি বাহিনী ঘাঁটি বামুটিয়ার আধিনায়ক ২লে: সায়ীদ আহমেদকে ১৯ নভেম্বরের মধ্য মুকুন্দপুর দখলের নির্দেশ দেন। মুক্তি যুদ্ধের সময় কমিশন পাওয়া প্রথম ব্যাচের সেরা অফিসার সায়ীদ তার সতীর্থ ২লে: মনসুরুল ইসলাম মজুমদারের সাথে মাত্র কয়েকদিন আগে ২বেংগলে যোগ দিয়েছেন। চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতার কারনে অধীনস্থ সৈনিক এবং গণযোদ্ধাদের সাথে তাঁর বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। মুকুন্দপুর আক্রমণের দায়িত্ব তাঁর আত্ম বিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। শফিউল্লার নির্দেশনার আলোকে সায়ীদ তাঁর পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেন। সায়ীদের কোম্পানি ছাড়াও ২য় ইষ্টবেংগলের আরও ২টি কোম্পানি এবং ভারতীয় ১৮ রাজপুত রেজিমেন্টকে মুকুন্দপুর আক্রমণে গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুকুন্দপুরের দক্ষিণে কালাছড়ায় অবস্থান নিয়ে এই গ্রামটিকে দক্ষিণের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ২ ইষ্ট বেংগলকে। উত্তরে এ দায়িত্ব পায় ১৮ রাজপুত। তাদের অবস্থান নিতে বলা হয় জালাল পুর। মুকুন্দপুর রেল ষ্টেসনের পশ্চিমের উঁচু টিলার উপর শত্রু অবন্থানটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালি। প্রতিরক্ষার সামনের দিকে চোখা বাঁশের কন্চি(পান্জি) জনতার পেছনে নরঘাতি মাইন(Anti personel), এবং চারিদিকে হালকা ও ভারি মেশিন গান লাগিয়ে অবন্থানটিকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে তোলা হয়। শুধু পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে যায় অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত।নিশ্চিত অস্ত্রের লক্ষ্য এড়িয়ে শত্রুকে হতবাক করে দেবার জন্যে সায়ীদ শত্রুর পেছন দিক থেকে অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে আক্রমনের পরিকল্পনা করেন। ৯ নভেম্বর ভারতীয় ১৮ রাজপুতের অধিনায়ক লে: কর্ণেল র্ভামা, বামুটিয়া সাবসেক্টর কমান্ডার লে: সায়ীদের সহযোগিতায় অন্যান্য ভারতীয় অফিসার সহ বিস্তারিত রেকি সম্পন্ন করেন। ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লে:সায়ীদ আহমেদ শত্রু অবস্থানে সন্তর্পণে প্রবেশ করে ভারতীয় ১৮ রাজপুত রেজিমেন্টের মর্টার ফায়ারের ছত্র ছায়ায় পেছন থেকে আক্রমণ করে মুকুন্দপুর দখলের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সূর্যোদয়ের আগেই মুক্তিবাহিনী শক্রুর পশ্চাতে অনুপ্রবেশ করে নিজ নিজ অবস্থানে চলে যায়। লে: সায়ীদ, দক্ষিন দিক থেকে লে: মনসুরের প্লাটুনকে এবং উত্তর দিক থেকে সুবেদার মান্নাফের প্লাটুনকে আক্রমনের দায়িত্ব দিয়ে নিজে দুই প্লাটুনর মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে সামনা সামনি আক্রমণে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। সায়ীদের কোম্পানিটি ছিল নিয়মিত সৈনিকদের পাশাপাশি কিছু নিবেদিত প্রাণ গণযোদ্ধা নিয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে সেজামুরার রফিক, সতারপুরের তাজুল, মোজাম্মেল, এলু এবং মোতালেবের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। এছাড়া গোয়াল নগরের মেয়ে সায়রা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ প্রাণ বিপন্ন করে পাকিস্তানিদের অস্ত্র শস্ত্র এবং অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে লে:সায়ীদ আহমেদের কোম্পানিকে সহযোগিতা করে। কিন্তু দুপুরের পর লে: কর্ণেল ভার্মা ওয়্যারলেসে জানান উত্তর দিক থেকে মেজর আব্রাহাম আক্রমন সূচনা করবেন। ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততায় মুক্তবাহিনী সম্পূর্ণ হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়ে। পাকবাহিনীর উপর প্রতিশোধ স্পৃহা তাদের আবেগ কে Fদ্ধ শক্তিতে পরিণত করেছিল। কাজেই এই যুদ্ধে বিজয়ী কিম্বা শহীদ হবার আকাঙ্খা পরিকল্পনার এ আকষ্মিক পরিবর্তনে কিছুটা হলেও ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। আক্রমণ যথা সময়ে সূচিত হয়। মেজর আব্রাহাম এবং শত্রু অবস্থানের মাঝামাঝি এলাকায় একটি টিলা ছিল। রেকির সময় বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেওয়ায় আক্রমনের সময় এই টিলাটিই হয়ে ওঠে বড় বাঁধা। টিলার কারনে আব্রাহামের আক্রমন গতিহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এই টিলার আড় নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ১৮ রাজপুতের কোম্পানিটিকে বিপদে ফেলে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির মুখে আব্রাহামের ১৮ রাজপুত অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। তবে লে: সায়ীদের কোম্পানির খাকি ইউনিফর্মে বিভ্রান্ত হয়ে আব্রাহামের সৈন্যরা তাদের উপর গুলি ছোড়া শুরু করে। ১৮ রাজপুতের হতাশা জনক পরিনতি লক্ষ করে মুক্তি বাহিনী আর কালক্ষেপন না করে সমস্ত শক্তি নিয়ে হানাদারদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রত্যয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায় শত্রু। প্রায় অবরুদ্ধ ১৮ রাজপুতের কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় প্রতিকুল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধে ২৮/২৯ জন পাকিস্তানি সৈনিক ও কিছু সংখ্যক ইপিসিএএফ সদস্য বন্দী হয়। এই সফল অভিযানের জন্যে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত লে: সায়ীদ অবশ্য এ বিজয়কে তার একার কৃতিত্ব হিসাবে দেখেন না। সায়ীদের ভাষায় ন্বল্প প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গণযোদ্ধারা ই ছিল বিজয়ের প্রধান স্থপতি। ভারত সীমান্তের কাছে ব্রাþণবাড়িয়া জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম মুকুন্দপুর। গ্রামটি বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মত সমতল নয়। ছোট ছোট টিলা, ছড়ানো ছিটানো ঝোপ ঝাড় আর চড়াই উৎরাইএর মাঝ নিচু জলাভূমি এলাকাটিকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছে। রেলপথে আখাউড়া থেকে সিলেট যাবার সময় আজমপুর রেলষ্টেশন পেরিয়ে সিংগারবিল, আর তারপরেই ছোট্ট ষ্টেশন মুকুন্দপুর। ভারত সীমান্তের ৫০০ গজ পশ্চিমের এই রেল ষ্টেসনটি মুকুন্দপুরের নিস্তরঙ্গ জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। মাঝে মাঝে দু একটি লোকাল ট্রেন এখানে থেমে মুকুন্দপুরের নিস্তব্ধতায় নাড়া দিয়ে যায়। ১৯৭১ এর মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি দল বিনা বাঁধায় এখানে পৌছে সিলেট আখাউড়া রেলপথ নিয়ন্ত্রনের লক্ষে রেল ষ্টেশনের পূর্ব দিকে অপেক্ষাকৃত উঁচু একটি টিলায় ঘাঁটি গাড়ে। ধীরে ধীরে মুকুন্দপুর বর্ডার আউটপোষ্ট ঘিরে পাকিস্তানিদের একটি শক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে ওঠে।পাকিস্তানি বাহিনীর মূল কাজ রেলপথ নিয়ন্ত্রন হলেও স্বভাবগত কারনেই তারা এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরবর্তী পাঁচ মাস এইগ্রাম রাজাকার আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিনত হয়। গ্রামবাসী হয়ে পড়ে শত্রুর হাতে অবরুদ্ধ। অক্টোবরে লে: কর্ণেল শফিউল্লার (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল ও বাংলাদেশের ২য় সেনাপ্রধান; প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল আব্দুর রব) নেতৃত্বে ভারতের ফটিকছড়ায় এস ফোর্স গঠিত হয়। অনতিদূরের মুকুন্দপুরের খবর তার কানে আগেই পৌছেছিল। তিনি নভেম্বরে মুকুন্দপুর শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। ইতমধ্যে ধর্মঘর যুদ্ধের বিপর্যয় শফিউল্লাহকে ভাবিয়ে তোলে। ততদিনে পাকিস্তানের ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি প্লাটুন ও রাজাকারদের সম্মিলনে মুকুন্দপুর প্রায় দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে। এরকম ফর্টিফাইড একটি দুর্গ আক্রমনের জন্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। অক্টোবরের বাকি সময় কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শফিউল্লা তার বাহিনীকে পরবর্তী অভিযানের জন্যে প্রস্তুত করে তোলেন। মূল আক্রমনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২ ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টকে। এই ইউনিটের অধিনায়ক মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল ও তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) মুকুন্দপুরের সবচেয়ে নিকটবর্তী মুক্তি বাহিনী ঘাঁটি বামুটিয়ার আধিনায়ক ২লে: সায়ীদ আহমেদকে ১৯ নভেম্বরের মধ্য মুকুন্দপুর দখলের নির্দেশ দেন। মুক্তি যুদ্ধের সময় কমিশন পাওয়া প্রথম ব্যাচের সেরা অফিসার সায়ীদ তার সতীর্থ ২লে: মনসুরুল ইসলাম মজুমদারের সাথে মাত্র কয়েকদিন আগে ২বেংগলে যোগ দিয়েছেন। চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতার কারনে অধীনস্থ সৈনিক এবং গণযোদ্ধাদের সাথে তাঁর বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। মুকুন্দপুর আক্রমণের দায়িত্ব তাঁর আত্ম বিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। শফিউল্লার নির্দেশনার আলোকে সায়ীদ তাঁর পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেন। সায়ীদের কোম্পানি ছাড়াও ২য় ইষ্টবেংগলের আরও ২টি কোম্পানি এবং ভারতীয় ১৮ রাজপুত রেজিমেন্টকে মুকুন্দপুর আক্রমণে গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুকুন্দপুরের দক্ষিণে কালাছড়ায় অবস্থান নিয়ে এই গ্রামটিকে দক্ষিণের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ২ ইষ্ট বেংগলকে। উত্তরে এ দায়িত্ব পায় ১৮ রাজপুত। তাদের অবস্থান নিতে বলা হয় জালাল পুর। মুকুন্দপুর রেল ষ্টেসনের পশ্চিমের উঁচু টিলার উপর শত্রু অবন্থানটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালি। প্রতিরক্ষার সামনের দিকে চোখা বাঁশের কন্চি(পান্জি) জনতার পেছনে নরঘাতি মাইন(Anti personel), এবং চারিদিকে হালকা ও ভারি মেশিন গান লাগিয়ে অবন্থানটিকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে তোলা হয়। শুধু পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে যায় অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত।নিশ্চিত অস্ত্রের লক্ষ্য এড়িয়ে শত্রুকে হতবাক করে দেবার জন্যে সায়ীদ শত্রুর পেছন দিক থেকে অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে আক্রমনের পরিকল্পনা করেন। ৯ নভেম্বর ভারতীয় ১৮ রাজপুতের অধিনায়ক লে: কর্ণেল র্ভামা, বামুটিয়া সাবসেক্টর কমান্ডার লে: সায়ীদের সহযোগিতায় অন্যান্য ভারতীয় অফিসার সহ বিস্তারিত রেকি সম্পন্ন করেন। ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লে:সায়ীদ আহমেদ শত্রু অবস্থানে সন্তর্পণে প্রবেশ করে ভারতীয় ১৮ রাজপুত রেজিমেন্টের মর্টার ফায়ারের ছত্র ছায়ায় পেছন থেকে আক্রমণ করে মুকুন্দপুর দখলের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সূর্যোদয়ের আগেই মুক্তিবাহিনী শক্রুর পশ্চাতে অনুপ্রবেশ করে নিজ নিজ অবস্থানে চলে যায়। লে: সায়ীদ, দক্ষিন দিক থেকে লে: মনসুরের প্লাটুনকে এবং উত্তর দিক থেকে সুবেদার মান্নাফের প্লাটুনকে আক্রমনের দায়িত্ব দিয়ে নিজে দুই প্লাটুনর মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে সামনা সামনি আক্রমণে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। সায়ীদের কোম্পানিটি ছিল নিয়মিত সৈনিকদের পাশাপাশি কিছু নিবেদিত প্রাণ গণযোদ্ধা নিয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে সেজামুরার রফিক, সতারপুরের তাজুল, মোজাম্মেল, এলু এবং মোতালেবের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। এছাড়া গোয়াল নগরের মেয়ে সায়রা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ প্রাণ বিপন্ন করে পাকিস্তানিদের অস্ত্র শস্ত্র এবং অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে লে:সায়ীদ আহমেদের কোম্পানিকে সহযোগিতা করে। কিন্তু দুপুরের পর লে: কর্ণেল ভার্মা ওয়্যারলেসে জানান উত্তর দিক থেকে মেজর আব্রাহাম আক্রমন সূচনা করবেন। ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততায় মুক্তবাহিনী সম্পূর্ণ হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়ে। পাকবাহিনীর উপর প্রতিশোধ স্পৃহা তাদের আবেগ কে Fদ্ধ শক্তিতে পরিণত করেছিল। কাজেই এই যুদ্ধে বিজয়ী কিম্বা শহীদ হবার আকাঙ্খা পরিকল্পনার এ আকষ্মিক পরিবর্তনে কিছুটা হলেও ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। আক্রমণ যথা সময়ে সূচিত হয়। মেজর আব্রাহাম এবং শত্রু অবস্থানের মাঝামাঝি এলাকায় একটি টিলা ছিল। রেকির সময় বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেওয়ায় আক্রমনের সময় এই টিলাটিই হয়ে ওঠে বড় বাঁধা। টিলার কারনে আব্রাহামের আক্রমন গতিহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এই টিলার আড় নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ১৮ রাজপুতের কোম্পানিটিকে বিপদে ফেলে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির মুখে আব্রাহামের ১৮ রাজপুত অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। তবে লে: সায়ীদের কোম্পানির খাকি ইউনিফর্মে বিভ্রান্ত হয়ে আব্রাহামের সৈন্যরা তাদের উপর গুলি ছোড়া শুরু করে। ১৮ রাজপুতের হতাশা জনক পরিনতি লক্ষ করে মুক্তি বাহিনী আর কালক্ষেপন না করে সমস্ত শক্তি নিয়ে হানাদারদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রত্যয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায় শত্রু। প্রায় অবরুদ্ধ ১৮ রাজপুতের কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় প্রতিকুল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধে ২৮/২৯ জন পাকিস্তানি সৈনিক ও কিছু সংখ্যক ইপিসিএএফ সদস্য বন্দী হয়। এই সফল অভিযানের জন্যে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত লে: সায়ীদ অবশ্য এ বিজয়কে তার একার কৃতিত্ব হিসাবে দেখেন না। সায়ীদের ভাষায় ন্বল্প প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গণযোদ্ধারা ই ছিল বিজয়ের প্রধান স্থপতি। Related posts:সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন...পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনারের গাড়িতে বাসের ধাক্কানা ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় Post Views: ১৭১ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: