নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামীকে মনোনয়ন

প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত (চার্জশিটভুক্ত) দুই আসামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা হলেন নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক মো. আবুল হাশেম এবং হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি। এ দুজন নাসিরনগর উপজেলা সদরের গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর গত মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই দুজনসহ নাসিরনগরের অন্য ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এদিকে চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মনোনয়ন দেওয়ায় নাসিরনগর উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামিরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। তারা বলছেন, তাদের আপত্তি সত্ত্বেও ওই দুজন কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।

জানা গেছে, নাসিরনগরের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক যুবক ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে এমন অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকার কিছু মানুষ। এ ঘটনার পরদিন এলাকায় মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে হেফাজত সমর্থক ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যানারে আলাদা দুটি প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ওইসব সমাবেশে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা নাসিরনগর সদরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলায় চালায়। পরবর্তীকালে ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও হিন্দুদের একাধিক বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় আটটি মামলা হয়।এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলায় নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
এবার নির্বাচনী আমেজ শুরু হওয়ার পর থেকেই হিন্দুপল্লীতে হামলার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি আবুল হাশেম ও দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি মনোনয়ন পাবেন না বলেই এলাকায় জোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রকাশিত মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় এ দুই চেয়ারম্যানের নাম দেখে হতবাক হয়েছেন উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাফিউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না। ’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও ওই দুজন কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা বাছাই কমিটি থেকে তাদের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছিলাম। এরপরও এটি হয়েছে। মনে হয় তাদের মামলার বিষয়টি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উত্থাপিত হয়নি অথবা কেউ গোপন করেছে। কেন্দ্রের দৃষ্টিতে গেলে হয়তো এটি পরিবর্তন হবে। ’
চার্জশিটভুক্ত দুই আসামির মনোনয়নের বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের আদর্শ পরিপন্থী বলে মনে করছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই দুজন চেয়ারম্যানের বিষয়ে আমার সুপারিশ ছিল না। তারা মনোনয়ন পাওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। তাদের এ মনোনয়ন দেওয়াটা আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী বলে আমি মনে করছি। ’
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিতর্কিত দুজনের মধ্যে একজন হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলার সময় আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। এরপরও আমি আসামি হয়ে কারাভোগ করেছি। কিন্তু আদালত এখনো আমাকে দোষীসাব্যস্ত করেনি। আওয়ামী লীগের সম্মান-সুনাম নষ্ট হয় এমন কোনো কাজেই আমি জড়িত নই। সফলতার সঙ্গে পাঁচ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ’