ত্রিপুরায় কমরেড গৌতম দাশের স্মরণসভা

প্রকাশিত: ১১:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

বিজয়নগর নিউজ ।।  বাধার প্রাচীর অতিক্রম করে আরও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে। কমরেড গৌতম দাশের স্মরণসভায় এ আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার সহ নেতৃবৃন্দ। সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির ডাকে মঙ্গলবার আগরতলা রবীন্দ্রভবনে স্মরণসভা হয়। সভায় মানিক সরকার বলেন, রাজ্যে বিজেপি যতই ফ্যাসিস্তসুলভ আক্রমণ করুক বিজেপি’র পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন। ওরাও মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি, কাজের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা দেখানো সম্ভব হবে। স্মরণসভা এছাড়াও স্মৃতিচারণা করেন সিপিআই (এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানিক দে, রাজ্য কমিটির সদস্য ঝরনা দাস, সিপিআই নেতা যুধিষ্ঠির দাস, আরএসপি নেতা দীপক দেব, সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা জয়ন্ত দত্ত, কমরেড গৌতম দাশের কন্যা স্বাগতা দাশ। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঘোর দেববর্মা সভাপতিত্ব করেন স্মরণসভায়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী। প্রত্যেকেই কমরেড গৌতম দাশের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান কমরেড গৌতম দাশের স্ত্রী তপতী সেন। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কমরেড গৌতম দাশের রাজনৈতিক জীবন ৫০-৫২ বছরের। মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে আশ্রয় করে জীবনের বৃহত্তম অংশ জনকল্যাণে নিজেকে উৎসারিত করেছেন। ব্যক্তি স্বার্থের চিন্তা করেননি। তিনি বলেন, কমরেড গৌতম দাশের প্রয়াণে নিঃসন্দেহে সিপিআই(এম) সহ ত্রিপুরার বামপন্থী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বড়সড় ক্ষতি। এটা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। তার স্ত্রী, কন্যার ক্ষতির পরিমাণ করার ক্ষমতা আমার নেই। মানিক সরকার বলেন, গত ৪২-৪৩ মাস ধরে রাজ্যে একদলীয় ফ্যাসিস্তসুলভ স্বৈর শাসন কায়েম করার অবিরাম প্রচেষ্টা, মানুষের সুখ, দুঃখে বিরোধী দলকে কাজ করতে না দেওয়ার প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরুর দিন থেকে গণতন্ত্রের আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করার কথা তুলে ধরেন বিরোধী দলনেতা। বলেন, শাসক দলের ভাবনা, চিন্তা, কর্মসূচিই প্রথম ও শেষ কথা, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এধরণের আক্রমণ সংঘটিত করে চলেছে। অর্থনৈতিক আক্রমণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গরিব, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত নানা পেশার মানুষ নির্বিশেষে ভীষণভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। গ্রাম নগরে দিন এনে দিন খাওয়া যারা সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় তারা। অনাহার-অর্ধাহার বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যু। সন্তান বিক্রি, রাজ্যান্তরী হও‌য়া, সেখানে বেঘোরে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ৬-৭ দশকের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে গ‍‌ড়ে ওঠা উপজাতি-অনুপজাতি অংশের মানুষের একতাকে ভাঙার জন্য নতুন করে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে স্মরণসভায় সর্তক করেন বিরোধী দলনেতা। বাধার প্রাচীর অতিক্রম করে আরও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার প্রচেষ্টা নিতে হবে। এ আহ্বান জানিয়ে স্মরণসভায় মানিক সরকার বলেন, নিজেদের বৃত্তের মধ্যে, আশপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে শুধু বিচরণ করলে চলবে না। আরও বহু মানুষ আছেন যারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনাদের নীতি, কর্মসূচি, আন্দোলনের বিরোধিতায় অভ্যস্ত ছিলেন, সরকার থেকে আপনাদের উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছিলেন। তারাও জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নতুনভাবে সঞ্জীবিত হচ্ছেন। উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তাদের কাছে যেতে হবে। শুধু ব্যক্তিগত আলাপচারিতা নয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, শান্তি পুনঃস্থাপন, ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হতে সাহায্য করা, বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে বাধ্য করা, পুলিশকে দলীয় সংগঠনের মতো ব্যবহার করার অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। এর বাইরে মানুষের জীবনের দৈনন্দিন জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সুরাহার প্রশ্নে তাদের দাবিকে স্লোগানের চেহারা নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। মানিক সরকার বলেন, এই কাজগুলি আপনা আপনি হবে না। তার জন্য সংগঠন চাই। সংগঠন ছাড়া সংগ্রাম হবে না। সংগ্রাম বাদ দিয়ে সংগঠন কী করে তৈরি হবে? দুটি বিষয়ের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে মতাদর্শগত, রাজনৈতিক চেতনার উপর ভিত্তি করে যাতে গণভিত্তি তৈরি হয়, সেই ভাবনায় নি‍‌জেদের সঞ্জীবিত করে সংগঠনকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে তরুণ প্রজন্ম, যুবশক্তির দিকে নজর দিতে হবে। এদের মধ্যে যারা সম্ভাবনাময় তাদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গিতে, শ্রেণিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে সাহায্য করতে হবে। বামপন্থী শক্তিকে সংহত করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন মানিক সরকার। বলেন, এই মঞ্চে যদি নতুন শক্তির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয় সেটাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে আমাদের। সভায় সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, কমরেড গৌতম দাশ এমন সময়ে চলে গেছেন, যখন আমাদের দেশের রাজনী‍‌তি একটা চরম বিপর্যয়ের মুখে। সাম্প্রদায়িক, কর্পোরেটের পদলেহনকারী একটা দল আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষমতায়। স্বাধীনোত্তর গত সাড়ে সাত দশকে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেটুকুই জনহিতকর কাজ অর্জিত হয়েছে সেটুকুই ভেঙেচুরে চুরমার করে দিতে উদ্যত হয়েছে এই দল। তারাই আজকে রাজ্যে শাসন চালাচ্ছে। গত ৪২ মাস ধরে এখানে একটা স্বৈরশাসন, আধা ফ্যাসিস্ত রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদের পার্টিসহ এরাজ্যের ৩৮ লক্ষ মানুষ একটা চরম আক্রমণের মুখে। আমাদের পার্টি রক্তাক্ত। এই সময়েতে কমরেড গৌতম দাশের প্রয়াণ একটা বিরাট শূন্যতা। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা তাঁর স্মরণসভায় মিলিত হয়ে‌ছি। আমরা রক্ত মাংসের কমরেড গৌতম দাশকে ফিরে পাব না নিশ্চয়ই। কিন্তু তার বিগত ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবনে পার্টি এবং আমাদের রাজ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর যে অবদান এবং আজ‍‌কের দিনে এই আধা ফ্যাসিস্ত, অগণতান্ত্রিক রাজত্ব। এর থেকে ত্রিপুরাকে মুক্ত করে আবার একটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলি যাতে আমরা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারি, আজকের স্মরণসভায় তার জন্য প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।