ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবির ঘটনায় মোকতাদির চৌধুরী এমপির শোক

প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২১

বিজয়নগর নিউজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

আজ শনিবার (২৮ আগস্ট) এক শোকবার্তায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে চিকিৎসাধীন মোকতাদির চৌধুরী এমপি দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন। এছাড়া নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই মোকতাদির চৌধুরী এমপি দুবাই থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। একইসঙ্গে তিনি দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনাও দেন।

উল্লেখ্য, বালুবাহী ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আরেক ট্রলারের ধাক্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ আছেন আরও অনেকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বিকেলে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে জেলা সদরের উদ্দেশে যাত্রীবাহী ট্রলারটি রওনা হয়েছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে তিতাস নদ-সংলগ্ন লইছকা বিলে আসার পর দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলা বেগম, দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮) ও চিলোকুট গ্রামের আবদুল্লাহ মিয়ার শিশুকন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগরের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) এবং তাঁর মেয়ে মুন্নি (১০), আবদুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২), বাদেহাড়িয়ার কামাল মিয়ার শিশুকন্যা মাহিদা আক্তার (৬), মনিপুরের মৃত আবদুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)। বাকি তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চম্পকনগর ঘাট থেকে ১৫০ থেকে ২০০ জন যাত্রী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উদ্দেশে রওনা করে নৌকাটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিতাস নদের উপজেলার লইছকা বিলে বালুবাহী একটি স্টিলের নৌকার সঙ্গে যাত্রীবাহী নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সে সময় যাত্রীবাহী নৌকাটির পেছনে আরেকটি বালুবাহী নৌকা ছিল। এটিও যাত্রীবাহী নৌকাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী নৌকাটি উল্টে ডুবে যায়। সামনে থেকে ধাক্কা দেওয়া নৌকাটি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। নৌকার যাত্রীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধারকাজে নামেন। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

পরে সদর থানার পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। রাত ১২টা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে পাশের শেখ হাসিনা সড়কে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করছেন।

নৌকায় থাকা ১০ থেকে ১৫ জন বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় চম্পকনগর থেকে নৌকাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চম্পকনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নৌপথে এটি ছিল সর্বশেষ নৌকা। নৌকাটি আকারে ছোট ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েছিলেন নৌকার মাঝি। যেখানে নৌকায় যাত্রীদের জুতা রাখা হয়, অতিরিক্ত যাত্রীর জন্য সেখানে যাত্রীরা বসেছিলেন। মনিপুর থেকেও যাত্রী তোলা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে এবং সামনে থেকে ধাক্কা দেওয়ায় নৌকাটি ডুবে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান গতকাল রাত ১২টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নৌদুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমীনকে প্রধান করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরি দলের চারজন সদস্য কর্মস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন।