শোকের মাস হোক আত্মোপলব্ধির উৎস বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৬:১২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২১ আগস্ট মাস আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। পৃথিবীর কোনো জাতির ইতিহাসে আমাদের মতো শোকাবহ আগস্ট আছে কিনা জানা নেই। আমাদের জাতীয় জীবনে আগস্ট দুর্বিষহ, গভীরতম শোকের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণীসহ পরিবারের প্রায় সকলকেই ঘাতক চক্র নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। কতখানি বর্বর ও নৃশংস হলে শিশু রাসেলকেও তারা বাঁচতে দেয়নি। আমরা শুরুতেই বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অকাল প্রয়াণের নিন্দা জানাই, ঘৃণা জানাই। একই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধায় অবনতচিত্তে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে স্মরণ করি। আগস্ট মানে বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালি। বীর বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। এমনকি পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা দেশে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। সেদিন ছিল ১৫ আগস্ট। মাসটি এলেই তাই মনে পড়ে যায়, সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের বেদনায় সৃষ্টি করে নতুন করে যন্ত্রণার। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি দীর্ঘ কয়েক যুগ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রক্তের ভেতরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি শেখ হাসিনার। রাজনীতিতে নামার অভিপ্রায় তার ছিল না। পিতা জাতির মুক্তিদাতা। স্বাধীনতার স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার কন্যা। এ পরিচয়ই তো অনেক বড়। এ পরিচয়েই তারা পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। শোকের সাগর মাড়িয়ে তাকেই কিনা হাল ধরতে হলো ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণের। আগস্ট মাস এলেই জননেত্রী শেখ হাসিনা এক দুঃসহ স্মৃতির গহিনে চলে যান। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। কারণ তারা দেশে ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাকের অপার করুণা তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল বিধায় দেশ পরিচালনায় গর্বের সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই জীবনের সার্থকতা ভোগে নয়, ত্যাগে। আমাদের সকলকেই একদিন চলে যেতে হবে, চিরবিদায় নিতে হবে সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে। তবে সেই মৃত্যু যেন হয় শহীদের, সেই মৃত্যু যেন হয় মানবতার জয়গানে, মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকা এক প্রাণের। মরণের পরেও যেন মানুষ দোয়া করে, শুকরিয়া আদায় করে এমন কাজ বেশি বেশি করতে পারাটাই হলো সফল জীবন। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিঃসন্দেহে সার্থক জীবন। সে কারণেই কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা, গৌরী যমুনা বহমান। ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা, রক্ত গঙ্গা বহমান-নাই নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান। এ বছরটি আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। এটি ‘মুজিববর্ষ’। মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই বছরটি আমাদের উৎসব আনন্দে মাতোয়ারা থাকার বছর হলেও মহামারী করোনা সংক্রমণ বিস্তৃতির প্রেক্ষাপটে আমাদের সকলকে এক নতুন জীবনধারা বেছে নিতে হয়েছে, যেখানে উৎসব হয়ে গেছে গৌণ, আয়োজন সীমাবদ্ধ হয়েছে আয়তনে। করোনা মহামারীর এই প্রেক্ষাপটে তাই মুজিববর্ষ উদযাপনের মতোই শোকদিবস পালনেও আমাদের নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে এবং শোকাবহ আগস্ট মাসকে স্মরণ করার জন্য নতুন কিছু ভাবা প্রয়োজন। মোটেও বড় বড় কোন পরিকল্পনা নয়, ছোট ছোট সব পরিবর্তন, সামান্য কিছু করণীয় বা পদক্ষেপ হাতে নেয়া দরকার। সবাই মিলে একটু একটু বদলালে একদিন দেশটাই বদলে যাবে। আমাদের অনেক কিছুই আছে যা আমরা চাইলেই বদলাতে বা পরিবর্তন করতে পারি। যেমন ধানমণ্ডি ৩২নং রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, যেটি এখন স্মৃতি জাদুঘর সেই জাদুঘরের সামনে থাকা সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ভে লেখা কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতাটি নির্ভুলভাবে লেখা রয়েছে কি না তা চেক করা এবং ভুল থাকলে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া। একটি জাতীয় পত্রিকায় লেখক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান তার এক লেখায় দাবি করেছেন, ‘যতদিন-ততদিন’ নয়, এটা হবে ‘যতকাল-ততকাল’, ঠিক একইভাবে পদ্মার পরে মেঘনা নয়, হবে যমুনার নাম। আমি জানি না কোনটি সঠিক। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই বাড়ি ও এই কবিতা যেহেতু অবিচ্ছেদ্য, তাই কবিতাটির শুদ্ধ পাঠ থাকা প্রয়োজন। আরেকটি ছোট কাজ যা আমাদের করা উচিত তাহলো- বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি, নাম ইত্যাদি ব্যবহারে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং দলের সকল স্তরে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করা। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আঠারোজন সেই রাতে শহীদ হয়েছিলেন। তাদের ছবি তো দূরের কথা, নামটিও থাকে না। এসব অসুস্থ কারবার বাঙালির আর ভালো লাগে না। আসুন, এসব বাদ দেই। অন্তত নিজের সন্তানদের চেনাই কে ছিলেন সেই দীর্ঘকায় বাঙালি? কি তার পরিচয়? কেমন ছিল তার জীবন? সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস পালিত হবে। গতানুগতিকতার বাইরে এসে কিভাবে এই দিবসগুলো পালন করা যায় তা ভাবাটা হবে আমাদের আরেকটি ছোট উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু আজীবন জনগণের ক্ষমতায়ন, মানবাধিকারের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি, গণতন্ত্র, শান্তি ও সহাবস্থানের পথে থেকেছেন। ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার সেই আদর্শ ও সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন যে মুছে ফেলতে পারেনি সেটা প্রমাণ দিতে হবে নিজেদের ছোট ছোট কাজ দিয়ে। যেমন সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে একটি করে তাল বা নারিকেল বা নিম গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শোককে শক্তিতে পরিণত করা হোক তাল গাছের উচ্চতায়, নারিকেলের সমৃদ্ধিতে এবং নিম এর বিস্ময়কর জাদকুরী গুণে! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁক-ঘোরানো এক সিংহপুরুষ। বাঙালি জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে বোধকরি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোনো জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর এক তেজোদীপ্ত ভাষণেই উদ্বুদ্ধ গোটা জাতি বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বভাবনেতা। কি বাল্যে কি কৈশোরে কি মত্ত যৌবনে- সবখানেই ছিলেন তিনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিভাজ্য সত্তা। তাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়েই শোকাবহ আগস্টের সূচনা। এই আগস্ট মাসেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল ২০০৪ সালে। এবার জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য সংগঠন ম্যাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এবং মানুষের নিরাপত্তাজনিত কারণে এই মাসটি অতি সতর্কতা অবলম্বন করে উদযাপন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ মহলের। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনিয়ম ও দুর্নীতির ফুটো দিয়েই বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘরে কালসাপেরা প্রবেশ করেছিল। ওই কেউটেদের প্রজন্ম এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ভুল সবারই হয়। দোষে-গুণেই মানুষ। তাই রাজনীতিবিদদেরও ভুল হতেই পারে। বঙ্গবন্ধু প্রায়শ বলতেন, বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, আর আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাও এটা যে, আমি তাদের অনেক বেশি ভালোবাসি। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর এই গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি আজীবন কাজ করেছেন। তিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। তা পূরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। খুনীরা এই গণনেতাকে হত্যা করলেও তার নাম মুছে ফেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন এবং থাকবেন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সাধারণ গণমানুষের অন্তরে। Related posts:বিজয়নগরে ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে কর্মহীন ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণডাকসুর ইতিহাসে একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম পাচ্ছেন একুশে পদকশারদীয় দুর্গাপূজায় মৃণাল চৌধুরী লিটনের শুভেচ্ছা Post Views: ২৩২ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: