কসবায় পুলিশের এসআইয়ের ছেড়ে দেওয়া সেই ছিনতাইকারী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৭:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২১

অবশেষে পুলিশের ছেড়ে দেওয়া সিএনজি চালকবেশী ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য সুমন মিয়া (৩০)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার দুপুরে তাকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরআগে শনিবার বিকেলে ছিনতাইকারী সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুমন জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ এলাকার সৈয়দ মিয়ার ছেলে।

এই ঘটনায় অভিযোগকারী কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার কল্যাণ সহকারী মালেকা বেগমের দায়েরকৃত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ৩১মে সকালে জেলা শহর থেকে বাসযোগে কর্মস্থলে আসার পথে তিনলাখপীর নামক স্থানে বাসের জ্যামে পড়লে অফিসে মিটিং থাকায় দ্রুত হেটে কসবা আসার পথে সিএনজি চালক সুমন মিয়া বিকল্প পথে তাকে কসবায় নিয়ে আসবে বলে অনুরোধ করে তার সিএনজিতে উঠায়। সিএনজিতে যাত্রীবেশী এক মহিলা ও এক পুরুষও আগে থেকেই বসা ছিলো। সিএনজি দিয়ে একটু দুরে গেলেই পাশে বসা অপর দুজন তাঁকে মারধোর করে জোরপূর্বক গলার চেইন, কানের দুল ও ব্যাগে থাকা নগদ টাকা নিয়ে তাঁকে সিএনজি থেকে নামিয়ে দিয়ে ছিনতাইকারীরা সিএনজিসহ পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর উপজেলার খাড়েরা বাসস্ট্যান্ডে আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের কাছে আটক হয় সিএনজি চালক ছিনতাইকারী সুমন মিয়া। তার সংগে থাকা সেই নারী ও পুরুষ পালিয়ে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে খাড়েরা ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার কল্যান সহকারী ১৫দিন আগে ছিনতাইয়ের শিকার মালেকা বেগম এসে তাকে চিনতে পারে। এসময় সিএনজি চালক সুমন মিয়াকে স্থানীয়রা আটক করে তার পরিবারের লোকজনদের খবর দেয়। তার পরিবারের লোকজন ও সহযোগী ছিনতাইকারীরা মালেকা বেগমের ছিনতাইকৃত অলংকার ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৯৯৯ খবর দেয় যে খাড়েরা বাসষ্ট্যান্ডে একজন লোককে অন্যায়ভাবে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।

কসবা থানা উপপরিদর্শক (এসআই) নুরে আলম কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বিস্তারিত জেনে তাকে মামলায় আটক করে কোর্টে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং মালেকা বেগমের ছিনতাইকৃত অলংকার উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে ছিনতাইকারী সুমনকে থানায় নিয়ে আসার পথে অজ্ঞাত স্থান থেকে ছেড়ে দেয়। পরদিন মালেকা বেগম থানায় এসে জানতে পারে সুমন মিয়া নামক কোনো ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমানের মধ্যস্থতায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনার জন্য এসআই নুরে আলমকে সময় দেয়া হয়। পরে কসবা থানা ওসি বিষয়টি জানার পর ওসি নুরে আলমকে নির্দেশ দেয় যে কোনো মুল্যে ছেড়ে দেয়া ছিনতাইকারীকে থানায় হাজির করতে। তিনি ছিনতাইয়ের শিকার মালেকা বেগমকে থানায় মামলা করতে বলেন। ওইদিনই মালেকা বেগম সিএনজি চালক সুমন মিয়া ও তার অজ্ঞাত দুই সহযোগীকে আসামী করে মামলা করেন।

কসবা থানা সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে এসআই নুরে আলম প্রশিক্ষনে আছেন। এ ঘটনার পর মালেকা বেগম ওই সিএনজি চালককে গত ৩১ জুলাই বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিএনজি ষ্টেশনে দেখতে পেয়ে কসবা থানা ওসিকে অবহিত করেন। কসবা থানা ওসি আলমগীর ভূইয়া তাৎক্ষণিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে।

মামলার বাদী মালেকা বেগম বলেন, গত শনিবার (৩১জুলাই) কর্মস্থল থেকে জেলা শহরের বাসায় যাওয়ার পথে তিনি ছিনতাইকারী সুমনকে দেখে চিনে ফেলেন এবং কসবা থানা ওসিকে বলে তাকে গ্রেপ্তার করান। এসআই নুরে আলম বার বার আমার সংগে প্রতারনা করেছেন। আমিও সরকারী চাকুরী করি কিন্তু দারোগার কাছ থেকে কোনো প্রকার সহানুভূতি পাইনি। তাকে টাকা খেয়েই ছেড়ে দিয়েছিলো।

কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভূইয়া বলেন, গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারী সুমনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তার সহযোগীদের ধরতে এবং ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধার করতে বিজ্ঞ আদালতের নিকট ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এসআই নুরে আলমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।