বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই

প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২১

না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং। গত শুক্রবার (১৬ জুলাই) রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সায়মন ড্রিং স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাইমন ড্রিংয়ের একসময়ের সহকর্মী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি তিনি আর নেই।

এছাড়াও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক তুষার আব্দুল্লাহ। তারা দুজনই মরহুমের সাবেক সহকর্মী ছিলেন।

সায়মন ড্রিং একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের ভয়াবহতা ও নৃশংসতার শুরু থেকেই প্রতিবেদন করছিলেন। বাংলাদেশ থেকে তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছিল।

রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও বিবিসির হয়ে সাইমন ড্রিং দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে। পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার-১৯৭১। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে ২০১২ সালে সাইমন ড্রিংকে সম্মাননা দেয় সরকার।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মার্চের ৬ তারিখে কম্বোডিয়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন। সে সময় পাকিস্তানি জান্তা বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করলেও তিনি গোপনে থেকে যান। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হোটেলেই লুকিয়ে ছিলেন।

২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি মোটরভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। এরপর লেখেন ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন। যা গণহত্যার বিস্তারিত ওঠে আসে। আজ নজর কাড়ে বিশ্ববাসীর।

সাইমন ড্রিংয়ের জন্ম ইংল্যান্ডে, ১৯৪৫ সালে। তিনি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন ১৮ বছর বয়স থেকে। দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন নানা দেশের অসংখ্য সহমর্মী মানুষ। যুদ্ধের মাঠে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, শরণার্থীশিবিরে, প্রতিবাদে বা জনমত গঠনে কঠিন সেই সময়ে তারা ভূমিকা রেখেছেন। তাদের একজন সাইমন ড্রিং।