. “শুভ জন্মদিন”নির্মলেন্দু গুণ

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২১

পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামেই ব্যাপক পরিচিত। বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি এবং চিত্রশিল্পী। জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বারহাট্টা উপজেলার কাশবন গ্রামে। তাঁর ছেলেবেলা কাটে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায়। পিতা শুখেন্দু প্রকাশ গুণ ও মা বীণাপাণি।

কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা এই বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে একই শিরোনামে তানভীর মোকাম্মেল ‘হুলিয়া’ নামে একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

এছাড়াও তাঁর ‘স্বাধীনতা’ এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে নির্মলেন্দু ছোট। চার বছর বয়সে তার মাতৃ বিয়োগ হওয়ায় পরবর্তীতে পিতা সুখেন্দু প্রকাশ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন চারুবালাকে।

নতুন মার কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় তার। প্রথমে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। দুই বিষয়ে লেটারসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান ১৯৬২ সালে৷ ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’৷ এরপর আইএসসি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে৷ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন এখানে৷

নেত্রকোণায় ফিরে গিয়ে নির্মলেন্দু গুণ আবার ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও তার কবি বন্ধুদের কাছে আসার সুযোগ পান৷ নেত্রকোণার সুন্দর সাহিত্যিক পরিমন্ডলে তার দিন ভালোই কাটতে থাকে৷ একসময় এসে যায় আইএসসি পরীক্ষা৷ ১৯৬৪ সালের জুন মাসে আইএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের৷ পরবর্তীকালে পিতা চাইলেন ডাক্তারি পড়া৷ কিন্তু না, তিনি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে৷ ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ৷ হঠাত্‍ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায়৷ দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে যান গ্রামে৷ ঢাকার অবস্থার উন্নতি হলে ফিরে এসে দেখেন তার নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া৷ আর ভর্তি হওয়া হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ফিরে যান গ্রামে৷

আইএসসি তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন৷ মাসে ৪৫ টাকা। বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা৷ তখনকার দিনে অনেক টাকা৷
১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে বিএ পাস করেন তিনি যদিও তার সার্টিফিকেটটি আজও তোলেননি। ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় সক্রিয় ছিলেন।

এ আলোবাতিঘরের জন্য রইল আমাদের শুভকামনা ও অশেষ শ্রদ্ধা ।
—— মেসবা খান