আমি নাস্তিক নই আমি একজন মুসলিম: মোকতাদির চৌধুরী এমপি

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর বিজয়নগর -৩ সংসদ সদস্য যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এর সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজতের তাÐব নিয়ে আলোচনা হয়। তারই চুম্বকাংশ তুলে ধরা হয়েছে। হুজুর বলতে আমি একজনকেই চিনি আর তিনি হলেন আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। আমি নাস্তিক নই আমি একজন মুসলিম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের অজোপাড়া গাঁ থেকে পাস করে স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কলকাতা হাই কোর্টের বিচারক হয়েছিলেন। নাসিরনগরের অজোপাড়া গাঁ থেকে বেড়ে উঠা ব্যারিস্টার আবদুল রসুল উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলমান ব্যারিস্টার হয়েছিলেন। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি অগ্রবর্তির স্থান ছিল। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বিশ^ জয় করেছেন তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় ধরনের কোন মোল্লা মৌলভী বিশ^ জয় করেছে বলে আমার জানা নেই। সাড়ে তিন বছর বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাÐের পরে তারা বেশ তৎপর হয়ে উঠে এবং মাদরাসাগুলাকে কেন্দ্র করে বিশেষ করে অপশক্তি যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পক্ষে যারা ছিল তাদের বিরোধিতা করেছে এই মোল্লা মৌলভীরা। একাত্তরে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নিরপেক্ষতার ভান করে বিরোধিতা করেছে এটার অন্যতম প্রমাণ হলো মওলানা আজিজুল হক। একটা স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন আমরা নিরপেক্ষভাবে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম। তার মানে তারা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিল ১৯৭১ সালে। পঁচাত্তর পর্যন্ত তারা ঘাপটি মেরে বসেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের পরে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বড় উপাদান হলো নৌকাবাইচ, নৌকাবাইচ তারা বন্ধ করে দিল। পূর্ব পাকিস্তানের সময় দেখেছি আমাদের তিতাস নদীতে নৌকাবাইচ হয়েছে তখন নৌকাবাইচ হারাম এমন ফতোয়া কেউ দেয়নি। শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলার অবদান ছিল অনবদ্য এবং অবিস্মরণীয় আমাদের পুতুল নাচ, আমাদের যাত্রাপালা এগুলো ছিল খুবই সুখ্যাত। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের মধ্যে যা আছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল পথিকৃৎ অঞ্চল। তারা পুতুল নাচের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিল, তারা যাত্রাপালার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিল। মওলানা তাজুল ইসলাম তিনি কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করেছিলেন, তিনি দেশের পক্ষে লড়াই করেছিলেন ১৯৪৬ সালে পরাজিত হয়েছিলেন। মওলানা তাজুল ইসলাম জীবিত থাকাকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির একটা মেলা হতো শিক্ষা মেলা যেটাকে এসডিও মেলা বলা হতো। এসডিও মেলাতে যাত্রাপালা, পুতুল নাচসহ নানান আয়োজনই হতো পাকিস্তান আমলে। তখন তাজুল ইসলাম সাহেব বেঁচে ছিলেন, বড় হুজুর নামে পরিচিত সিরাজুল ইসলাম সাহেব তিনিও কিন্তু বেঁচে ছিলেন। তখন তাঁরা কেউ কিন্তু বাঁধা দেননি যাত্রাপালা বা পুতুল নাচের বিরুদ্ধে। এমনকি কনভেনশন মুসলিমলীগের নেতা ছিল, যারা ক্ষমতাসীন ছিল আয়ুব খানের আমলে তখন তারাও কিন্তু বাঁধা দেননি। এসডিওরা যা করেছে তারা তা সায় দিয়েছে। এইভাবে তারা দলটির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই লোকেরা যারা মাদরাসার শিক্ষক বলে পরিচিত এবং মাদরাসার ছাত্র বলে পরিচিত তারাও মাঠে নামার সুযোগ পেলো একছত্রভাবে। একটা সময় আওয়ামীলীগ করা খুবই বিপজ্জনক ছিল। অন্যান্য রাজনীতিক সংগঠন সুযোগই ছিলনা, মাঠেই আসতে পারতো না। জাসদ কিছুদিন দাপটের সাথে থাকলেও এই বিষয়ে তারা ততটা খেয়াল করেনি। কিন্তু আওয়ামীলীগ মাঠে দাঁড়াবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তখন আওয়ামীলীগের ভেতর থেকে ছোট্ট একটা অংশ মোল্লাদের সাথে মিশে গেল। তারা মনে করলো মোল্লারা সাপোর্ট দিলে তারা হয়তো ভাল অবস্থানে থাকবে। এইসব মিলিয়ে মোল্লারা একটা অপ্রতিরুদ্ধ শক্তি হয়ে গেল। ভাগ্যবশত হোক বা দুর্ভাগ্যবশত কারণে আমি এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত মোল্লাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার মত মাঠে কেউ ছিল না। আমি এমপি হওয়ার পর প্রথমেই চালু করলাম তিতাস নদীর নৌকাবাইচ। তখন দেখা গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ করা হয়েছে নৌকাবাইচ হারাম। আমি এই ড্যামো ভেঙে নৌকাবাইচ শুরু করার পর দেখা গেল লক্ষ লক্ষ লোক নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে হাজির হলো। প্রশাসন এ নৌকাবাইচের আয়োজন করলো। এইভাবে একটা নৌকাবাইচ আয়োজন করার পরে তাদের মেরুদÐ ভেঙে গেল। তারপর তারা বল্ল শহরে সঙ্গীতের আসর করা যাবে না। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন এসব বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিকতায় একসাথে কাজ করেছে। ২০১৩ সালে ৫ই মে মাদরাসাওয়ালারা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় তারা কিছু করলো কিন্তু স্থানীয়ভাবে তারা কিছু করার সাহস পেলো না। ২০১৬ সালে নাসিরনগরে তদানিন্তন আমাদের মন্ত্রী এডভোকেট সায়েদুল হক সাহেবের সাথে স্থানীয় মৌলভীদের একটা অংশের সংঘর্ষ হয়। তখনও আমি সে বিষয়ে জড়িত হইনি। টিএ রোডে অবস্থিত জেলা পরিষদ মার্কেটে একটি মোবাইলের দোকানে মাদরাসা ছাত্রদের তর্ক বিতর্কে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মাদরাসা পর্যন্ত গড়িয়েছে। তখন থানার ওসি ছিলেন একজন হিন্দু ভদ্রলোক আকুল চন্দ্র বিশ^াস এবং এএসপি ছিলেন আরেকজন ভদ্রলোক তাপস চন্দ্র। দুইজনই হিন্দু হওয়াতে মোল্লারা সাম্প্রদায়িক বলার একটা সুযোগ পেলো। তখন মোল্লারা গল্প জড়িয়ে দিল তারা ছাদে উঠে নাকি বলছে “এখন বল তোর আল্লাহ্ কোথায়”। আমি বিষয়টা জানতাম, আমি বলেছিলাম যে, মাদরাসা থেকে যে গুজব ছড়ানো হলো তা সত্য নয়, মাদরাসার মৌলভী সাহেবরা মিথ্যা কথা বলছে। মোল্লারা আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করলো এটা মিথ্যা কথা নয় এটা সত্য কথা। ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ হলে তখন সে ছাদে ছিল এবং ছাদে থেকে পিছুতে পিছুতে একসময় সে নিচে পড়ে গেলে একটা রড তার পিছন থেকে ঢুকে যায় এবং সে মারা যায়। মোল্লারা তখন সরকার বিরোধী কাজে লাগাবার জন্য এমন রটনা জড়িয়ে দেয়। কারণ তারাতো কখনো স্বাধীনতা বিশ^াস করেনা। এখন আমি চিৎকার করতে করতে বোঝাতে পেরেছি মোল্লারা জাতীয় সঙ্গীত গায় না, তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনা। তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করেনা, তারা বিজয় দিবস পালন করেনা। তারা সমাজের বিরুদ্ধে, তারা দেশের বিরুদ্ধে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে? তারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে? তারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে? তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে? ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোল্লারা আমাকে গালাগাল করেছে, তারা আমার বিরুদ্ধে বিষোধগার করেছে। ২০০১ সালের ৬ ফেব্রæয়ারিতে ৬জন মারা গিয়েছিল। ৬ ফেব্রæয়ারি ৬জন হত্যার বিষয়ে তারা কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু তারা বেশি কিছু বলেনা কারণ তখন শহরে কারফিও জারি ছিল, তারা কারফিও ভেঙে আইন অমান্য করে রাস্তায় নামার চেষ্টা করেছিল। তারা বলতে লাগলো ক্ষমতায় এ হত্যাকাÐের বিচার হবে। ব্র্যাক অফিস, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রশিকা অফিস তারা ভেঙে পুড়িয়ে তছনছ করে দিল। এইসবেরও কিন্তু বিচার হয়নি। বিচার হয়নি মূলত রাজনীতিক কারণে তারা আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠতে লাগলো। তাদের সুবিধা হলো ৮০% ছাত্রই মাদরাসায় থাকে এবং এই ৮০% ছাত্রই বাহির থেকে পড়াশোনা করতে আসা তাও আবার তাদের মধ্যে ছোটদের সংখ্যাই অনেক বেশি। এদের শিক্ষকরা অর্থাৎ ওস্তাদরা যা বলে তারা তাই বিশ^াস করে। সরকার তার জন্য জুডিশিয়াল তদন্ত করতে পারে। সরকার যদি জুডিশিয়াল তদন্ত করে তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো তারা ভিতরে ভিতরে একটা গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা যদি সরকার বিরোধী আন্দোলন করে বা এমপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাহলেতো রেললাইন উপড়ে ফেলার কথা নয়। বাংলাদেশের প্রাচীনতম ১৫৬ বছরের পুরাতন পৌরসভা পুড়িয়ে ফেলার কথা নয়, বিশ^জয়ী সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতি বিজড়িত পুড়িয়ে ফেলার কথা নয়। এগুলো আমার সম্পদ নয়, এগুলো জনগণের সম্পদ। তারা এই অশিক্ষা ও কুশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদেরকে আলেম বলে দাবী করে। আমি জানতামনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম নিয়োগেও তাদের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়না। আমার মাধ্যমে তারা বড় একটা আঘাত পায় তাই আমার প্রতি তাদের এতো ক্ষোভ। আমি আওয়ামীলীগের একটা অংশের কারণে আমিও প্রথমে তাদেরকে অনেকটা তোষণ করেছি। যেহেতু সরকারের একটা তোষণনীতি আছে সেটার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমিও তাদেরকে তোষণ করেছি। তবে আমি সবসময় তোষণ করতে পারিনা সেটা সবাই জানে। ২০১৬ সালে তাদের সাথে আপোষ হলেও এবার আর আপোষের কোন সুযোগ অন্তত আমার মাধ্যমে হবেনা বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি। আমি তাদের বিরুদ্ধে যখন মামলা করলাম আইসিটি আইনে তখন ফেইসবুকে বা ইউটিউবে তাদের দেয়া সব বক্তব্য মুছে দিয়েছে যা কোনভাবে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আওয়ামীলীগের ভিতরে কতিপয় কুলাঙ্গার আছে, কেন্দ্রীয়ভাবেও আছে সরকারের ভিতরেও কিছু দালাল আছে। রেলস্টেশন আমার বাবার সম্পত্তি নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা আমার বাবার সম্পত্তি নয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সম্পদ তা বিশ^ সম্পদ তাও তারা পুড়িয়ে দিয়েছে, ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা মঞ্চ যা মুক্তমঞ্চ নামে পরিচিত সেটাও পুড়িয়েছে। মূর্খ্যরা ভাবে এগুলো আমার বাবার সম্পত্তি, তাই তারা কেউ দেখতেও যায়নি, এখন তারাই ষড়যন্ত্র করছে। তারা পার পেয়ে যায় কারণ আমাদের মাঝেই রটনা আছে যে আমাদের সরকারের কিছু লোক তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছি বলে। আমাদেরই একটা পক্ষ তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।