গ্রামে সালিশ ব্যবস্থা এখন অর্থহীন মানুষকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২১ বিজয়নগর নিউজ।। গ্রামের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সালিশ ব্যবস্থার সাথে জড়িত। কিন্তু সেই গ্রাম্য সালিশ ন্যায় সঙ্গত না হওয়ায় সমাজ জীবনে প্রতিহিংসা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময়ে এই গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা ছিল ন্যায় বিচারের আদর্শের প্রতীক। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ, গণ্যমান্য বিত্তবান, ইমাম ও নেতৃত্ব প্রদানকারী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত হতো সালিশি বোর্ড। সেই সালিশি বোর্ড-এর নেতৃত্বদানকারী লোকেরা গ্রামে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বিধান নিশ্চিত করতেন। আইন-শৃঙ্খলা ও শান্তি নিশ্চিত করতেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর শাস্তি দিতেন। গ্রামের লোকদের মধ্যে বিরোধ, ঝগড়া-বিবাদ প্রভৃতি নিস্পত্তি করতেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ ও রাস্তাঘাট মেরামত করাসহ ইত্যাদি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। বর্তমানে নানা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে সমাজ জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও, সালিশি বোর্ডের আদর্শ ক্রমেই হারিয়ে গ্রামীণ বিচার বা সালিশ ব্যবস্থা এখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে “গ্রামে সালিশ ব্যবস্থা এখন অর্থহীন মানুষকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার।“ অনেক সময়ে দেখা যায় যে ৮০% সালিশ ন্যায়সঙ্গত হয় না। এর পেছনে অনেকগুলো কারণও বিদ্যমান। যেমন– ‘রাজনৈতিক’ : দেশে যে সরকার থাকুক না কেন সেই সরকারের প্রতিনিধির ক্ষমতার দাপটে প্রতিপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। ‘অর্থনৈতিক’ : গ্রাম্য সালিশে, সালিশকারকগণ যে পক্ষ থেকে টাকা বেশি প্রায় সেই পক্ষে রায় চলে যায়। ‘ন্যায়ের পক্ষে লোক না থাকা’ : দেখা যায় যে, সালিশ অবস্থায় বিচার প্রার্থী ন্যায় ব্যক্তির কথাকে সমর্থন না দেয়ার লোক না থাকার কারণে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না। ‘একদিনের সালিশ বার বার বসা’ : গ্রাম্য সালিশকারকগণ যে সমস্যা একদিনে করতে পারেন, তা না করে বার বার বসেন এবং দুইপক্ষ থেকে টাকা আত্মসাত করেন। ‘বাদী-বিবাদী পৃথকভাবে সালিশকারক নিয়োগ’ : বাদী-বিবাদী পৃথক পৃথক ভাবে টাকা দিয়ে নিজেদের জন্য অন্য গ্রাম থেকে সালিশকারক ভাড়া করে আনে, এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, গ্রামে গ্রামে নামকরা সালিশ করার ব্যক্তি আছে; যাদের এক একজনের এক সালিশের রেট এক এক রকম। ৫০০-৫০০০ টাকার বেশিও হয়ে থাকে। ‘বংশ প্রীতি বা এলাকা প্রীতি’ : অনেক সময় সালিশকারকগণ বংশ প্রীতি বা এলাকা প্রীতি করেন; ফলে ন্যায় বিচার থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ‘মিথ্যা সাক্ষী’ : গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থায় মিথ্যা সাক্ষীর প্রচলন বেশি হওয়ার কারণে জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘সালিশ বসার পূর্বে দুই পক্ষ থেকে টাকা জমা নেয়া’ : সালিশ বসার পূর্বে দুইপক্ষ থেকে অনেক সময়ে গ্রাম্য সালিশকারকগণ টাকা জমা নিয়ে বিচার কার্য শুরু করেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐ টাকার সিংহভাগ-ই সালিশকারকগণের পেটে যায়। ‘অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা সালিশী করা’ : অধিকাংশ গ্রামে ক্ষমতার দাপটে অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা সালিশী করার ফলে জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘চূড়ান্ত মীমাংসা না করা’ : গ্রাম্য সালিশে সালিশকারকগণ চূড়ান্তভাবে মীমাংসা না করে বাদী-বিবাদীদের মিল করে দেন। এতে বাদী অথবা বিবাদী বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে পরবর্তীতে থানা, কোর্টে আশ্রয় নেয়। ফলে সমস্যা সমাধান না হয়ে আরো প্রকট আকার ধারণ করে। ‘সমস্যা চিহ্নিত না করে বিচার করা’ : গ্রাম্য সালিশে মূল সমস্যা চিহ্নিত না করে, মূল সমস্যা সমাধান না করে, সালিশকারকগণ বিচার কার্য শেষ করে থাকেন। ‘কুচক্রী লোকের কুপরামর্শ’ : গ্রামে অধিকাংশ মানুষ স্বল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন; ফলে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কুচক্রী লোকেরা কুপরামর্শে বাদী অথবা বিবাদী সত্যটা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ‘স্ট্যাম্প বা সই’ : গ্রাম্য সালিশে সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বিচার কার্য সমাধান করে। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ স্ট্যাম্প সালিশকারকগণ থেকে নিতে মোটা অংকে টাকা দিতে হয়। ‘আইন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা’ : গ্রাম্য সালিশকারকগণ আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সালিশ অবস্থা মারামারি, সালিশী থেকে বাদী বা বিবাদী উঠে যাওয়া, হুমকি-ধমকি দেয়া ইত্যাদি কুচক্রী সালিশীগণের ইন্ধনে হয়ে থাকে। দুর্নীতিগ্রস্ত গ্রাম্য সালিশী ব্যবস্থাই গ্রাম্য উন্নয়নে পথে অন্তরায়। প্রাকৃতিক কোলে আশ্রিত হয়েও এই বাংলাদেশের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ছোট ছোট সমস্যার কারণে শান্তিতে থাকতে পারে না। দেশের সকল সালিশী বা বিচারকগণ যদি প্রকৃতভাবে ন্যায় ও নীতি অনুসরণ অনুকরণ করেন; তবে সমাজে অপরাধের কুবাসের পরিবর্তে সমগ্র দেশে ফুলের সুবাস ছড়াবে। প্রশান্তিতে মানুষ বসবাস করবে আপন শান্তির নীড়ে। Related posts:বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় বিজয়নগর এর কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামআওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজনারী নির্যাতন মামলায় বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেফতার Post Views: ২৯২ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: