হেফাজতের তান্ডবে ফেসবুকে উসকানিদাতারাও আইনের আওতায় আসছে

প্রকাশিত: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২১

বিজয়নগর নিউজ ডেস্ক : হেফাজতে ইসলামের যেসব নেতা নাশকতায় জড়িত ছিলেন বা তাণ্ডব চালিয়েছেন শুধু তারাই নন, যারা ফেসবুক-ইউটিউবসহ অন্যান্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, ইউটিউব-ফেসবুকে প্রচারিত বক্তব্যের সূত্র ধরেই তাদের বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কারণ, এসব মাধ্যমে তারা যেসব কথাবার্তা বলেছেন তাতে জনগণকে উত্তেজিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

আর এ কাজে শুধু হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরাই নয়, বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের কোনো কোনো নেতার যোগসাজশ পাওয়া গেছে। হেফাজতের অন্তত সাতটি মামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাদের সবাইকেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বৃহস্পতিবার তার নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এসব তথ্য জানান।

এদিকে ডিবি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের ২৩ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাসহ ৬৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মুহূর্তে বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতা ডিবির রিমান্ডে আছেন।

এর আগে ২০১৩ সালে নাশকতার ঘটনায় যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন যারা রিমান্ডে আছেন তাদের ২০১৩ সালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্র ধরেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ইউটিউব-ফেসবুকে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি প্রচার করেছেন সে কনটেন্টগুলো তাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রেফতারকৃতরা এসবের দায় স্বীকার করেছেন।

ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ঢাকায় হেফাজত নেতাকর্মীদের ৬৮টি মামলা রয়েছে। এসবের মধ্যে ২০১৩ সালে ৫৩টি, ২০২০ সালে ৩টি এবং চলতি বছর ১২টি মামলা হয়। ৬৮টি মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত চারটিতে (২০১৩ সালের) চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকি সব মামলাই তদন্তাধীন।

এসব মামলায় সম্প্রতি ডিএমপির ডিবি পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মাওলানা মামুনুল হক, জুনাইদ আল হাবিব, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা জালাল উদ্দীন, মুফতি শরীফ উল্লাহ, মুফতি ফখরুল ইসলাম, খুরশিদ আলম কাসেমী, মুফতি শারাফাত হোসাইন, মাওলানা জুবায়ের আহমদ, কোরবান আলী কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ, খুরশিদ আলম কাসেমী, মুফতি শারাফাত হোসাইন, মাওলানা ইহতেশামুল হক সাখী, ডা. আহমেদ আব্দুল কাদের, ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী এবং মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, ডিএমপিতে হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা ৬৮টি মামলার মধ্যে অন্তত সাতটি মামলার তদন্তে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে পল্টন থানার ৩, শাহবাগ থানার দুটি এবং যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলা রয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৭ জুন পল্টন থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮০-৯০ জন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি ফখরুল ইসলাম, আবুল হাসান আমেনী।

এ মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ২০১৩ সালের ৫ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে বইয়ের দোকানে দাঙ্গার সৃষ্টি করেন। তারা ধর্মীয় বই চুরি করে এবং চুরিতে সহযোগিতা করেন।

একই থানায় একই দিন দায়ের করা অপর এক মামলাতেও আসামির সংখ্যা একই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা দাঙ্গা সৃষ্টি করে আতর, তসবিহ এবং মেসওয়াকে অগ্নিসংযোগ করে। মামলাটির তদন্তে একজন যুবদল নেতা এবং একজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে ডিবি জানিয়েছে।,