সরাইলে হেফাজতের হামলার নেতৃত্ব দেন আ’লীগ সভাপতির তিন ছেলে!

প্রকাশিত: ২:২৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের তান্ডবের নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির তিন ছেলে। এরই মাঝে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে পুলিশের কাছে উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলের ভিডিও ফুটেজ এসে পৌছেঁছে। ইতিমধ্যে একছেলেকে মামলার এজহারভুক্ত আসামী করেছে সরাইল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চলছে তোলপাড়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এরই অংশ ২৭মার্চ বিকেলে উপজেলার অরুয়াইল এলাকায় মোদি বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন সেখানকার হেফাজতকর্মীরা। সেদিন সেখানে তিন দিক থেকে মিছিলে এসে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে মিছিলকারীরা অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে থানার পরিদর্শক (তদন্ত)সহ ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১হাজার২০০জনকে আসামি করে মামলা করেছে সরাইল থানা পুলিশ। এ মামলার এজাহার নামীয় ৩০নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব মিয়ার ছোট ছেলে ইসমাইল হোসেন। তার আরও দুই ছেলে হাফেজ যাকারিয়া মাহমুদ ও ইউনুস  মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। এমন এরই মাঝে তাদের জড়িত থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এনিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়৷

এদিকে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে হেফাজতে হামলার নেতৃত্বকারী আওয়ামীলীগের সভাপতির ছেলে ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা মামলার আসামী ইসমাইল হোসেন। হেফাজতের হামলার ঘটনার পর অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পটি বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলা থেকে পুলিশ আসার আগেই খবর পেয়ে আসামী গাঢাকা দিচ্ছেন।

তবে অভিযোগের ব্যাপারে অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব মিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদের সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বিক্ষোভ মিছিলে যায়নি। অরুয়াইল বাজারে আমাদের একশো’র বেশি দোকানপাট রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা যেন আমাদের দোকানে হামলা না করতে পারে; সেই জন্যে আমার ছেলেরা সেদিন পাহারায় ছিল। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিল। ধামাউড়া গ্রাম থেকে আসা মিছিলের লোকেরা এখানে তাণ্ডব চালিয়েছে; আর সেটির ইন্ধন জুগিয়েছে একজন। পরে পুলিশ সবকিছু অবগত হয়েছে’।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ ক্যাম্পে হামলা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। এখানকার আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব মিয়ার ছেলের নাম এ মামলার এজাহারে রয়েছে। তাকেও গ্রেফতার করতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। সে সহ ঘটনার সাথে জড়িত সবাই এলাকা ছাড়া। বাড়িঘরে এখন শুধু নারীরা আছেন। পুরুষ শূন্য রয়েছে পুরো গ্রাম।

এ ব্যাপারে সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় আহত কবির হোসেন বলেন,’ আমরা ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ গুলো পর্যালোচনা করে হামলার সাথে জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলেকে সনাক্ত করতে পেরেছি। এরমধ্যে এক ছেলেকে ইতিমধ্যে মামলার আসামী করা হয়েছে। বাকীদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।