ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতকে চিরতরে বর্জনের ঘোষণা সাংবাদিকদের বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২১ হেফাজতের হরতাল-আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা-ভাঙ্গচুর, প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে হত্যাচেষ্টাসহ সাংবাদিকদের মারধোর, ক্যামেরা-মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন জেলার সাংবাদিকরা। এতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে হেফাজতসহ তাদের সহযোগী সকল সংগঠনের সংবাদ চিরতরে বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় এবং প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার জন্য হেফাজতকে দায়ী করা হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিল নিয়ে শহরের হাসপাতাল রোড, কোর্ট রোড ও টিএ রোড প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে সাংবাদিকরা। সমাবেশে রাখা বক্তব্যে সাংবাদিকবৃন্দ বলে, সাংবাদিকদের ওপর হমলার ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা হেফাজতকেই চিহ্নিত করতে হবে। এদেরকে আইনের কাছে সোপর্দ না করা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা তাদের সকল সংবাদ বর্জন করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও অবিলম্বে প্রেস ক্লাব, সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এসময় শুক্রবার ও রোববারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংগঠিত নেক্কারজনক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি পীযুষ কান্তি আচার্যের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন, সাবেক সভাপতি খ. আ. ম. রশীদুল ইসলাম,সৈয়দ মিজানুর রেজা ও মোহাম্মদ আরজু,টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুরুল আলম, প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ইব্রাহীম খান সাদাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. কাউসার এমরান ও দীপক চৌধুরী বাপ্পি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুন নূর, কবি জয়দুল হোসেন, এমদাদুল হক, সৈয়দ মো. আকরাম, নিয়াজ মুহাম্মদ খান বিটু, প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম শাহজাদা, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মজিবুর রহমান খান, সাবেক সহসভাপতি মফিজুর রহমান লিমন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হান, সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল, নবীনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন মনির, আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, সরাইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বাবুল ও এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান পারভেজ, কসবা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি খ. ম. হারুনুর রশীদ ঢালী প্রমুখ। বক্তারা প্রেস ক্লাব ভবন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অতীতের কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের সময় প্রেসক্লাবে কখনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রেস ক্লাবের সভাপতির ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মনির হোসেন। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত মাদরাসা ছাত্র ও হেফাজত ইসলামের হামলায় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজ উদ্দিন জামি, আমাদের নতুন সময় ও আমাদের সময় ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফি, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার মাসুক হৃদয়, একুশে টিভির প্রতিনিধি মীর মোহাম্মদ শাহীন, এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন সুমন রায়, লাখোকণ্ঠের প্রতিনিধি বাহাদুর আলম, ডেইলি ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি ইফতেহার রিফাত, এনটিভির ক্যামেরা পারসন সাইফুল ইসলাম আহত হন। এছাড়া প্রেসক্লাবে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। তাদের তাণ্ডবে প্রেসক্লাবে অবস্থান করা জেলার অর্ধশত সাংবাদিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একাত্তর টিভির প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন রুমি ও আজকালের খবর প্রতিনিধি মোজাম্মেল চৌধুরী কাজ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন। বিজন বলেন, তারা বেছে বেছে স্বাধীনতা ও প্রগতির পক্ষের সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধার চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তারা দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চাইছে। আমরা এই শহরের নাগরিক হিসেবে এই নেক্কারজন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং এসব ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। তারা যে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করেছে তাই নয়, বাংলাদেশে যা কিছু মুক্তবুদ্ধির চর্চা সবকিছুর বিরোধিতাই এখন হেফাজতের প্রধান রাজনৈতিক কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। এই সময় আইনশৃঙ্খালা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওইদিন বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব শুরু করে একদল মাদ্রাসাছাত্র। তারা রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে, ভাংচুর চালায়। ঐদিন ভাদুঘরে মাদ্রাসা ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় এর ভিডিওচিত্র ধারন করতে গিয়ে এনটিভির ক্যামেরাপারসন সাইফুল ইসলাম ধাওয়ার মুখে পড়েন। এরপর ক্যামেরাটি একজন বিজিবি সদস্যের হাতে দিয়ে সাইফুল রক্ষা পান। ইটিভির ক্যামেরা পারসন রাসেলও ধাওয়ার শিকার হন এখানে। ওইদিনই রেলষ্টেশন এলাকায় মোবাইলে ভিডিও ধারন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন নিউজ টুয়েন্টি ফোরের সাংবাদিক মাসুক হ্নদয়। তাকে বাচাতে গিয়ে ইটিভি’র সাংবাদিক মীর মো. শাহিন হামলার শিকার হন। একাত্তর টিভির জালাল উদ্দিন রুমি ও আজকালের খবর প্রতিনিধি মোজাম্মেল চৌধুরী কাজ করতে গিয়ে অপদস্থ হন। তাদের মোবাইলে ধারন করা ভিডিও চিত্র কেটে মোবাইল সেট ফেরত দেয়া হয়। শনিবারও হেফাজত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব চালায়, যেখানে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়। এদিন বিকেলে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিসছিল কাভার করতে গিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের ছুড়ে মারা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন সুমন রায়। তার সামনের দাত ভেঙ্গে যায়। এরপরপরই টিএরোড মাদ্রাসা মোড়ে মান্নান ম্যানশনে থাকা যমুনা,আরটিভি এবং মাইটিভি’র অফিসে চড়াও হয় মাদ্রাসা ছাত্ররা। তাদের ইটপাটকেলে অফিসের কম্পিউটারসহ পেশার নানা যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এদিনই এটিএন বাংলার ইসহাক সুমন,এসএটিভির মনিরুজ্জামান পলাশ সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় তাদের লক্ষ্য করে। পরদিন রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হরতাল-আন্দোলনে হেফাজতের টার্গেটে পরিনত হন সাংবাদিকরা। সেদিন ভিডিও এবং ছবি ধারন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙ্গচুর করা হয়। এরআগে প্রেস ক্লাবের সিসি ক্যামেরা খুলে নেয় হামলাকারীরা। ঘটনার খবর পেয়ে প্রেস ক্লাবে ছুটে আসার পথে হামলা চালানো হয় প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর। ‘তুই প্রেস ক্লাব সভাপতি,তুই আওয়ামী লীগ’ বলে তাকে প্রথমে রাম দা দিয়ে মাথায় কোপ দেয়া হয়। সেটি লক্ষ্যচুৎত হলে আরেকজন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। জামিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কয়েক দফা প্রেস ক্লাবে হামলা হয়। এসময় ক্লাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জেলার অর্ধশত সাংবাদিক। এরআগে সকালে শহরের পৈরতলায় সাংবাদিক আবুল হাসনাত রাফি হরতালের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন। তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং মারধোর করা হয়। Related posts:আগরতলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শহীদ বেদি ভেঙে ফেলায় তীব্র ক্ষোভবিজয়নগরে পূজা উদযাপন পরিষদ ও ব্রাহ্মণ কল্যাণ সমিতির মত বিনিময় অনুষ্ঠিতবিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান এর সাংবাদিক দের সাথে মত বিনিময় সংবাদটি মিথ্যাও ভিও্বিহীন ও হলুদ সাংবাদিকতা Post Views: ৩৩৯ SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: