রাত পোহালেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোট উৎসব, জরিপে এগিয়ে নায়ার কবির

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

রাত পোহালেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় শুরু হবে ভোট উৎসব। পৌর শহরের শান্তি প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ভোটারদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই আগামীকাল রোববার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে একটানা ভোট গ্রহণ। এতে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। দীর্ঘ এক মাস ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শেষ করে প্রার্থীরাও অপেক্ষায় আছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।

পঞ্চম ধাপের ৩১ টি পৌর নির্বাচন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রার্থীদের উৎসবমুখর প্রচার-প্রচারণা গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শেষ হয়েছে। আর একদিন পরেই ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ভোটারদের চুড়ান্ত প্রতীক ও প্রার্থী বাছাইয়ে অপেক্ষা করছেন।


এদিকে মত ও পথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি সপ্তাহব্যাপী পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়, দোকন-পাট, চা স্টল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নানান শ্রেণি পেশার সহস্রাধিক ভোটারদের মাঝে জরিপ চালান। তাদের কাছে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কাকে বেছে নিবেন এমন প্রশ্ন করলে ৭০ শতাংশ ভোটার নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মিসেস নায়ার কবিরের পক্ষে তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করেন ও ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী জহিরুল হক খোকনের পক্ষে ও ৭ শতাংশ ভোটার সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক ভুইয়ার পক্ষে সমর্থন জানান।

পৌর নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মিসেস নায়ার কবিরকে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। দেড়শ’ বছরেরও পুরনো এ পৌরসভায় প্রথম নারী মেয়র হিসেবে টানা ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় তিনি ভোটের মাঠে। সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায় মদদ দেয়ার কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় বিষয় পৌরসভাকে তিনি দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে দূরে রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং পুরো জেলার আলোচিত একটি রাজৈনিতক পরিবারের হয়েও দলীয় এবং পরিবারের প্রভাবমুক্ত রেখেছেন পৌরসভাকে। তাকে নিয়ে এসবই আলোচনা ভোটারদের মুখে। এই ইমেজ ভোটারদের কাছে এগিয়ে রেখেছে নায়ার কবিরকে। তাছাড়া নারী ভোটারদের নজরও তার দিকে।

অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ জহিরুল হক এবারই প্রথম নির্বাচনী মাঠে। সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে ডিঙ্গিয়ে জহিরুল হককে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এই নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে একরকম চাপা অসন্তোষ থাকলেও প্রকাশ্য প্রচার-প্রচারণায় দলের নেতাকর্মীরা জহিরুল হকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মিসেস নায়ার কবিরের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন জানানোর কারন হিসেবে জানতে চাইলে ভোটাররা জানান, তিনি একজন ভদ্রমহিলা, যার কোন কলঙ্ক নেই। বিগত পাঁচ বছরে তার কোন অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগও নেই। মানুষের সাথে কোনদিনও খারাপ ব্যবহার করতেও শুনেননি। ভোটাররা আরও জানান, বর্তমানে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছেন। তিনি আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। তিনি বিজয়ী হলেই সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে।

ভোটাররা আরও জানান, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিসেস নায়ার কবিরের কোন ছেলে মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন বিগত সময়ে পৌরসভায় কোনদিন পা রাখেনি, এবং কোন অনিয়ম দূর্নীতিও করতে আসেনি। একজন নিষ্কলুষ মেয়র হিসেবে নায়ার কবিরের কোন বিকল্প নাই। ভোটাররা মনে করেন, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব হবে না, কারন সরকার তাকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেবেনা। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে হাজী মাহমুদুল হক ভুইয়া দলের বিপরীতে নির্বাচন করায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকায় সাধারন ভোটাররাও বিমুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান মেয়র ও আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিসেস নায়ার কবিরের আমলে নাগরিকরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারছে। পৌর এলাকার কোথাও কোন চাঁদাবাজি, অবৈধ দখল টেন্ডারবাজী হয়নি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে নাগরিকরা বসবাস করছে। বিশেষ করে বিগত পাঁচ বছরে শহরে দু’চারটি চুরি ছিনতাই ছাড়া কোন চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। কারন পুরো পৌর এলাকা জুড়ে রয়েছে বিদ্যুতের আলোয় চকচক। এছাড়া শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের বিষয়েও নায়ার কবির ছিলেন সচেষ্ট।

সরজমিনে পুরো পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের নীরব কানাঘুঁষা। প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকলেও ভোটের মাঠের কড়া হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত ভোটাররা। পৌর এলাকার সচেতন নাগরিকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে কাকে ভোট দিলে শহরের উন্নয়ন, নাগরিক সুবিদা

সহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠিত হবে। এ বিবেচনায় নিষ্কলুষ নারী নেত্রী বর্তমান পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরের বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, রাত পোহালেই শুরু হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৪৮টি ভোট কেন্দ্রের ভোট উৎসব। নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যে কারনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সাধারন ভোটারদের কিভাবে ভোট দিতে হবে সে বিষয়ে ধারণা দিতে কাজ করছেন।
নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭৭ জন প্রার্থী। এরমধ্যে মেয়র পদে ৬ জন এবং ১২ টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন এবং সংরক্ষিত চারটি ওয়ার্ডে ১৫ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

মেয়র পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র মিসেস নায়ার কবির (নৌকা), বিএনপি মনোনীত জহিরুল হক খোকন (ধানের শীষ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত কমরেড নজরুল ইসলাম (হাতুড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ আবদুল মালেক (হাতপাখা), সতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূইয়া (মোবাইল ফোন) এবং আবদুল করিম (নারিকেল গাছ)। তবে প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিন মেয়র প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের নায়ার কবির, ধানের শীষ প্রতীকের জহিরুল হক খোকন ও মোবাইল ফোন প্রতীকে হাজী মাহমুদুল হক ভুইয়ার।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার মোট ভোটার এক লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৯ হাজার ৫৬২ জন এবং মহিলা ভোটার ৬০ হাজার ৯৪২ জন। ৪৮টি ভোট কেন্দ্রের ৩৩৯ ভোটকক্ষে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়ণে তথা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ প্লাটুন বিজিবি, ৬ টিম র্যাব ও পর্যাপ্ত পরিমাণের পুলিশ সদস্যরা স্টাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে পৌর এলাকার দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ভোটারদের ভোট প্রদানের জন্য কেন্দ্রের ভেতরে আনসার বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। সুএ মত ও পথ