আয়েশা খানম: নারী উন্নয়নের অনন্য যোদ্ধা বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২১ সফলতা পেতে পুরুষের তুলনায় নারীকে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে- কিছুদিন আগেও এমনই বক্তব্য রেখেছেন নারী নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম৷ জীবনের পুরো সময়টা যিনি ব্যয় করেছেন নারীর উন্নয়নে। কারণ তিনি বুকে ধারণ করে চলতেন- সমাজকে, দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিতে অবশ্যই দরকার নারীর উন্নয়ন, আত্মপ্রতিষ্ঠা।সদ্য প্রয়াত আয়েশা খানমের জন্ম নেত্রকোনা ও দুর্গাপুরের মাঝখানে গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ই অক্টোবর। বাবা গোলাম আলী খান এবং মা জামাতুন্নেসা খানম৷ সচেতন নাগরিক হিসেবে আয়শা খানমের আন্দোলন শুরু হয় সেই ১৯৬২ সালে, ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পর্ক হয় আয়েশার৷ তবে ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ ফলে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে এগিয়ে যেতে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল সেসবগুলোতেই আয়েশা খানম সামনের সারিতে ছিলেন৷১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সংগ্রামী নেত্রী আয়েশা খানম৷ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি৷ এছাড়া, রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল মূলত: আয়েশা এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতাদের উপর৷ এছাড়া, ছাত্র নেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সচেতনতার কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি৷এপ্রিল মাসের শেষদিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় যান আয়েশা খানম৷ সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ক্রাফটস হোস্টেলে উঠেন তিনি৷ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যাঁরা ভারতে আসতেন, তাঁদের এক অংশের সাময়িক আবাসস্থল ছিল ক্রাফটস হোস্টেল৷ সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখা, প্রণোদনা দান এবং শরণার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগাতে কাজ করেন আয়েশা এবং তাঁর সহকর্মীরা৷আগরতলায় তাঁর কাজের কথা বলতে গিয়ে আয়েশা খানম নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘‘আগরতলায় আমি প্রাথমিক একটা প্রশিক্ষণ নিই চিকিৎসা সেবার উপর৷ এরপর আগরতলার প্রতিটি ক্যাম্পে গিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে আত্মনিয়োগ করি৷ এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর আগে তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করা হতো৷ সেখানে তাদের ওরিয়েন্টেশন দেওয়ার কাজ করতাম৷ আমি যেহেতু আগে থেকেই সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এবং বক্তৃতা ও কথা বলার ক্ষেত্রে জড়িত ছিলাম সেজন্যই বোধায় সেখানেও আমাকে এ ধরণের কাজেই বেশি করে জড়িত রাখা হয়েছিল৷” এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন আয়েশা খানম৷দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও নিজেকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, সমান অধিকার ভিত্তিক সমাজ গড়ার কাজে জড়িয়ে রেখেছেন নারীনেত্রী আয়েশা খানম৷ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যান তিনি৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজ করেন তিনি৷ শুরু থেকেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত৷ প্রথমে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আয়েশা খানম৷ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষাসহ যেকোনো খাতে সুবিধা বা সফলতা পেতে পুরুষের তুলনায় নারীকে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। নারীর চলার পথ মসৃণ করতে যে কয়জন নারীরা উদ্যোগী হয়ে মাঠে নেমেছেন তাদের মধ্যে আয়েশা খানমের নাম ভাস্মর থাকবে। Related posts:গাজায় শিশুদের পোলিও টিকা দিতে ৯ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে লড়াইঈদের দ্বিতীয় দিনেও ফাঁকা ঢাকার সড়কবিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা সহজ হচ্ছে Post Views: ৫৩৮ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: