ভাস্কর্য বিরোধীদের বাহাসে বসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২০

বিজয়নগর নিউজ ্ভাস্কর্যসহ দেশের সকল ভাস্কর্য বিরোধীদের বাহাসে বসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। তিনি বলেন, আমি যেকোনো আলেম, যতবড় আলেমই হোক তাঁর সঙ্গে বাহাসে বসতে রাজি আছি। ভাস্কর্য ইসলাম সম্মত নয় একথা তিনি প্রমাণ করবেন; আমি প্রমাণ করব ইসলাম ভাস্কর্যের বিষয়ে নীরব, অর্থাৎ কোনো কথাই বলেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেক বড় বড় মোল্লা-মৌলভী ও আলেম বলে পরিচিত যারা আছেন তাদেরকে প্রকাশ্যেই আরও আগে আমি এই চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখনও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্ত্বরে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে এ মিলন মেলার আয়োজন করা হয়।


মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত একটি কথা প্রচলিত ছিল ‘ষোড়শ বাহিনী’; তারা মুক্তিযোদ্ধা নই আবার রাজাকারও নয়। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবনা-চিন্তা ও বিভ্রান্তির কারণে এই গ্রুপটা নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে সামনের কাতারে চলে এসেছিল।

তিনি বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের জনগণের ভেতরে তিনটা ভাগ ছিল। প্রথমটি হলো- রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি এবং পাকিস্তানি সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠী। এদের সংখ্যা খুবই কম। শতকরা এক থেকে দেড় পার্সেন্ট হতে পারে। দ্বিতীয় ভাগটা ছিল দেশপ্রেমিক, তারা মনেপ্রাণে বাংলাদেশে বিশ্বাস করত; তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিল। তারা আমাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন। সেদিন তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার সরবরাহ করেছেন, রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করেছেন, এমনকি অস্ত্র বহন ও লুকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন। দেশে এই সংখ্যাটাই বেশি ছিল। আরেকটি ক্ষুদ্র অংশ ছিল, এরা রাজাকার না; তবে রাজাকারদের সঙ্গে এরা ভিতরে ভিতরে একটা সম্পর্ক রাখত। এরা সমাজে বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল, এদেরকে ‘ষোড়শ বাহিনী’ বলা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ‘ষোড়শ বাহিনী’ নানা পরিচয়ে সামনের দিকে চলে আসে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সিক্সটিন ডিসেম্বরের লোকেরা আমাদের দুর্বলতার সুযোগে সেদিন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে সামনে চলে আসার সুযোগ পেয়েছিল। আমাদের দুর্বলতা কী, আমরা তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোভাবে সংগঠিত ও তালিকাবদ্ধ করে রাষ্ট্রের রিকনস্ট্রাকশনে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। আর এই সুযোগটাই ষোড়শ বাহিনীর লোকগুলো নিয়েছিল এবং তারা ও তাদের সন্তানেরাই একসময় দেখা গেছে বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তি হয়ে বসতে। এরা এখনও বহাল তবিয়তেই আছে। সেসময় এই বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে এমন অনেকেও সামনে চলে আসে যারা পুরোপুরি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল এবং নানাভাবে পাকিস্তানি আর্মিকে সহযোগিতা করেছিল। আজ ঐ সমস্ত লোকেরাই বাংলাদেশের রাজনীতির কর্তৃত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান নিয়েছে এবং এখনও আছে। এখানেই হচ্ছে মূল প্রবলেমটা।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি শাজাহান খান সাহেবকে বলতে চাই, আপনি যে রোগের চিকিৎসা করবেন সেই রোগটাই যদি ধরতে না পারেন তাহলে চিকিৎসা করা অসম্ভব। আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ সকল প্রকার ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। অথচ ভাস্কর্য হলো বাঙালি সংস্কৃতি তথা বিশ্ব সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটাকে যদি ধ্বংস করা যায় তাহলে মানবেতিহাসের ধারাবাহিকতার যে উন্নয়ন ধারা তাকে ধ্বংস করা যাবে। আর সেজন্যই মনগড়া ইসলাম নিয়ে তারা ভাস্কর্য বিরোধিতায় নেমেছে। এসবের পিছনে রয়েছে ঐ ষোড়শ বাহিনীর লোকেরা। তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া ও লালন-পালনের পাশাপাশি চিহ্নিত করতে না পারার জন্যই আজ এ অবস্থা।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব বলেন, আমরা শুধু জিয়াউর রহমানকে গালাগালি করি, জিয়াউর রহমান এদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে একথা সত্য, এরশাদ করেছে একথাও সত্য কিন্তু জিয়াউর রহমান-এরশাদ যাদেরকে লালন-পালন করেছে তাদেরকে তো আমরাও লালন-পালন করছি। নাম শুনতে চান?, আমার নেত্রী যদি আমার কাছে নাম শুনতে চাই তাহলে আমি সবগুলোর নাম বলে দিতে পারব। তারা এখনও আছে, তারা রাষ্ট্র চালায়। তারা নীতি নির্ধারণ করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একাত্তরে আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু কোন মাদ্রাসা আপনাদের সমর্থন করে ছিল। কোন মৌলভী সমর্থন করেছিল? অফিসিয়ালি একজনও সমর্থন করে নাই। তারা এখন বলে আমরা তো বিরোধিতাও করি নাই। ঐখানেই কথা_ চুপ ছিল, ঘাপটি মেরে বসেছিল; যদি পাকিস্তান টিকে যেত তাহলে আবার নারায়েতকবির আল্লাহু আকবর বলে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে যেত। কিন্তু তাদের জন্য দুর্ভাগ্য এমনটা হয় নাই। আর আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য হলো আমরা তাদের ব্যাপারে কোনো ভূমিকা গ্রহণ করতে পারি নাই। যেজন্য আমরা আজ এই অবস্থানের মুখোমুখ