জেলহত্যা : বাংলাদেশকে হত্যার শেষ চেষ্টা

প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২০

নভেম্বর কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এই দিনটি দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে (৩ নভেম্বর) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে-ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিলেন রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। তিনি ছিলেন ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযজ্ঞ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান ছিল অমূল্য। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তারা। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ঘাতকদের ইচ্ছায় গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি হননি এ নেতারা। প্রকৃতঅর্থে, এভাবে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। এটা আজ স্পষ্ট, এ কারণেই বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদের শাসনামলে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং একপর্যায়ে তাদের হত্যার জন্য সেখানে পাঠানো হয় ঘাতকদের। ইতিহাস অনেক হত্যাকাণ্ড আর রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হত্যাকাণ্ড ছিল নজিরবিহীন। আর এসব ঘাতককে পরবর্তীকালে পুরস্কৃত করেছিলেন জেনারেল জিয়া। চার নেতা হত্যার বিচারে কোনো আইনগত বাধা না থাকলেও সে প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল বছরের পর বছর। অবশেষে দেশের শীর্ষ আদালত ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তিনজন প্রাক্তন সেনা অফিসারকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ৮ জনকে হত্যায় অংশ নেওয়ার অপরাধে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। এই দণ্ডপ্রাপ্তদের অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় শাস্তি লাভ করেছে। তাদের মধ্যে ৯ জন পলাতক রয়েছে। জানা গেছে, তারা পাকিস্তান, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা যায়নি।জাতির পিতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। অতএব, চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় বাস্তবায়ন হোক; পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। চার জাতীয় নেতা বেঁচে থাকবেন আমাদের বরেণ্য ইতিহাসের সম্পদ হয়ে। তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আত্মার শান্তি কামনা করছি।