আদিবাসী দিবসের ইতিহাস সবার জানা উচিত

প্রকাশিত: ৬:০২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২০

আজ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে প্রতি বছর ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর দিবসটি ব্যাপক আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। আদিবাসীদের প্রত্যেকের জীবন ধারা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি আলাদা। এ দিবসে তাঁদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে পালন করে। এ করোনাকালে কেমন আছেন তারা? কীভাবে উদযাপন করা হচ্ছে দিবসটি। এবারের আয়োজনে কী কী ভিন্নতা থাকছে জানতে কথা বলি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আদিবাসী শিক্ষার্থীর সঙ্গে। মংক্যচিং মারমা, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এ দিনে মোদের সংস্কৃতিকে বিভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। নিজেদের ভাষা, ঐতিহ্য পোশাক-পরিচ্ছদ, অধিকার আদায়ে সচেতনতামূলক গান, নাটক, আদিম মানুষের ঐতিহ্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের অস্তিত্ব তুলে ধরি। র‍্যালি, সমাবেশ, খানাপিনা করে দিনটি আনন্দে কেঁটে যায়। এ বছর আমরা ‘কোভিড-১৯ মহামারি ও আদিবাসীদের জীবন জীবিকার সংগ্রাম’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করবো। মং সিং ওয়াং, একই বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এ বছরের আয়োজনে আমরা থাকছি না। এ কারণে এবার আয়োজন কীভাবে হবে বলতে পারবো না৷ আমরা সবাই নিজ এলাকায় এখন। এলাকায় সীমিত পরিসরে আয়োজন হবে৷ তবে খোঁজ খবর নিচ্ছি না। এখন সবাই কাজে ব্যস্ত। করোনার ফলে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আমাদের দোকান আছে। মায়ের লেনদেন দেখতে হচ্ছে আমার৷বিদুষী চাকমা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আদিবাসী দিবস আমাদের প্রাণের দিন। এ দিনে নিজেদের সংস্কৃতির পোশাক পড়ে র‍্যালীতে ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করি। এরপর আমাদের নাচ, গানসহ আরও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। এ করোনা পরিস্থিতিতে এবার আয়োজনে ভিন্নতা থাকবে৷ ঘরেই কাটবে দিনটি। বিদুষী চাকমা বলেন, চাকমা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আমাদের পোষাক আমাদের অহংকার। নাকে নাকফুল, গলায় হালছরা, পায়ে থেংখারু এবং হাতির দাঁতে নির্মিত রকমারি অলংকার চাকমা নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ করে। এ দিবসে আমরা এভাবে সেজে থাকি। এই দিনব্যাপী নানা আয়োজনের পাশাপাশি থাকে ঐতিহ্যবাহী হরেক রকম খাবারের সমাহার। লালা মং চাকমা, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী বলেন, এবার আমরা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের মতো দিবসটি পালন করবো। করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো পৃথিবীরকে গ্রাস করেছে। তাই এবার গৃহবন্দীভাবে আদিবাসী দিবস পালন করতে হচ্ছে। আগের বছর আমরা নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সবাই শহীদ মিনারে যেতাম, সমাবেশ করতাম। সাংস্কৃতিক পর্বের (দলীয় নাচ, গান, কবিতা, বক্তব্য, নাটক) আয়োজন করতাম। কিন্তু এবার এসব হবে না। করোনা সব এলোমেলো করে দিয়েছে। যে যেখানে আছে, সেখানে তাঁর সাধ্যানুযায়ী দিবসটি পালন করবে। এ বছরে দিবসটির রুপ একেবারে আলাদা। নীলা খকসী, রসায়ন ও পদার্থ বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এ বছর কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিবারের সকলের একই অবস্থা। করোনার কারণে বাড়ির বাহিরে যেতে পারি না। করোনা না থাকলে অনেক পরিকল্পনা থাকতো। মিশনে যেতাম, র‍্যালি করতাম, বিভিন্ন প্রোগ্রামে যোগ দিতাম। এবার বাড়িতে বিভিন্ন রকমের রান্না করে দিনটি কাটবে। হ্লামংউ মারমা, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আদিবাসী দিবস মানে এক ধরনের মিলনমেলা। এ দিনে পরিচিতদের সাথে দেখা হয়। সবার সাথে দেখা হলে খুব আনন্দ লাগে। এ বছর করোনার কারণে অনলাইনে আদিবাসী দিবস পালন করবো। পরিকল্পনা করেছি নিজ গ্রামে সবাইকে নিয়ে মিটিং করবো, আদিবাসীদের কথা বলবো। কারণ আমরা আদিবাসী আমাদের ইতিহাস সবার জানা উচিত।