বর্যীয়ান রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিম এক নজরে

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

বিজয়নগরনিউজ। মোহাম্মদ নাসিম, ২ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো. মনসুর আলী একজন আইনজীবী, রাজনৈতিক এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর যে জেল হত্যা হয়েছিল জঘন্য সে হত্যাকাণ্ডে চার নেতার একজন ছিলেন মো. মনসুর আলী। তারই সুযোগ্য সন্তান মোহাম্মদ নাসিম। রাজনৈতিক জীবনে তার পিতার মতোই উজ্জ্বল নক্ষত্র। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক মোহাম্মদ নাসিম। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক হাতেখড়ি। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগে প্রবেশ। সেই থেকে অধ্যবদি আওয়ামী লীগের যোদ্ধা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছিল একটি। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজনীতির মাঠে তিনি যেমন সুবক্তা তেমনই একজন ঝানু সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ নাসিম। সাংবাদিকতা জীবনে অনেকেই সংসদ বিষয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে মোহাম্মদ নাসিমের সহযোগিতা নিয়েছেন। মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতেও সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তার বাবার তৈরি করা রাজনৈতিক মাঠে তিনিই অদ্বিতীয়। যখনই ভোট এসেছে কাজীপুরে মোহাম্মদ নাসিমের কোনো জুড়ি ছিল না। নাসিম ভাই বলতেই অস্থির কাজীপুরের জনগণ। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ এর আগ পর্যন্ত বিরোধীদলে থেকে মোহাম্মদ নাসিম রাজপথে লড়াকু সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন। এখানেও তার অবদান ছিল প্রশংসনীয়। সেখানেই আন্দোলন সেখানেই মোহাম্মদ নাসিম। এ জন্য তিনি রাজপথে পুলিশের হাতে একাধিকবার অত্যাচার এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় তাকে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলেও মোহাম্মদ নাসিম কাজীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তানভীর শাকিল ওই নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার মোহাম্মদ নাসিমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে জয়ী হলে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষতার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনেও মোহাম্মদ নাসিম জয়লাভ করে। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয় পায়। তবে এবার মোহাম্মদ নাসিমকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবেই আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তাকে মন্ত্রী না করায় তিনি ১৪ দল নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। ১৪ দলে যেন কোনো ফাটল না ধরে সে জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তিনি এক নিমিষেই সে পরিস্থিতি শান্ত করে ফেলেছেন। এখানেও তার রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় মিলেছে। অসুস্থ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ১৪ দলের কার্যক্রমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। উল্লেখ্য আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শনিবার (১৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।