কোয়ারাইনটাইন এড়াতে বিমানবন্দরে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে এসে পালিয়ে ছিলেন সেই প্রবাসী

প্রকাশিত: ৯:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শাহ আলম (৩৫) নামের এক প্রবাসী যুবক শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে একই উপজেলার জেঠাগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে তার মৃত্যু হয়। আইইডিসিআর-এর নিয়মানুসারে নিহতের লাশ দাফন করেছেন প্রশাসন। শাহ আলম পূর্বভাগ ইউনিয়নের মগবুলপুর গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল গফুর মিয়ার ছেলে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় বুধবার ভোরে মগবুলপুরে তার নিজ বাড়ি এবং জেঠাগ্রামে শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত লকডাউনেই থাকবে ওই দুই বাড়ি। ওই দুই বাড়ির আশেপাশে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে শাহ আলমের মৃত্যুর ঘটনায় দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলা প্রশাসন, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পরিবারে ৯ ভাই বোনের মধ্যে মগবুল সবার বড়। গত ৩ বছর আগে জেঠাগ্রামের নোয়াহাটি এলাকার মন্নান মিয়ার মেয়ে শাহনাজ পারভিনকে (২০) বিয়ে করেন তিনি। তার রয়েছে রেখা নামের আড়াই বছর বয়সের এক কন্যা শিশু। সংসারের সুখের জন্যই পাড়ি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি দেখে শাহ আলম গত ১৮ মার্চ বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে নেয়া হয়েছিল কোয়ারেন্টিনে। সেখানে থাকেননি তিনি। দায়িত্বরতদের ৫০ হাজার টাকায় ম্যানেজ করে চলে আসেন নিজ গ্রাম মগবুলপুরের বাড়িতে। পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে হঠাৎ করে তার এ ভাবে আসাকে কেন্দ্র নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। এ ছাড়া বিদেশ থেকে দেশে আগমনকারীদের তালিকা নিয়ে সন্ধানে নামেন পুলিশ প্রশাসনের লোকজন। শাহ আলম নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যান তার শ্বশুরবাড়ি জেঠাগ্রামে। এক সময় সেখানেও তার চলাফেরা নিয়ে চলতে থাকে নানা আলোচনা। প্রশাসনও খোঁজ করতে থাকেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে গত কয়েক দিন আগে তিনি চলে যান সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে বেশ কয়েক দিন বসবাসের পর সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চলে আসেন আবার শ্বশুরবাড়িতে। গত ৪ এপ্রিল তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। শারীরিক বিভিন্ন নিরীক্ষার পর পর টাইফয়েড ধরা পরে। কিন্তু তখনও করোনা ভাইরাসের কোন উপসর্গ ছিল না। গত মঙ্গলবার রাতে তার শ্বাস কষ্ট ওঠে। রাত ১০টার পর স্বজনরা তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সহায়তায় গভীর রাতে হাসপাতাল চত্বরে জানাযা শেষে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেঠাগ্রাম এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, উনি মারা গেছেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন। কিন্তু বিমানবন্দরে না থেকে বাড়িতে আসলেন। এরপর জেঠাগ্রাম শাহজাদাপুর ঘুরলেন। করোনা ভাইরাস তো ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন। এখন আমাদেরকে রক্ষা করার মালিক আল্লাহ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ রায় জানান, শাহ আলম করোনা উপসর্গ নিয়েই মারা গেছেন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নিরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী বলেন, তাৎক্ষনিক ভাবে নিহতের নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আজ (গতকাল) ভোরে মগবুলপুর গ্রামে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সংবাদটি মানবজমিনে প্রকাশিত