করোনা মোকাবেলা: সারাদেশে আট হাজার বেড প্রস্তুত

প্রকাশিত: ৫:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০

বিজয়নগর নিউজ ডেস্ক : প্রাথমিক পরীক্ষায় রোগের লক্ষণ না থাকায় বিদেশফেরত যাত্রীদের প্রশাসনের নজরদারিতে বাড়ি পাঠাচ্ছে সরকার। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন থাকাকালীন তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে স্থানীয়ভাবেই তাদের চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে। সরকারি নির্দেশমতো রাখা হয়েছে করোনা ইউনিটের ব্যবস্থা।

চীন ছাড়িয়ে করোনা ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সেই প্রেক্ষাপটে গত ২৬ জানুয়ারি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়। তাতে সংক্রমিত ব্যক্তির সেবায় সব হাসপাতালে অক্সিজেন এবং অন্যান্য সুবিধাসহ ৫টি বিছানা সংবলিত আইসোলেশন ইউনিট নির্দিষ্টকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরর তথ্য মতে, এই নির্দেশের পরই দেশের আট বিভাগে ৪ হাজার ৭৭৯ বেড প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে এক হাজার ২২৩, ঢাকায় ৯০২, রাজশাহীতে ৮১৭, ময়মনসিংহে ৫৩৯, রংপুরে ৪৮৯, খুলনায় ৪২৮, সিলেটে ২৭১ এবং বরিশালে ১১০টি বেড। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।

এদিকে গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আল্লাহ না করুক, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হলে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ইজতেমা ময়দানকে প্রস্তুত করার ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, জানুয়ারি মাসেই দেশের সব হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষ থেকে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় কী এ সম্পর্কে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিশেষ করে মাস্ক, টুপি, হ্যান্ড গ্লাবস, অ্যাপ্রোন ইত্যাদি প্রয়োজনমতো সংগ্রহে রাখার কথাও বলা আছে।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখনো অনেক কম। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। বিদেশফেরত যাত্রীরা দেশে আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন। তাদের আমরা স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের কাছে তথ্য আছে অনেকেই এই পরামর্শ মানছেন না। তাই সম্প্রতি বিদেশ থেকে বিশেষ করে ইতালি থেকে আসা যাত্রীদের প্রাথমিক পরীক্ষায় রোগের লক্ষণ না থাকায় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে ওই যাত্রীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক আরো বলেন, এরপরেও যদি কারো মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয় তবে সরাসরি আইইডিসিআরে আসার প্রয়োজন নেই। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তারা যে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, যে যানবাহন দিয়ে আসবেন সেখানে থাকা মানুষের মধ্যেও কিন্তু এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের হটলাইনে যোগাযোগ করা হলে আমরা বাড়িতে গিয়েই নমুনা সংগ্রহ করব। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার সক্ষমতাও আমাদের আছে।

নমুনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কিট রয়েছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে দুই হাজারের মতো কিট রয়েছে। আরো কিছু কিট আসার পথে রয়েছে।
সূত্র : ভোরেরকাগজ