ঐতিহ্যের ধারক কুমিল্লার খদ্দর বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২০ কুমিল্লা বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদগুলোর অন্যতম। এটি অবিভক্ত ভারতের স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যের একটি অংশ। বর্তমানে কুমিল্লা নামে জেলাটি কিছুকাল পূর্বেও চাঁদপুর আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে ছিল একটি বৃহৎ জেলা। কুমিল্লা স্বাধীন দেশের অংশ হলেও ঐতিহ্যগত কারণেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অলিখিত বন্ধন হিসেবে যেন চিহ্নিত হয়ে রয়েছে এর নাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছিলেন, সেখানে হাতে কাটা সুতোয় বোনা খদ্দরের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মহাত্মা গান্ধী সে সময় নিজে কুমিল্লা এসে খদ্দরের প্রসারে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। তারই স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনও কুমিল্লায় গান্ধীর আশ্রম ‘অভয় আশ্রম’ নামে টিকে আছে। কালের পরিক্রমায় কুমিল্লা ও ত্রিপুরায় খদ্দরের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী মানুষের কাছে এখনও সমাদৃত। তবে শুরু থেকেই, বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কুমিল্লার খদ্দর বিভিন্ন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায় ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশেষ স্থান দখল করে নিতে পেরেছে। অবশ্য এজন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আধুনিকতার চাহিদা পূরণে হাতে তৈরি সুতো ও তাঁতে বোনা কাপড়ের প্রতি আকর্ষণ কমতে শুরু করেছিল। এর নেপথ্যে ছিল অনেক কারণ। মোটা দাগে যেসব সমস্য চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতায় সবকিছুই যান্ত্রিকতায় রূপান্তর ও প্রসার। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় যেমন হ্রাস পায়, তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সুতা তৈরির তুলা, রঙ সর্বোপরি শ্রমসাধ্য তাঁত পেশায় কর্মীর অভাবে খদ্দর সামগ্রী উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এতে সৃষ্টি হয় নানা সংকট। তারপরও থেমে থাকেনি খদ্দরের অগ্রযাত্রা। কুমিল্লার হাতেগোনা যে ক’জন বনেদি ব্যবসায়ী খদ্দরকে জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিতে পেরেছিলেন, তারা খদ্দরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা আর শিল্পের মিশেল ঘটিয়েছেন। কুমিল্লা ছাড়িয়ে খোদ রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছেন আধুনিক খদ্দরের সৌরভ। এর ধারাবাহিকতায় বিবি রাসেলের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব কুমিল্লার খদ্দরকে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন রাজ্য ত্রিপুরা খদ্দরের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। তবে অধুনা কুমিল্লার সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় ত্রিপুরায় খদ্দরের অবস্থাও বিকাশমান ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর কুমিল্লার সঙ্গে স্থল ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এ বিকাশ হয়েছে দ্রুততর। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার সুবাদে কুমিল্লার সঙ্গে ত্রিপুরার ব্যবসায়-বাণিজ্য থেকে শুরু করে স্থানীয় নাগরিকদেরর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের আদান-প্রদানও। অগ্রগতির এ পথ ধরে কুমিল্লা খদ্দরের চাহিদা এখন ত্রিপুরাসহ আশপাশের অন্যান্য রাজ্যেও সম্প্রসারিত হচ্ছে- এ তথ্য জানা গেল কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খদ্দরের পুরনো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার বনেদি এলাকা হিসেবে পরিচিত রামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু বুটিক ও ফ্যশন হাউস গড়ে উঠেছে। সেখানে এখন কুমিল্লার খদ্দরের পোশাক-পরিচ্ছদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানকার একটি প্রসিদ্ধ ফ্যশন হাউসের নাম ‘ডিজাইনার বুটিক’। এর স্বত্বাধিকারী একজন সুশিক্ষিত নারী। নাম নিবেদিতা চক্রবর্তী। বিবাহিতা হলেও তিনি নিজেকে শুধু গৃহকর্মের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন আর শৈল্পিক সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন এ ফ্যাশন হাউসটি। সেখানে নিবেদিতা তার মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে চলেছেন মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ। ডিজাইনের ভিন্নতার কারণে তার ফ্যাশন হাউস অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের বেশ সমাদৃত হয়ে উঠেছে। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোর মধ্যে ‘খাদি ঘর’ অন্যতম। এর বর্তমান স্বত্বাধিকারী কান্তি বাবু একজন উচ্চশিক্ষিত কাপড় ব্যবসায়ী। বংশপরম্পরায় পারিবারিকভাবে তিনি খদ্দরকে ধরে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, গোটা দেশজুড়ে আজ খদ্দরের যে রমরমা ভাব, তার পেছনে রয়েছে তার মেধা, শৈল্পিক চেতনা ও খদ্দরের প্রতি মমত্ববোধ। এ ব্যাপারে আলাপকালে কান্তি বাবু জানান- যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় আগরতলা ও এর পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যগুলো থেকে প্রচুর লোকজন এখন কুমিল্লা বেড়াতে কিংবা অন্যান্য কাজে আসেন। তারা যাওয়ার পথে খদ্দরের তৈরি নানা সামগ্রী কিনে নিয়ে যান। কুমিল্লার অপর একটি প্রসিদ্ধ খদ্দর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘খাদি ভবন’। Related posts:আগামীকাল ২৬শে অক্টোবর শনিবার কমিউনিটি পুলিশং ডে দিবসবাবার বাড়িতেই মাদকের আসর বসাতেন সাবেক যুব মহিলা লীগ নেত্রী, চলতো বেহায়াপনাব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার Post Views: ৪৪৫ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: