রাজাকার নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়! খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের তালিকাও শূন্য

প্রকাশিত: ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার মোবারক হোসেনকে ২০১৪ সালে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর এক বছরের মাথায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নামের একটি তালিকা পাঠানো হয়। এতে রাজাকার মোবারকের নাম নেই। এমনকি ওই জেলায় কোনো রাজাকার নেই বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও কোনো রাজাকার নেই বলে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। এ দুটি জেলায় একাত্তরে বেতনভোগী ও অস্ত্রধারী কোনো রাজাকার, আলশামস বা আলবদর ছিল না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও রাঙামাটি জেলার এক হাজার ৮৯৬ রাজাকারের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৫৯৯ জন, ফেনীতে ৬৭৬, নোয়াখালীতে ৬০৯ জন এবং রাঙামাটিতে ১২ রাজাকার রয়েছে। চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুর থেকে রাজাকারের তালিকা বা প্রতিবেদন এখনও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়নি। গত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এ তালিকা পাঠাতে ১১ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। বিভাগের সমন্বয়কারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শঙ্কর রঞ্জন রায় এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়ার পর ১১ জেলা প্রশাসককে তালিকা তৈরি করে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সাতটি জেলা থেকে তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে কোনো রাজাকার নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য চারটি জেলা থেকে পৌনে দুই হাজারের মতো রাজাকারের নামের তালিকা এসেছে। চার জেলা এখনও তালিকা জমা দেয়নি।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালে বেতনভোগী ও অস্ত্রধারী রাজাকারদের তালিকা চাওয়া হলে নয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট থানা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।’ মোবাররক প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুনুর রশীদ দুলাল বলেন, মোবারক অস্ত্রধারী চিহ্নিত রাজাকার। তার নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যাসহ অসংখ্য নৃশংসতা ও অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। মুগদা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হামিদ বলেন, রাজাকার মোবারক হোসেন একাত্তর সালে সুলপুর এলাকায় রাজাকারের প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি অস্ত্রধারী ও পাকিস্তান আর্মিদের কাছ থেকে বেতনধারী রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তার নেতৃত্বে আশুরঞ্জন বোস হত্যা, কালীবাড়িতে হত্যাযজ্ঞসহ অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। সরকারি তালিকায় তার নাম না ওঠায় মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধু প্রশাসন দিয়ে নয়, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদেরও এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করলে সারাদেশ থেকে একটি নিখুঁত তালিকা পাওয়া যাবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত বাঙ্গালী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার মোবারকের ফাঁসি হওয়ায় সেখানে রাজাকারের তালিকায় তার নাম না থাকাটা যুক্তিসঙ্গত নয়। নিখুঁতভাবে এ তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য তুলে আনতে হবে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, জেলার ৭ উপজলা নির্বাহী কর্মকার্তা ও থানা থেকে তথ্য নিয়ে কোনো রাজাকারের নাম না পাওয়ায় শূন্য প্রতিবেদন দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলন হক জানান, এ বছর ৩০ জুনের মধ্যে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা ছিল। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। রাজাকার শিরোমণি আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযমের বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে। ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাজাকার মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সুএ দৈনিক সমকাল