আগরতলার সড়কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ট্যাংক-কামান

প্রকাশিত: ৮:২২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

বিজয়নগর নিউজ।। সীমান্তের ওপারে আগরতলার ব্যস্ত সড়ক পোস্ট অফিস চৌমুহনী। সেই সড়কের মাঝখানে একটি বেদিতে কামান ও ট্যাংক রণসজ্জিত করে রাখা। এই দুইটি যুদ্ধাস্ত্র বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে রণক্ষেত্রে অসংখ্য শত্রুর বিনাশ করেছে। ১৯৭২ সাল থেকে আজও এই দুই যুদ্ধাস্ত্র বন্ধু রাজ্য ত্রিপুরার মানুষ ও বিভিন্ন দেশের অসংখ্য পর্যটককে জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সম্প্রতি আগরতলা গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক কামান ও ট্যাংক যে চত্বরের বেদিতে রাখা আছে এর পূর্বদিকে হরিগঙ্গা বসাক রোড। সড়কটি শহরের প্রধান সড়ক হিসেবেও পরিচিত। পশ্চিমে মেলার মাঠ হয়ে বটতলা। উত্তর-পশ্চিম কোণে আগরতলা পশ্চিম থানা। আর উত্তর-পূর্বকোণে আগরতলা পোস্ট অফিস। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রদেশ কংগ্রেস কার্যালয়। দক্ষিণে বিগ বাজার শপিং মল। এলাকাটি জনবহুল। একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনী মিত্র বাহিনী হিসেবে অংশ নিয়ে যুদ্ধ করে। মিত্র বাহিনীর সেনারা অসংখ্য ভারী যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেন। আগরতলা শহরের পোস্ট অফিস চৌমুহনীর বেদিতে রাখা দুইটি ভারী যুদ্ধাস্ত্রও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার গুরুত্ব অনেক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার সমপরিমাণ শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল রাজ্যটি। রাজ্যের মানুষের আন্তরিকতাও স্মরণ করা মতো। পাশাপাশি খাবার, চিকিৎসা আর মুক্তি বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছের এই রাজ্য। শত্রুমুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের মিত্র বাহিনীর ব্যবহার করা অসংখ্য ট্যাংক আর কামানের মধ্যে দুইটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা শহরের কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে ১৯৭২ সালে স্মারক হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি ট্যাংক ও একটি কামান ত্রিপুরার মানুষ এবং ত্রিপুরা ভ্রমণে যাওয়া বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে প্রদর্শিত এই দুইটি ট্যাংক ও কামানের যত্ন করা হয় নিয়মিত। আগরতলা পুরপরিষদ এই কাজটি করে বলে জানা গেছে। সূত্র আরও জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ভারতের মিত্র ও মুক্তিবাহিনী অসংখ্য ট্যাংক ও কামান ব্যবহার করেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজ্য সরকার ও আর্মির (সেনাবাহিনীর) তত্ত্বাবধানে আগরতলা পোস্ট অফিস চৌহমুহনীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা একটি ট্যাংক ও একটি কামান বেদি করে রাখা হয়। এই দুইটি ভারী যুদ্ধাস্ত্র ত্রিপুরাবাসী ও ত্রিপুরায় ভ্রমণে আসা নানা দেশের মানুষকে বাংলাদেশের গৌরব উজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। আগরতলার সুনিল সাহা বলেন, আমার বাপ দাদা জন্মভূমি ছিল বাংলাদেশে। আগরতলা পোস্ট অফিস চৌমুহনীর কামান আর ট্যাংক বাংলাদেশ ও ওই দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইতিহাসের এই স্মারক তাদের সন্তানদেরও বাংলাদেশের বীর জাতিকে শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষা দিচ্ছে।সুএ দেশ রুপান্তর