হায়নাদের থেকে পরীকে বাঁচান, প্রধানমন্ত্রীকে আবদুল গাফফার চৌধুরী

প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২১

মাদক মামলায় চার দিন রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার চিত্রনায়িকা পরীমনির আরও দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালত। এদিন দুপুর ২টার দিকে আদালতে তোলা হলে এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। কিন্তু তার জামিন মেলেনি।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন আলোচিত-সমালোচিত এই নায়িকার পাশে দাঁড়ালেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পরীমনিকে বাঁচানোর আর্জি জানিয়েছেন ৮৬ বছর বয়সী এই লেখক-সাংবাদিক।

গণমাধ্যমে পাঠানো আবেদনে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই আবেদন আমার একার নয়। দেশে প্রশাসন, একটি বিত্তশালী গোষ্ঠী এবং একটি মিডিয়া গোষ্ঠী মিলে একটি ২৮ বছরের তরুণীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতন নাগরিক সমাজের আবেদন।

গাফফার চৌধুরী বলেন, পরীমনিকে গ্রেপ্তার করার জন্য দু’-চার জন র্যা ব কিংবা পুলিশের সদস্য গেলেই হত, সেখানে যে যুদ্ধযাত্রা করা হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল কোনো ভয়ংকর ডাকাতকে গ্রেপ্তারের জন্য এই যুদ্ধযাত্রা। গ্রেপ্তারের পর থেকেই পরীমনির বিরুদ্ধে একটার পর একটা স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। বোঝাই যায়, কোনো একটি মহল থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারের আগেই বিচার। চয়নিকা চৌধুরীর মতো এক জন বিখ্যাত নাট্যকারকে অহেতুক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তার চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো ক্ষমতার বাড়াবাড়ি। এগুলো চলতে দিলে দেশের নাগরিক স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।

লন্ডনপ্রবাসী এই লেখক আরও লিখেছেন, বোট ক্লাবের ঘটনার পরে আসামিরা যে সহজেই জামিন পেলেন, তার রহস্য কী? এই শক্তিশালী মহলটি প্রশাসনের একাংশকে বশ করে যে এই ঘটনাগুলো সাজিয়েছে, তা বুঝতে কি কষ্ট হওয়ার কথা? তারপর মিডিয়ার প্রচার। এই প্রচারগুলো যে সত্য নয়, তা সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনের বিবৃতিতে জানা গিয়েছে।

তিনি বলেন, সাড়ে তিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে পরীমনির বিরুদ্ধে যে প্রচার চালানো হয়েছে, আরেফিন সাহেবের বিবৃতিতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পরীমনি চলচ্চিত্রের নায়িকা। তার নানা পুরুষের সঙ্গেই নানাবিধ সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটা কি একটা অপরাধ?

গাফফার চৌধুরী বলেন, আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা, আদালতে বিচার হওয়ার আগে দেশের চলচ্চিত্র জগতের সম্ভাবনাময় এক তরুণীর জীবন যে ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হল, তার দায়িত্ব কে নেবে? আদালতের বিচারে পরীমনি যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং শাস্তি পান, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু এক জন তরুণীকে যেভাবে আটক করে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে অপ্রমাণিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুধু নারীসমাজের অপমান নয়, মানবতার অপমান। আমাদের নাগরিক স্বাধীনতার ওপর এটি একটি ভয়ংকর থাবা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলেই নারীদের ক্ষমতায়ন শুরু হয়েছে। সেই জন্যই তার কাছে আমার সবিনয় আবেদন, পরীমনির ব্যাপারে তিনি হস্তক্ষেপ করুন। তাকে বিচার থেকে রক্ষা করতে বলি না। তাকে হায়নার গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। পরীমনির সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা যে দেশের আর এক জন নাগরিকের উপর করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

গাফফার চৌধুরী বলেন, আমি দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কাছে আবেদন করি, তারা পরীমনির উপর এই হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ করুন। দয়া করে চুপ করে থাকবেন না। পরীমনির উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করুন। সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, তারা যেন অত্যাচারিতের পক্ষে দাঁড়ায়। অত্যাচারী গোষ্ঠীর পক্ষে না যায়।

গত বুধবার সন্ধ্যায় পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যা ব। এ সময় সেখান থেকে বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এরপর র্যা ব বাদী হয়ে পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা করে বনানী থানায়। সেই মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন নায়িকা। সুএ মত ও পথ