নাসির নগরে মানুষ পানিবন্দি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।

প্রকাশিত: ৮:৫৫ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২২

বিজয়নগর নিউজ।। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজানের ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে গোখাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা। তবে জেলা প্রশাসকের দাবি, তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী জানান, নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। তিতাসের বেড়িবাঁধসহ কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার পাকা-আধাপাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জনপদ। এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রায় ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

সরেজমিন উপজেলার বুড়িশ্বর, কুণ্ডা, ভলাকুট গোয়ালনগর, ধরমণ্ডল, গোকর্ণ, নাসিরনগর সদর উপজেলা ও চাপড়তলা ইউনিয়নে দেখা গেছে, ওই সব এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর এসএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের দাবি, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে তেমন কোনও সহায়তা আসেনি। উপজেলা সদরের মো. জামাল মিয়া বলেন, ‘আমার ঘরে পানি উঠেছে। আমরা ভেসে গেলেও কেউ খবর রাখে না।’
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের হালিমা আক্তার ও সুমা আক্তার বলেন, ‘তিন দিন ধরে চিড়া খেয়ে আছি। ঘরে চাল নেই, লাকড়ি নেই, কী দিয়ে রান্না করবো? এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানও খবর নেন না।’

এদিকে বন্যাকবলিত হওয়ায় ইতোমধ্যে উপজেলার ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা অফিস থেকে কোনও আদেশ না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শ্রীঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘নৌকা না থাকায় সাঁতার কেটে স্কুলে যেতে হচ্ছে।’

ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিফা আক্তার বলেন, ‘স্কুল বন্ধ দেয়নি। তাই পানির ভেতর দিয়েই স্কুলে যাচ্ছি। বইও ভিজে গেছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টির চারপাশে ও ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোনও আদেশ আসেনি। এলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নটি হাওরের মধ্যে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এলাকার সব স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাব্বর হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় যাচ্ছি। মানুষের পাশে আছি। সহযোগিতার কোনও কমতি নেই।’

এদিকে সোমবার দুপুরে নাসিরনগরের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ১২৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১টি পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়েছে।’