আজ শহীদ জননীর জন্মদিন বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৮:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২২ আজ শহীদ জননীর জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ৩রা মে ছিল শুক্রবার। আমাদের আঁধারকালের আলোকবর্তিকা ‘শহীদ জননী’ জাহানারা ইমাম জন্মেছিলেন। এ বছর তাঁর ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে নীরব ও অনাড়ম্বরে, তবে আমাদের হৃদয়ে সরবে ও তুমুলভাবে। শুভ জন্মদিন প্রিয় শ্রদ্ধেয় ‘দ্রোহী’ জননী জাহানারা ইমাম। স্বাধীনতা পূর্ব এবং উত্তর প্রজন্ম তাঁর কাছে ঋণী। তিনি বিস্মৃতি প্রিয় জাতিকে মৌলিক শেকড়ের সন্ধান দিয়েছিলেন। এই ভূখণ্ডে আজও অনেক তরুন প্রাণ জেগে আছে তাঁর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে। জীবদ্দশায় যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, তাঁরা জানেন কী অদম্য সাহসে প্রচণ্ড বিরুদ্ধ সময়ে তিনি রুখে দাঁড়াবার ডাক দিয়েছিলেন। অতীতে তিনি রাজনীতি সচেতন হলেও রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ভবিতব্যই তাঁকে রাজনীতির অঙ্গনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ ঘাতক-দালালদের পর্যায়ক্রমিক পুনর্বাসনে অপমানিত ও ক্ষুব্ধ ‘শহীদ জননী’ জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেন। আমাদের অনুপ্রেরনার উৎস তিনি, আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, আজও দাঁড়াই সকল ষড়যন্ত্র ও ইতিহাস বিকৃতির বিপরীতে। একাত্তরে তাঁর জন্মদিনের বিবরণ পাওয়া যায় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে। “৩ মে সোমবার, ১৯৭১…. আজ আমার জন্মদিন। ২৯ মার্চ রুমীর জন্মদিনে তবু ভাবতে পেরেছিলাম কিছু স্পেশাল রান্না করা দরকার। কারণ তখনো ২৫ মার্চ কালরাত্রির আকস্মিকতার আঘাত মনকে পুরোপুরি ধরাশায়ী করতে পারে নি; কারণ তখনো এই নিষ্ঠূর মারণযজ্ঞের ব্যাপকতা বুঝে উঠতে পারি নি। তাই তখনো স্বাভাবিক চিন্তাধারা, গতানুগতিক মনমানসিকতা যেন একেবারে মরে যায় নি। কিন্তু সেই ধ্বংসযজ্ঞের পাঁচ সপ্তাহ পর এখন মনমানসিকতা, চিন্তাধারা কিছুই আর চিরাচরিত, গতানুগতিক খাতে বইছে না। যে জীবন এতকাল যাপন করে এসেছি, তা বড়ই অর্থহীন মনে হচ্ছে। ভিখু, মিলি, সিদ্দিকা, নূরুর রহমানের অনর্থক হত্যা মনকে একেবারে অসাড় করে দিয়েছে। তবু প্রতিবছরের অভ্যাসমতো, রুমী-জামী যখন আজ সকালে আমাদের ঘরের দরজার ওপাশ থেকে বলল, ‘আম্মা আসি?’ তখন চোখ ভরা পানি নিয়ে বললাম, ‘এসো।’ ওরা প্রতিবছরের অভ্যাসমতই ঘরে ঢুকল, কিন্তু প্রতিবছরের মতো হাসিমুখে নয়, সুন্দর প্যাকেটে মোড়া হাতভর্তি সারপ্রাইজ প্রেজেন্ট’ নিয়েও নয়। ওদের মুখও মেঘাচ্ছন্ন, তবে তাতে পানি নেই, বজ্রের আভাস আছে— টের পেলাম । রুমীর হাতে একটা পুরনো বই, জামীর হাতে বাগান থেকে তোলা একটি আধা-ফোটা কালো গোলাপ যার নাম বনি প্রিন্স।’ রুমী বইটা আমার হাতে দিয়ে বলল, “আম্মা এই বইটা তুমি পড়লে মনে অনেক জোর পাবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরুতে জার্মানি অতর্কিত আক্রমণ করে পোলান্ড দখল করে নেবার পর সেখানে পোলিশ ইহুদীদের ওপর নাৎসী বাহিনীর অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে পোলিশরা যে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারই কাহিনী এটা। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কিভাবে তারা লড়াই করে গেছে, লড়াই করে মরেছে, তবু মাথা নোয়ায় নি, তারই কাহিনী এটা। এই বইটা পড়লে তোমার মনের সব ভয় চলে যাবে, সব দুঃখ তুচ্ছ হয়ে যাবে। জার্মানরা ইহুদীদের মানুষ বলে গণ্য করত না। পশ্চিম পাকিস্তানিরাও আমাদের মানুষ বলে গণ্য করে না, মুসলমান বলেও গণ্য করে না। অথচ ওদের চেয়ে আমরা বহুগুণে খাঁটি মুসলমান। পড়লে তুমি বুঝতে পারবে, এই বইতে যা লেখা আছে, দেশ আর জাতির নাম বদলে দিলে তা অবিকল বাংলাদেশ আর বাঙালির দুঃখের কাহিনী, প্রতিরোধের কাহিনী, বাঁচা-মরার লড়াইয়ের কাহিনী বলে মনে হবে। চেয়ে দেখলাম লিয়ন উরিস-এর লেখা ‘মাইলা-১৮’। রুমীর নিজস্ব লাইব্রেরিতে এক্সোডাস’-এর বিখ্যাত লেখক লিয়ন উরিস-এর সবগুলো বই-ই আছে। আগে দেখেছি, তবে পড়া হয়ে ওঠে নি। জামী কালো গোলাপের আধফোঁটা কলিটি আমার হাতে দিল, রুমী বলল, আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এই রকম রঙের রক্ত ঝরিয়ে তবে স্বাধীনতার রাজপুত্র আসবে।” 🔴 শহীদ জননীর স্পর্শ পাওয়া ও তাঁর স্বাক্ষর সম্বলিত দুটি গ্রন্থ আমাদের অমূল্য সম্পদ। গত ৭ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর ২০২১, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধেয় হাবিবুল আলম বীর প্রতীক, তাঁর সংগ্রহ থেকে এ দু’টি অমূল্য সম্পদ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দু’টি গ্রন্থই ১৯৯১ সালের প্রথম সংস্করণ। নিজের কান ও চোখ দুটোই অবিশ্বাস করেছিল অবলোকন আর শব্দকে। এও কি সম্ভব ! শহীদ জননীর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা বইয়ের কপি উপহার হিসেবে প্রাপ্তি, তাও দ্বিতীয়বারের মতো ! 🟢 শহীদ জননীর ছবি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধেয় সাইফ ইমাম জামী ভাই। Related posts:বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার আত্ব পক্ষ সমর্থনে বক্তব্যজিয়া ও খালেদার সংসার টিকিয়ে রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুউবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা Post Views: ১৭১ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: