রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তের গুলিতে জাহিদুল ইসলাম টিপু নিহত

প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২২

রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ও আফরিন প্রীতি (২৪)। জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশান-১ নম্বরেসপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী (৪৩) কে সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় মিলকীর ছোট ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মিলকীর বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় জাহিদুল ইসলাম টিপু আসামি ছিলেন। পরবর্তীতে সিআইডির দেওয়া চার্জশিটে টিপুর নাম বাদ দেওয়া হয়।

প্রাথমিক তথ্য মতে পুলিশ বলছে, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০ টার দিকে ঘটনার সময় টিপু তার মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছিলেন। গুলিতে মুন্না (২৬) নামে তার গাড়িচালক আহত হয়েছেন। টিপুকে বহন করা প্রাইভেট কারের পাশে একজন রিকশাযাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়। তিনিই সামিয়া আফরিন প্রীতি। সরকারী বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী তিনি। রাত সোয়া ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গাড়ি চালক মুন্না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

গুলিতে আহত গাড়ি চালক মুন্না বলেন, রাত সোয়া ১০ টার দিকে মাইক্রোবাসে করে খিলগাঁও রেলগেটের দিকে যাচ্ছিলাম। মাইক্রোবাসের সামনের বাম পাশের সিটে বসে ছিলেন টিপু। পিছনের সিটে টিপু ভাইয়ের একজন আত্মীয় বসেছিলেন। মাইক্রোবাসে আমরা শাজাহানপুর বাগিচা মসজিদের দিকে যাচ্ছিলাম। খিলগাঁও রেলগেটের কাছে আসলে ট্রেন ক্রসিংয়ের সিগন্যালে রেলগেটে অপেক্ষা করতে থাকি। এসময় দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাসের বাম পাশে একটি মোটরসাইকেল থামে। মোটরসাইকেলের চালকের মাথায় কালো রঙের হেলমেট ও মুখে মাস্ক। ওই মোটরসাইকেল চালক আগ্নেয়াস্ত্র বের করে মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি করে। ৫/৬ বার গুলির শব্দ আসে। এরপর গাড়ির সীটেই টিপু ভাই লুটিয়ে পড়েন। আমার শরীরেও গুলিবিদ্ধ হয়।

নিহত জাহিদুল শাহজাহানপুর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে একটি বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন। আর প্রথম স্ত্রী দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন অন্য বাসায়। নিহতের খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান টিপুর পরিবারের সদস্যরা। টিপুর স্ত্রী ফারহানা ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শাজাহানপুর এলাকার সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার এম এ আহাদ বলেন, সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি রেলগেট ট্রেনের সিগন্যালে থেমে যায়। এসময় একজন মোটরসাইকেল আরোহী মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাযাত্রী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকে গুলির আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত প্রীতি সরকারী বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইমসিন আলামত সংগ্রহ করেছে।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণী বিতানের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটির প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল ১১ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন মামলার বাদী। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিআইডিকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডি আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এ সময় নয়জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ওরফে কিলার তারেক, মো. মাহবুবুল হক হিরক, জাহিদুল ইসলাম টিপু, আবুল মোনায়েম মোহাম্মদ আমিনুল এহসান বাবু ওরফে টমেটো বাবু ওরফে ডিস বাবু, এনামুল হক, মাসুম উদ্দিন, আহকাম উল্লাহ, ওয়াহিদুল আলম প্রকাশ আরিফ ভূঁইয়া ও তানজিম মাহমুদ তানিম