মুকুন্দপুরের যুদ্ধ বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২১ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত মুকুন্দপুর এলাকায় আখাউড়া-সিলেট রেলপথে আজমপুর রেলস্টেশন পেরিয়ে সিংগারবিল। এরপর মুকুন্দপুর রেলস্টেশন। কয়েক শ গজ দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। স্টেশনের চারদিকে ছোট ছোট টিলা, চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে ছড়ানো ঝোপঝাড় আর নিচু জলাভূমি। ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে ছিল তাদের প্রতিরক্ষা। সামনে মাটিতে গাড়া চোখা বাঁশের কঞ্চি ও মাইন। এরপর কাঁটাতারের বেড়া। পূর্ব ও দক্ষিণ দিক ছিল বেশ সুরক্ষিত, পশ্চিম ও উত্তর দিক কিছুটা অরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী মুকুন্দপুরে আক্রমণের পরিকল্পনা করে। আক্রমণের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর। এর আগে সেখানে কয়েকবার রেকি করা হয়। কিন্তু বারবার রেকি করেও পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষে একজন নারীর সহায়তায় সেই তথ্য পাওয়া যায়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন সায়ীদ আহমেদ। তার দলের বেশির ভাগই ছিলেন গণবাহিনীর। নির্ধারিত দিন সূর্যোদয়ের আগে মুক্তিযোদ্ধারা তার নেতৃত্বে সীমান্ত অতিক্রম করে নিজ নিজ স্থানে অবস্থান নেন। তারা ছিলেন কয়েকটি উপদলে (প্লাটুন) বিভক্ত। দক্ষিণ দিকে একটি, উত্তর দিকে একটি ও মাঝে একটি দল। দুপুরের পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সায়ীদ আহমেদকে জানানো হয় এই আক্রমণে তারাও অংশ নেবে। এই খবরে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর প্রতিশোধ স্পৃহা তাদের আবেগকে শক্তিতে পরিণত করেছিল। তারা চেয়েছিলেন নিজেদের যা শক্তি আছে তাই নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে। নির্ধারিত সময় আক্রমণ শুরু হয়; কিন্তু শুরুতেই মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী (১৮ রাজপুত রেজিমেন্ট) বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক গুলিবৃষ্টির মধ্যে ভারতীয় সেনারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনঃঅবস্থান নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে খাকি পোশাক পরিহিত মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি সেনা মনে করে ভারতীয় সেনারা তাদের ওপর গুলি ছোড়া শুরু করে। ফলে আক্রমণ থমকে যায় এবং সাফল্যের আশা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। কিন্তু এতে হতোদ্যম বা মনোবল হারাননি অকুতোভয় সায়ীদ আহমেদ। কালক্ষেপণ না করে নিজেদের শক্তিতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর। তার প্রত্যয়ী মনোভাবে উজ্জীবিত হন সহযোদ্ধারা। পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় সেনাদের একাংশকে প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এতে ভারতীয় সেনারা প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। সেদিন যুদ্ধে ২৯ জন পাকিস্তানি সেনা, কয়েকজন ইপিসিএএফ বন্দী এবং কয়েকজন হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। Related posts:১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ : পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ শুরুব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন কায়দায় দুই সদস্যকে আটকব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও বাড়ছে সংক্রমণ, একদিনে ৪০জনের করোনা শনাক্ত Post Views: ১০০ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: