বিজয়নগরে হরষপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাহিদ খান এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাহিদ খান এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে উদ্যোক্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের এক সভায় রেজ্যুলেশন করে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে ভোক্তা নিয়োগের অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে ।

স্থানীয় তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫নং হরষপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাহিদ খান দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানে জালিয়াতি ও সরকার নির্ধারিত ফি থেকে তিনগুণ বেশি টাকা নেন, উদ্যোক্তার কাছে হয়রানির শিকার হতে হয় যা আমরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মৌখিকভাবে একাধিকবার অবহিত করে আসছেন বলে জানান ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা।

ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন সূত্রে জানা যায়, ২৭ জুন ২০২১ ইং তারিখে ৫নং হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদে এক জরুরী সভার আহবান করাহয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সারোয়ার রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২ নং আলোচ্য বিষয় উল্লেখ করে সভাপতি বলেন আমাদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাহিদ খান আজ প্রায় ২ বছর যাবত অফিসে আসেনা, তিনি স্থানীয় নিদারাবাদ দেওয়ান বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকেন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সকল ব্যয়স্ক, বিধবা,অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ও মাতৃকালীন ভাতা ভোগীদের কে যথাসময়ে ভাতা প্রদান না করে কালক্ষেপণ ও নানান হয়রানি করেন। তিনি ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট শাখায় শুধু বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা হয়ে জনগণ তার কাছে গেলে সে মানুষকে তাহাদের চাহিত সেবা না দিয়ে হয়রানি করেন যাহার অসংখ্য অভিযোগ ও প্রমান রয়েছে। সরকার কর্তৃক ঘোষিত সময়সূচির মধ্যে কোনো ভাতা সে প্রদান করেন নাই এমন কি কোনো ভাতাভোগী তার কাছে স্বশরীরে মোবাইল ফোনে ভাতা বিতরনের জন্য জানতে চাইলে তিনি মারাত্বক ক্ষীপ্ত হন এবং মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করেন।

৪ নং ওয়াডের সদস্য মো. আবুল কাশেম সভা কে জানান উদ্যোক্তা নাহিদের কাছে মানুষ নানান ভাবে হয়রানির শিকার হয় নিয়মিত ভাতা বিতরণ না করে নানান মুখী ভোগান্তিতে ফেলে এছাড়া সরকার নির্ধারিত ফি এর তিনগুণ বেশি ফি নিয়েও জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা উদ্যোক্তা তার এজেন্ট ব্যাংকে বসিয়ে রাখে তার ব্যাংকে বসিয়ে রাখে তার ব্যাংকে বসিয়ে রাখেন। তাছাড়া এই উদ্যোক্তা একাধারে দুইটি এজেন্ট ব্যাংকসহ হরষপুর ইউনিয়নে ডিস ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি আরো বলেন এতসব ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যআ স্ত থাকলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন কিভাবে তাই জনগনের দিকটি বিবেচনা করে তাকে উদ্যোক্তার পথ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগ দেয়া জরুরী।

এসময় সভায় উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: মাহফুজ মিয়া,মো: নাছির উদ্দিন,মধু মিয়া,আবু হানিফ,অলি উল্লাহ,মো: সিরাজুল ইসলাম,মো: কাউছার মিয়া, আশরাফ আলী,সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নাসিমা বেগম, রাহেলা বেগম, ফরিদা বেগমসহ সভায় উপস্থিত সকলেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা নাহিদ খানের বিরুদ্ধে সভাপতি ও চেয়ারম্যান সারোয়ার রহমান ভূঁইয়া ও ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের কর্তিক আনীত অভিযোগগুলোর সাথে একমত পোষণ করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের বর্তমান উদ্যোক্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে উদ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সর্বসম্মতিক্রমে সকল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রেজুলেশন বহিতে স্বাক্ষর করে নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগের অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর রেজুলেশনের কপিসহ আবেদন করেন।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব খোরশেদ আলম সততা নিশ্চিত করে বলেন হরষপুর একটি বিশাল আয়তনের ইউনিয়ন যে কারণে জনসংখ্যা ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে আশা কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি উদ্যোক্তা ছাড়া ডিজিটাল সেন্টার চলতে পারে না সবদিক বিবেচনা করে জরুরী ভিত্তিতে ডিজিটাল সেন্টারের একজন নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন বর্তমান উদ্যোক্তার কর্মকাণ্ডে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছিল। পরিষদে ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সারোয়ার রহমান ভূঁইয়া জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা নাহিদ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মৌখিকভাবে তাকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও সে স্থানীয়দের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে এবং সে কোন কিছু তোয়াক্কা না করে সে তার মত করে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল জনগণও ইউনিয়নের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে পরিষদের সর্ব সম্মতিক্রমে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করার বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেশ কয়েক মাস হল উক্ত বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছি পরবর্তীতে তিনি উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাসেল সাহেব কে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার দায়িত্ব দেন। এই তদন্ত কর্মকর্তা মাসের পর মাস কেটে কোন জানিনা কোন অদৃশ্য কারণে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করছেন না,এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বদলি হয়ে আবার নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। এরইমধ্যে আমি সহ পরিষদের সচীব এবং একাধিক সদস্য উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাসেল সাহেবের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করে ইউনিয়ন বাসীর ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোন প্রতিকার হয়নি বলে খুব প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, হরষপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও পরিষদের রেজুলেশনের বিষয়টি আমি শুনেছি প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।