হেফাজতিদের মাদ্রাসায় কোরবানির পশুর চামড়া দান করা জায়েজ হবে না

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২১

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

আর মাত্র কয়েকদির পরই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে সামর্থ্যবান মুসলিমগণ মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে থাকেন। আর সেই কোরবানির পশুর চামড়া আমরা কোনো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা বা তাদের এতিমখানায় দান করে থাকি। আর এসব মাদ্রাসার প্রায় সবগুলোই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকেন হেফাজতি নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড প্রমাণ করেছে যে তারা ইসলামের লেবাসে বা ইসলামকে পুঁজি করে আসলে দিনের পর দিন ইসলামবিরুদ্ধ কাজ করে যাচ্ছেন। আর এমন বাস্তবতায় তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানে কোরবানির পশুর চামড়া, যাকাত এবং দান-খয়রাত করা কোনো যুক্তিতেই জায়েজ হবে না।

হেফাজতিদের প্রকৃত রূপ চেনার পরও তাদেরকে কোনোপ্রকার সহযোগিতা করা মানে অন্যায়কে সমর্থন করা এবং অন্যায়কারীদের সহযোগিতা করা। যা ইসলাম সমর্থিত নয়। বরং তাদেরকে সহযোগিতা করে পাপের ভাগী হতে হবে। মনে রাখা চাই, যেখানে দুষ্কর্ম ও অপরাধমূলক কাজের প্রশ্রয় দেয়া হয় না, হারমাদি শিক্ষা দেয়া হয় না, লাঠিসোটা নিয়ে বের হওয়া বা রেলস্টেশন, ভূমি অফিস পোড়ানোর শিক্ষা দেয়া হয় না, আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের ইমরুল কায়েসদের রচনা পড়ানো হয় না- সেসব প্রতিষ্ঠানে শর্তসাপেক্ষে টাকা দেওয়া যেতে পারে; তবে আত্মীয়-স্বজন, পড়শী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী ধার্মিক দরিদ্রের হক আদায় করার পর

কুরআন-হাদিস অনুসারীগণও অবশ্যই বলবেন যে কোরবানির পশুর চামড়া, যাকাত এবং অন্যান্য দানের প্রকৃত হকদার হচ্ছেন দরিদ্র, স্বজন (এমনকি পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য); ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাভিত্তিক এতিমখানা, ভ্রমণপিয়াসী নেতা বা লাঠিসোটা নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এমন শিক্ষার্থীরা নয়। কেননা আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী আর সন্ত্রাসীদের পছন্দ করেন না। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিগণও কোরবানির পশুর চামড়া,  যাকাত, সাদকা ও দান-খয়রাতের উপযুক্ত ব্যক্তি। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এসবের কোনোই লক্ষণ নেই কওমি মাদরাসাগুলিতে (বিশেষতঃ হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোতে)। আর একসময় সৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (যেমন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা। কতিপয় সন্ত্রাসী ও মিথ্যাচারী ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত) মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

তাই আসুন, আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনানুসারে প্রথমে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কোরবানির পশুর চামড়া, যাকাত, সাদকা আর দান-খয়রাত প্রদান করি। যদি এরপরও সামর্থ্য থাকে, তাহলে হেফাজত ও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা-এতিমখানা ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দান-খয়রাত করি।

লেখক : সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা,
পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।